চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

নির্বাচন কমিশন কেন অনড় নির্বাচন অনুষ্ঠানে?

করোনা আতঙ্কে সারাবিশ্ব উদ্বিগ্ন৷ কারফিউ, নির্বাচন পেছানো, লকডাউন ও হোম কোয়ারেন্টাইন আজ পৃথিবীর আলোচ্য বিষয়৷

করোনা পরিস্থিতিতে শ্রীলঙ্কায় কারফিউ জারি করা হয়েছে। পিছিয়ে গেছে নির্বাচন৷ কিন্তু বাংলাদেশে অনড় নির্বাচন কমিশন৷ ২১ মার্চ তিনটি সংসদীয় আসনে উপনির্বাচন ও ২৯ মার্চ অনুষ্ঠিত হতে চলছে চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচন৷ শ্রীলঙ্কায় কিছুদিন আগে প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসে এক ঘোষণায় বলেছিলেন যে, নির্বাচন পেছানোর কোনো কারণ নেই। কিন্তু পরিস্থিতির ভয়াবহতায় প্রেসিডেন্ট এ ঘোষণা হতে পিছু হটতে বাধ্য হয়েছেন৷

পরিস্থিতির বাস্তবতায় এমনটিই হওয়া উচিত নয় কি? কিন্তু বাংলাদেশে এসবের   কোন বালাই নেই৷ শত সমালোচনা ও জননিরাপত্তার হুমকিতেও আজ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে৷

করোনা আতঙ্কে জনতার কারফিউ জারি করেছে ভারত। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে কারফিউ জারির ঘোষণা দেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত দেশের প্রত্যেক নাগরিককে এই কারফিউ বাধ্যতামূলকভাবে মেনে চলতে বলা হয়।

বিশ্বজুড়ে ভয়াবহভাবে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে। এখন পর্যন্ত ১৭৯টি দেশে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। সারাবিশ্বে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬১৩ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। মারা গেছে ১০ হাজার ৪৮ জন। এছাড়া চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে ৮৮ হাজার ৪৩৭ জন।

করোনা ভীতিতে অনেক দেশই অবরুদ্ধ (লকডাউন) হয়ে পড়েছে। দোকান-পাট, ব্যবসা বাণিজ্য, স্কুল, কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত চীনে ৮০ হাজার ৯৬৭ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। অপরদিকে মারা গেছে ৩ হাজার ২৪৮ জন।

করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঘটনায় এখন সবার ওপরে আছে ইতালি। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে আরও ৪২৭ জনের প্রাণহানির সঙ্গে সঙ্গে তারা ছাড়িয়ে গেছে করোনার উৎস চীনকেও। এ নিয়ে ইউরোপের দেশটিতে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৪০৫ জনে।

ইতিমধ্যে করোনার থাবায় নিউইয়র্ক, নিউজার্সিসহ বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। বন্ধ ঘোষিত হয়েছে স্কুল, কলেজ, গির্জা, মসজিদ, রেস্তোরাঁ, বার।করোনা আক্রান্ত শহরগুলোতে স্বেচ্ছায় গৃহবন্দী লাখ লাখ কর্মজীবী মানুষ। কাজ হারানোর ভয়ে বিপর্যস্ত জনজীবন। নিউইয়র্কের জনবহুল এলাকাগুলো এমনিতেই বন্ধ হয়ে পড়েছে। জ্যাকসন হাইটসে সব দোকানপাট সপ্তাহে তিন দিন খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা। ১০ জনের বেশি মানুষের সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। জ্যামাইকা মুসলিম সোসাইটিসহ মসজিদ, মন্দিরের উপাসনা কার্যক্রম বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। নিউইয়র্কে নাগরিকদের যেকোনো মুহূর্তে ‘শেল্টার ইন প্লেস’ নির্দেশনার জন্য প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। নিউইয়র্কের নাইটক্লাব, মুভি থিয়েটার ও কনসার্ট ভেন্যু বন্ধ করে দিয়েছে শহর কর্তৃপক্ষ। বলা হয়েছে, সেখানকার রেস্তোরাঁ, বার ও ক্যাফেগুলো থেকে খাবার শুধু ডেলিভারি নেওয়া যাবে, কেউ সেখানে বসে খেতে পারবেন না।

