চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

নিজের বাল্যবিবাহ বন্ধ করে দৃষ্টান্ত গড়লেন অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী লাভলী

টাঙ্গাইল সদরের কালেক্টরেট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী লাভলী আকতার (১৪) অদম্য সাহসীকতার পরিচয় দিয়ে প্রশাসনের সহায়তায় নিজের  বাল্যবিবাহ বন্ধ করেছেন।

নানা প্রতিকূলতার মধ্যে নিজের বাল্যবিবাহ বন্ধ করায় সহপাঠীসহ সমাজের কাছে সাহসের রোল মডেল হয়ে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন দরিদ্র রিক্সা চালক লাভলু মিয়ার তিন সন্তানের মধ্যে বড় লাভলী আকতার।

লাভলীর একমাত্র ভাই জম্ম থেকেই প্রতিবন্ধী। নুন আনতে পানতা ফুরায় এমন অভাবের সংসারে জম্ম নিয়েও স্বপ্ন দেখেন বড় হয়ে ডাক্তার হবেন। এজন্য শত প্রতিকূলতার মধ্যেও পড়ালেখা করেছেন জেলা সদরে অবস্থিত টাঙ্গাইল কালেক্টরেট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত।

পরিবারের সীমাহীন অভাবের সঙ্গে বখাটেদের নানা উৎপাত উপেক্ষা করে সহপাঠীদের সঙ্গে হেসে খেলে সময় কাটিয়েছেন লাভলী। কিন্তু পিতার উপার্জনের একমাত্র অবলম্বন রিক্সাটিকে রাতের অন্ধকারে আগুন ধরিয়ে দেয় কে বা কারা। অভাবে পড়ে পরিবারের সিদ্ধান্ত দ্রুত মেয়েকে বিয়ে দিয়ে ঝামেলা মুক্ত হওয়া। বিষয়টি লাভলী বাবা-মাকে নিজের অমতের কথা জানায়।কিন্তু পরিবার তার বিয়ে বন্ধ না করলে প্রথমে সহপাঠী পরে স্কুল শিক্ষকদের বিষয়টি অবহিত করেন লাভলী ।

এ বিষয়ে শিক্ষকরা তার পরিবারকে বুঝিয়ে ব্যর্থ হলে শিক্ষকদের সহায়তায় সে নিজেই জেলা প্রশাসক মাহবুব হোসেন বরাবর চিঠি লেখে। তার এই আবেদনকে গ্রহণ করে কর্তৃপক্ষ তার বাবার কাছ থেকে বিয়ে বন্ধে মুচলেকা আদায় করলেও গোপনে গ্রামের বাড়ী গোপালপুরে নিয়ে বিয়ের আয়োজন করে তার পরিবার।

আবারও লাভলী প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করলে প্রশাসন গোপালপুরের গ্রামের বাড়ি থেকে তাকে উদ্ধার করে। পরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে লাভলী আক্তারের সমস্ত ব্যয়ভার, ভাইয়ের জন্য প্রতিবন্ধী ভাতা ও পরিবারের আর্থিক সহায়তাসহ সকল নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়।এভাবে বাল্য বিবাহ থেকে রেহায় পায় ১৪ বছরের লাভলী।

সকল প্রতিষ্ঠানেই শিক্ষার্থীদের সচেতনতামূলক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে পারলে ঘরে ঘরে লাভলী গড়ে উঠবে বলে জানান  টাঙ্গাইল কালেক্টরেট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক আব্দুল বাসেত মিয়া।

পরিবারের পক্ষ থেকে সহায়তা ও সচেতনতা বৃদ্ধি না পেলে বাল্যবিবাহ বন্ধ করা কষ্টসাধ্য বিষয় বলে জানিয়েছেন টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসক মো. মাহবুব হোসেন।