চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

নিজের গড়া দৈত্যের থাবায় ক্ষত-বিক্ষত গার্দিওলা

বুধবার রাতে ন্যু ক্যাম্পে যা ঘটলো সেটা আগেও অনেকবার দেখেছেন পেপ গার্দিওলা। তবে ম্যানসিটি কোচের সেই দেখাটা ছিল ভিন্ন অবস্থান আর ভিন্ন ভূমিকায় দাঁড়িয়ে। ২০০৮-১২ বার্সেলোনার ইতিহাসের অন্যতম সফল যুগের নেতৃত্বে ছিলেন গার্দিওলা। আর তার দলের সম্মুখ সমরের অগ্রনায়ক ছিলেন লিওনেল মেসি। কিন্তু বার্সায় থাকা অবস্থায় যে দৈত্যকে নিজের হাতে গড়েছিলেন গার্দিওলা, সেই দৈত্যের থাবায় এখন তাকে বারবার ক্ষত-বিক্ষত হতে হচ্ছে।

ক্যাম্প ন্যুতে থাকার সময় গার্দিওলা সব সময় বলতেন, মেসিই পার্থক্য তৈরি করে। তাকে ছাড়া প্রতিপক্ষের দিক থেকে আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়তে হতো। তিনি এও বলতেন, ‘আমরা যা অজর্ন করেছি তাকে ছাড়া (মেসি) সেটা অর্জন করতে পারতাম না।’

আর্জেন্টাইন ক্ষুদে জাদুকরকে বিশ্বের সেরা ও পরিণত ফুটবলার বানানোর পেছনে গার্দিওলার ভূমিকা ছিল বিশাল। ২০০৮ সালে তিনি বার্সায় আসার আগে মেসি ছিল কল্পনাপ্রসূত তবে ভঙ্গুর, সম্মোহিত কিন্তু অসঙ্গত। সেসময় এক মৌসুমে তার সর্বোচ্চ গোল সংখ্যা ছিল মাত্র ১৭টি।

barca_mcu

কিন্তু ২০০৮-০৯ মৌসুমে নাটকীয়ভাবে পরিবর্তন ঘটে। এসময় মেসির মধ্যে অসম্ভব গতি, গোলের জন্য অসংযত ক্ষুধা ও তার করার জন্য যন্ত্রশিল্পীর আঁচ দেখা যায়। ওই মৌসুমে তার অসামান্য পারফরম্যান্সের জোরে ট্রেবল জেতে বার্সা। আর মৌসুম শেষে মেসির নামের পাশে লেখা ৩৮ গোল। যা আগের মৌসুমের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি।

ওই সময় গার্দিওলা ম্যাচের সমস্ত দৃষ্টি রাখতেন মেসির দিকে যা মেসিকে বিশ্বের সেরা খেলোয়াড় বানিয়েছে।

গার্দিওলার সময়ে  মেসি টানা চারবার ফিফার বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার ‘ব্যালন ডি’অর’ জেতেন। এই সময়ে ১৯টি প্রতিযোগিতায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ১৪টি ট্রফি জেতে বার্সা। অবিশ্বাস্য সব কীর্তি গড়ার পর ২০১২ সালে বিশ্রামের কথা বলে বার্সার দায়িত্ব ছাড়েন গার্দিওলা।

bar

এরপর আবার ন্যু ক্যাম্পে ফেরেন গার্দিওলা। তবে সেটা অন্য ভূমিকায়। ২০১৫ সালের মার্চে পেপ ন্যু ক্যাম্পের ডাগআউটে বসে নিজ চোখে আবার দেখেন মেসির মাস্টারক্লাস পারফরম্যান্স। তবে এইবার তিনি ছিলেন জার্মান ক্লাব বায়ার্ন মিউনিখের কোচ। তখন তিনি যা দেখেছিলেন তাতে অবিশ্বাসে তার চোখ ঢেকে গিয়েছিল। আর এটা হয়েছিল এই কারণে যে, এই মেসিই কীভাবে তার বিরুদ্ধে এমনটা করতে পারলো? খেলা শেষে অবশ্য পেপ বলেছিলেন, ‘লিও’র খেলা দেখাটাই আসলে আনন্দের।’

ওই ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলনে মেসিকে আটনোর উপায় জানতে চাওয়া হলে গার্দিওলা বলেছিলেন, ‘এমন কোনো রক্ষণ নেই যে মেসিকে আটকাতে পারে। এটা এক কথায় অসম্ভব।’

ম্যাচ শেষে গার্দিওলার কথাই প্রমাণিত হয়েছিল। মেসির জোড়া গোলে ম্যাচে ৩-০ গোলে চুরমার হয়েছিল বায়ার্ন। সেই ম্যাচে প্রথম ডি-বক্সের বাইরে থেকে আচমকা এক শটে গোল করেন মেসি। পরে ডিফেন্ডার জেরমি বোয়েটাংকে ভূমিধস করে দারুণ এক চিপে ধূর্ত গোলকিপার ম্যানুয়েল নয়্যারকে ফাঁকি দিয়েছিলেন তিনি।

barca_mcu-1

২০১৫ পর আবারও একই অভিজ্ঞতা হলো গার্দিওলার। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের মঞ্চেই। অপ্রতিরোধ্য সেই মেসির কাছেই অসহায় গার্দিওলা। ইনিয়েস্তার পাস থেকে প্রথম ডিফেন্ডার ফার্নানদিনহো ও গোলকিপার ক্লডিও ব্রাভোকে মাটিয়ে লুটিয়ে বল জড়ান জালে। পরে আরো দুই গোল করে নিজের হ্যাটট্রিকের পূর্ণ করে গার্দিওলার সাথে আরেকবার কঠোর আচরণ করেন মেসি।

মাঝে একটি পেনাল্টি পেলে চতুর্থ গোল করার সুযোগও এসেছিল মেসির সামনে। কিন্তু নিজে শট না নিয়ে সতীর্থ নেইমারকে দিয়ে শট করান মেসি। তবে তিনি ব্যর্থ হন। পরে অবশ্য একটি গোল পেয়েছেন ব্রাজিলিয়ান ওয়ান্ডারকিড। আর খেলা শেষে বার্সার জয়টা ৪-০ গোলের।total

এই নিয়ে প্রতিপক্ষের কোচ হয়ে দুইবার ন্যু ক্যাম্পে আসা গার্দিওলার। দুইবারই ফলাফল এক। দুটি সফরেই তাকে কঠিন শিক্ষা নিয়ে ফিরতে হলো। কোনো জয় নয়, ড্র নয়, সবই হার। কোনো ম্যাচেই গোল করতে পারেনি গার্দিওলার দল। উল্টো দুই ম্যাচে ৭ গোল হজম করতে হয় তাকে। যার আবার পাঁচটিই করেছেন তার বিশ্বসেরা সাবেক শিষ্য।

তাই নিঃসন্দেহ বলা যায়, মেসির মধ্যে এমন এক দৈত্য তৈরি করেছেন যাকে এখন নিজেই থামাতে পারছেন গার্দিওলা।