করোনা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে বাংলাদেশেও৷ মসজিদে নামাজের জামাত, পর্যটন কেন্দ্র, স্কুল কলেজ, প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের আড্ডা তথা সকল ধরনের জনসমাগম নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷ হোম কোয়ারেন্টাইনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে৷ ভয়ার্ত মানুষ শহর ছেড়ে বাসে লঞ্চে করে শহর ছেড়ে গ্রামে চলে যাচ্ছে৷

এমনই আতঙ্কজনক পরিস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে নির্বাচন৷ অথচ নির্বাচনের পূর্বশর্তই হল জনসমাগম৷ সবাই দল বেঁধে ভোট কেন্দ্রে যাবে৷ লাইন বেঁধে দাঁড়িয়ে তারা ভোট দেবে৷ এমনটিই নির্বাচনী চিত্র৷ তারা এবার ভোট দেবে ইভিএম পদ্ধতিতে৷ অথচ স্বাস্্থ্য ধিদপ্তর বলছে, ইভিএমের আঙুলের ছাপেও করোনা ভাইরাস ছড়াতে পারে৷ কোন করোনা রোগী যে ভোট দিতে যাবেনা তার কি কোন গ্যারান্টি আছে নির্বাচন কমিশনের কাছে? নির্বাচন কমিশন কিসের ভিত্তিতে অনড় থাকছে নির্বাচন অনুষ্ঠানে? তারিখটা পিছিয়ে দিলে এমন কি ক্ষতি হতো?বারবার এমন কেন গোঁয়ার্তুমি করছে তারা? পূজার দিনে ভোট নিয়ে আন্দোলন বিক্ষোভ হল৷ পরে তারিখ বদলানো হল৷

তবে করোনা নিয়েতো আন্দোলন বিক্ষোভ করার সুযোগ নেই৷ এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন তাদের সিদ্ধান্তে তাই অনড়ই থেকে গেল৷ করোনা আতঙ্ক শহর ছেড়ে গ্রামেও ছড়িয়ে পড়ছে৷ নিরাপত্তার প্রশ্ন উঠছে করোনার সংবাদ সংগ্রহকারী গণমাধ্যম কর্মীদের৷

করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে গণমাধ্যমকর্মীদের নিরাপত্তা দিতে ঢাবি সাংবাদিকতা অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন (ডিইউএমসিজেএএ) এর পক্ষ থেকে দাবি জানানো হয়েছে৷ বড় ধরনের গণজমায়েত বা যে প্রেস ব্রিফিংগুলো ফেসবুক বা অন্য অনলাইনের মাধ্যমে করা যায় সেগুলো কাভার করতে সাংবাদিকদের না পাঠাতে বলা হচ্ছে৷

আরও বলা হচ্ছে গণমাধ্যম কর্মীদের অ্যাসাইনমেন্ট কমিয়ে দিতে হবে; বাসায় অবস্থান করে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে; মিডিয়া হাউজগুলো নিজেদের মধ্যে সংবাদ আদান-প্রদান করবে/সমন্বয় করে কাজ করবে প্রভৃতি৷ এমনই একটা ভীতিকর ও সাবধানতা অবলম্বনকারী সময়েও নির্বাচন কমিশন অনড় নির্বাচন অনুষ্ঠানে৷ জানি না ২১ মার্চ ও ২৯ মার্চ কি ফল দেয় দেশকে৷ তাদের গোয়ার্তুমির জন্য খারাপ কিছু হলে এর দায়ভারও তাদেরকেই নিতে হবে৷ আজ ভোটের দিন৷ করোনা ভীতিতে শতকরা কতভাগ মানুষ ভোট দিতে যাবে সেটাই দেখার বিষয়৷ তবে আমাদের প্রত্যাশা মানুষের কোন বিপদ না হোক৷

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)