দশ মিনিটের জনসভায় নিজে কাঁদলেন এবং অন্যদেরও কাঁদালেন সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী। শুক্রবার বিকেলে তাঁর নির্বাচনী এলাকা টাঙ্গাইলের কালিহাতী রামগতী শ্রী গোবিন্দ পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এক বছর পর জনসভা করেন তিনি। সেই জনসভায় এমন আবেগ আপ্লুত ঘটনার সৃষ্টি হয়।
জনসভায় আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী বলেন, আমার জীবনে এখন দু’টি বড় সংকটে। এক আওয়ামী লীগ দুই কালিহাতীর জনগণ। আমি একটি বোঝা। তাই আমাকে দল থেকে বহিস্কার করা হয়েছে। আমি অবনত মস্তকে তা মেনে নিয়েছি। আমার কেউ নাই। আমি চিকিৎসার জন্য সোমবার দিল্লি যাবো। সেই জন্য আমার অন্তর আত্না বললো আমি তো নাও ফিরতে পারি। এ যাওয়াই যদি শেষ যাওয়া হয়! তাই আমি আমার কালিহাতীর মানুষের দোয়া ও ভালবাসা চেয়ে নিচ্ছি।
তিনি আরো বলেন, আমি আপনাদের ডাকি নাই। আপনারা আমাকে ভালবেসে এসেছেন। এজন্য আমি আপনাদেরকে কৃজ্ঞতা ও ভালবাসা জানাতে চাই। আপনারা জানেন আমি একথার মানুষ। আমি স্বর্থের জন্য কাজ করিনা। আমার এ অর্জন পুত্র-কন্যার নয়। আমি আওয়ামী লীগ করেছি আমার চেতনা থেকে, আমার বিশ্বাস থেকে। আওয়ামী লীগ আমাকে বঞ্চিত করলেও কালিহাতীর জনগণ আমাকে বঞ্চিত করেনি। কালিহাতীর জনগন আমার সম্পদ। আমি কি আমার আসল সম্পদ ভুলে যেতে পারি ? আমার সম্পদ এখনো আমার কাছেই আছে। তাই তোমাদের কাছে বলি, আমার নেতা শেখ হাসিনা শূন্য আসনে যাকে মনোনয়ন দিবেন আমাকে যদি তোমরা ভালবাস তাহলে তাকেই তোমরা নি:স্বার্থ ভাবে মেনে নিয়ে তার পক্ষে কাজ করবে।
লতিফ সিদ্দিকী বলেন, আমি যদি বেঁচে থাকি আবার তোমাদের কাছে আসবো। কিন্ত এই ভাঙা আসনে নয়। তাই দুঃখ নিও না, অভিমান করো না। আমি কারো বিরুদ্ধে বিচার দিতে চাই না। বঙ্গবন্ধু’র নেতৃত্বে কাজ শুরু করেছিলাম। তিনি বাংলার দুঃখি মানুষের মুখে হাসি ফুটানোর চেষ্টা করেছেন। শেখ হাসিনা বাংলার দুঃখি মানুষের মুখে হাসি ফুটানোর জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। বাংলা থেকে হানাহানি, লুন্ঠন, হিংসা দূর হয়ে সুখী সমৃদ্ধশালী দেশ হউক এটাই আমার চাওয়া। জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু। শেখ হাসিনা চিরজীবি হউক।
বক্তৃতা শেষ হওয়ার সাথে সাথে তিনি আবেগ-আপ্লুত হয়ে পড়লে, উপস্থিত জনতা তাকে ঘিরে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়ে।
জনসভায় কালিহাতী উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মোল্লা, উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক নুরন্নবী সরকার, এলেঙ্গা পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি গোলাম মোহাম্মদ খান, সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান, উজেলা আওয়ামীলীগের প্রচার সম্পাদক আব্দুস সালাম, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে লতিফ সিদ্দিকী টাঙ্গাইলের আটিয়া হযরত শাহানশাহ আদম কাস্মিরীর মাজার জিয়ারত, আটিয়া জামে মসজিদে জুমআ’র নামাজ আদায় ও মাওলানা ভাসানীর মাজার জিয়ারত করেন। সেখানে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, দল আমাকে বহিস্কার করেছে। আমি আর রাজনৈতিক ব্যক্তি নই। টাঙ্গাইল- ৪ কালিহাতির শূণ্য আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামীলীগ ও শেখ হাসিনা যাকে মনোনয়ন দেবে আমি এবং আমার অনুসারিরা তার পক্ষেই কাজ করবো।
তার ছোট ভাই বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর উপনির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে তিনি জানান, আমার ভাই নেই, বাবা নেই, মা নেই, বোন নেই, জনগনই আমার সব। ব্যক্তি লতিফ সিদ্দিকীর অনেক কিছু আছে। কিন্তু রাজনৈতিক লতিফ সিদ্দিকীর জনগন ছাড়া কিছু নেই। আমি এখন ব্যক্তি লতিফ সিদ্দিকী হয়ে গেছি। কারণ দল আমাকে বহিস্কার করেছে। সুতরাং আমি আর রাজনৈতিক কোনো ব্যক্তি নই, রাজনৈতিক কোনো কথা বলবো না।
গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে টাঙ্গাইল সমিতি আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে পবিত্র হজ ও তাবলিগ জামায়াত নিয়ে কটূক্তি করেন তখনকার ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী। পরে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন আদালতে মোট ২৭টি মামলা দায়ের করা হয়। এর মধ্যে ১৭ মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। পরে সরকার মন্ত্রিসভা থেকে তাকে অপসারণ করে। আওয়ামী লীগও তাকে সভাপতিমন্ডলীয় সদস্য ও প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে বহিষ্কার করে।
গত বছরের ২৩ নভেম্বর রাতে ভারত হয়ে দেশে ফেরেন লতিফ সিদ্দিকী। ২৫ নভেম্বর ধানমন্ডি থানায় আত্মসমর্পণ করেন তিনি। পরে তাকে আদালতে হাজির করা হলে বিচারক কারাগারে পাঠিয়ে দেন। কারাগার থেকে বেড়িয়ে বেশ কিছু দিন আত্মগোপনে থাকার পর সম্প্রতি সাংসদ থেকে পদত্যাগ করেন।