একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথে আরো একধাপ এগিয়ে গেল নির্বাচন কমিশন। রোববার ছিল প্রার্থীদের দাখিল করা মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের জন্য নির্ধারিত দিন। এদিন ঋণখেলাপি, কারাদণ্ডাদেশ ইত্যাদি কারণে বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার তিনটিসহ বেশ কয়েকজন হেভিওয়েট প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে গেছে। সব মিলিয়ে ৭৮৬টি মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশন বলছে, কারো বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা, কারো বিরুদ্ধে অসত্য তথ্য দেয়া, কারো বিরুদ্ধে ঋণখেলাপির অভিযোগে মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। ভুল তথ্য কিংবা ফৌজদারি ও দুর্নীতির মামলার কারণে এ পর্যন্ত অনেক আলোচিত প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।
তবে কয়েকটি জায়গায় মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়া প্রার্থীরা সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ তুলেছেন। যেমন; কুমিল্লায় বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী কেএম মুজিবুল হক অভিযোগ করে বলেছেন, তার দেয়া আয়কর রিটার্নের কাগজ সরিয়ে ফেলে তার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।
প্রমাণ হিসেবে তিনি রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে দেয়া মনোনয়নপত্রে যে সকল কাগজপত্র সংযুক্ত করেছেন, তার অনুলিপি দেখিয়েছেন। এমনকি তার প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পিতার নামে গরমিল থাকার পরও সেটাকে বৈধতা দেয়া হয়েছে বলেও তার অভিযোগ।
কুমিল্লা-৩ আসনে প্রার্থীতা বাতিল হওয়া স্বতন্ত্র প্রার্থী কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম সরকারের ছেলে আহসানুল আলম কিশোর অভিযোগ করেন, শুধুমাত্র একজন প্রার্থীর প্রার্থীতা টিকিয়ে রাখার জন্য হেভিওয়েট প্রার্থীদের মাঠ থেকে সরিয়ে দেয়া হচ্ছে। তিনি গোপন মিটিংয়ের অভিযোগ করেন রিটার্নিং কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
অবশ্য এর বিপরীত চিত্রও রয়েছে।ঢাকা-৬ আসনে বিএনপির প্রার্থী ইশরাক হোসেনের প্রার্থিতা বাতিলের পর উপযুক্ত কাগজপত্র জমা দিলে তার প্রার্থিতা বৈধ ঘোষণা করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। এছাড়া ঢাকা-১৮ আসন থেকে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী ১৩৮টি মামলার আসামি হলেও তার মনোনয়নপত্র বৈধ হিসেবে গণ্য হয়েছে।
অবশ্য প্রার্থীদের সব ধরনের অভিযোগ আগামী তিন দিনের মধ্যে নির্বাচন কমিশনকে জানাতে পারবেন। সেখানে আপিল করে তারা যদি কোনো অন্যায়ের শিকার হন, তার প্রতিকার পাওয়ার সুযোগ আছে। এমন কি নির্বাচন কমিশনেও তারা যদি তাদের প্রত্যাশিত ফল না পান, তার বিরুদ্ধে আদালতে যাওয়ারও সুযোগ পাবেন।
আমরা শুরু থেকেই বলে আসছি, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা হতে হবে স্বচ্ছ। আমরা মনে করি, নির্বাচন কমিশনের চাওয়াও তাই। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ে যদি কোনো ভুল হয়ে থাকে, তা শুধরে নেওয়ার সুযোগ আছে। গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্যই তা করতেই হবে।
আমরা মনে করি, কোনো নেতিবাচক সিদ্ধান্তের কারণে নির্বাচনী প্রক্রিয়া যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। কেননা এই নির্বাচনের সঙ্গে নানাভাবে জাতির ভাগ্য জড়িত।