ভারত শাসিত কাশ্মীর অঞ্চলের নির্বাচনী সীমানা নির্ধারণ নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। ডিলিমিটেশন কমিশনের নতুন খসড়ায় এই অঞ্চলে বিধানসভায় আসন বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে, যা এই বিতর্কিত অঞ্চলের নির্বাচনী রাজনীতিতে হিন্দু অধ্যুষিত জম্মু অঞ্চলের প্রভাব বাড়াতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতির নেতৃত্বে, জম্মু-কাশ্মীর ডিলিমিটেশন কমিশন জম্মুর জন্য ৬টি এবং কাশ্মীর উপত্যকার জন্য মাত্র ১টি বিধানসভা আসন বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে। কমিশনের প্রস্তাব গৃহীত হলে জম্মুতে ৪৩টি বিধানসভা আসন থাকবে এবং কাশ্মীরে থাকবে ৪৭টি।
মুসলিম অধ্যুষিত কাশ্মীর উপত্যকার বাসিন্দাদের আশঙ্কা এই প্রস্তাব নেতা নির্বাচনে তাদের বক্তব্যকে ম্লান করে দেবে। মূলধারার রাজনৈতিক নেতারাও একই সুরে একে ভারতের জন্য মৃত্যুর মতো সিদ্ধান্ত বলে আখ্যায়িত করেছেন।
কয়েক দশক ধরে কাশ্মীর এবং দিল্লীর সম্পর্ক উত্তেজনাপুর্ণ ছিলো, এই সম্পর্কের আরও অবনতি ঘটে ২০১৯ সালে যখন নরেন্দ্র মোদির হিন্দু জাতীয়তাবাদী সরকার জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ অধিকার কেড়ে নেয় এবং একে দুটি আলাদা ফেডারেল শাসিত অঞ্চলে ভাগ করে।
এছাড়া এই অঞ্চলে নানান কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়, নিরাপত্তা বিঘ্ন এবং যোগাযোগ অবরোধ করে সারাবিশ্ব থেকে একে বিচ্ছিন্ন করে দেয়।
ভারতের এই শাসনের বিরুদ্ধে গত তিন দশকে কাশ্মীরের হাজার হাজার বাসিন্দা প্রাণ দিয়েছে। কাশ্মীর হলো বিশ্বের অন্যতম সামরিক অঞ্চল, যেখানে বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক সংঘটিত বাড়াবাড়ি ব্যাপক ক্ষোভ, অসন্তোষের জন্ম দিয়েছে। যা নিয়মিত বিশাল ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।
এই প্রস্তাবটি করা হয় নরেন্দ্র মোদির জম্মু কাশ্মীরে নির্বাচনি প্রতিশ্রুতির কারণে।
কমিশনটি ২০২০ সালের মার্চে প্রতিষ্ঠিত হয় কিন্তু কোভিড লকডাউনের কারণে এর কাজ স্থগিত থাকে। এই প্রস্তাবের প্রক্রিয়া নিয়ে জম্মু কাশ্মীরের রাজনীতিবিদিদের সাথেও আলোচনা করা হয়।
বর্তমানে অঞ্চলটি একজন ল্যাফটেনেন্ট গভর্নর দ্বারা পরিচালিত। কিন্তু কাশ্মীরের রাজনীতিবিদরা প্রশ্ন তুলেছেন ২০২৬ সালের পর তারা যদি ভারতের অংশই না থাকে, তবে এখন কেন আলাদা করা হয়েছে তাদের অঞ্চলকে।
১৯৯৫ সালে করা ডিলিমিটেশনে দেখা যায়, কাশ্মীর উপত্যকা যা জম্মুর কাশ্মীরের ৫৬ শতাংশ জনগণ এবং আইনসভায় ৫৫.৪ শতাংশ প্রতিনিধিত্ব করে। অন্যদিকে জম্মুর ৪৩.৮ শতাংশ জনগণ এবং ৪৪.৬ শতাংশ প্রতিনিধিত্ব করে। যার কারণে কাশ্মীরকে ৪৬টি এবং জম্মুকে ৩৭টি আসন বরাদ্দ দেয়া হয়েছিলো।
২০১১ সালের সবর্শেষ শুমারি অনুসারে, কাশ্মীরের জনসংখ্যা জম্মুর চাইতে ১৫ লাখ বেশি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কাশ্মীরের আসন ৫১ তে বর্ধিত করে, জম্মুর আসন ৩৯টি করা উচিত।
বর্তমান কমিশন এই নতুন নির্বাচনী মানচিত্র তৈরির পদ্ধতি উন্মোচন করেনি। এছাড়াও এ কমিশন অবহেলিত গোষ্ঠীর জন্য ১৬টি সংরক্ষিত আসনেরও প্রস্তাব করেছে। এ প্রস্তাবের বিরুদ্ধে অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করলেও স্থানীয় বিজেপি সদস্যরা কমিশনের এই প্রস্তাবকে সাধুবাদ জানিয়েছে।