বার্সেলোনা-লিওনেল মেসি; ২০১৯ সাল পর্যন্ত এই দুটি নাম যেন একই বৃন্তে দুই ফুল হয়ে সুবাস ছড়িয়ে গেছে। এরপর ২০২০ সালে বিশ্বে হানা দিলো করোনা মহামারি, বার্সা-মেসি সম্পর্কেও লাগলো মড়ক। পারফরম্যান্সে দুর্দশা আর ক্লাব সভাপতি যদাচার আচরণে বিরক্ত হয়ে ন্যু ক্যাম্প ছাড়তে চাইলেন আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড। অবশ্য শেষ পর্যন্ত থেকে গেছেন যদিও তবে তার এই ঘোষণা বার্সার জন্য আর্থিক ক্ষতির কারণ হয়ে উঠেছে বলে মনে করেন ক্রীড়া বিপণন বিশেষজ্ঞ চিনতো আজরাম।
বায়ার্ন মিউনিখের কাছে গত চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ৮-২ গোলে লজ্জার হারের পর ব্যুরোফ্যাক্সের মাধ্যমে বার্সা ছাড়ার ঘোষণা দেন মেসি। বার্সা কখনও ছাড়বেন না মেসি; যারা এই স্বপ্ন দেখে বসেছিলেন তাদের জন্য এই ঘোষণা ছিলো বিশাল এক ধাক্কা। স্বার্থে আঘাত আর সাফল্য খরাতে যে মেসির ধৈর্যচ্যুতি ঘটতে পারে প্রথমবারের মত সেটা টের পেয়ে গেছে বার্সা ভক্তরা।
মেসির ঘোষণায় শুধু বার্সা ভক্তই নয়, নড়েচড়ে বসেছে পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠানগুলোও। বিপণন বিশেষজ্ঞ চিনতো আজরাম বলছেন বার্সার সঙ্গে স্পন্সরশীপ নিয়ে জড়িয়ে আছে যেসব প্রতিষ্ঠান তারা মেসি-বার্সা সম্পর্ক নিয়ে সতর্ক দৃষ্টি রাখছে। ন্যু ক্যাম্পে ৩৩ বছর বয়সী ফরোয়ার্ডের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত মনে হওয়ায় এক ধাক্কায় বার্সার স্পন্সরশীপ থেকে আয় ৩০ থেকে ৫৫ মিলিয়ন ইউরো কমে এসেছে বলে জানিয়েছেন আজরাম।
আজরামের মন্তব্য অবশ্যই শঙ্কা জাগানিয়া বার্সার জন্য। পদত্যাগ করা প্রেসিডেন্ট জোসেপ মারিয়া বার্তেমেউয়ের আমলে ক্লাবটির পৃষ্ঠপোষক কার্যক্রমের প্রধান ছিলেন তিনি। সুতরাং কি করলে কিভাবে ভালো স্পন্সরশিপ মিলবে সেটা তার ভালোই জানার কথা। ইএফইকে এই বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন কেবল মেসির ঘোষণার কারণেই বর্তমান পৃষ্ঠপোষক জাপানি প্রতিষ্ঠান রাকুতেনের কাছ থেকে ২৫ মিলিয়ন ইউরো কম পেয়েছে বার্সা।
‘বর্তমান চুক্তি ৩০ মিলিয়নই বলে দিচ্ছে রাকুতেন মেসির অনিশ্চয়তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছে। আমি নিজেই অবাক হবো যদি বর্তমান চুক্তির মূল্য ৩০ মিলিয়ন হয় তাহলে।’
‘রাকুতেন যখন বার্সার সঙ্গে চুক্তি করেছিলো তখন দলে ছিলো মেসি,নেইমার-সুয়ারেজ। বাণিজ্যিকভাবে এই ত্রয়ীর মূল্য ছিলো আকাশছোঁয়া। আর এখন নেইমার-সুয়ারেজকে ছাড়া বার্সা চুক্তি বাড়াতে চাইছে, আবার মেসির ভবিষ্যৎও এখানে অনিশ্চিত।’
‘যখন বার্সা তাদের ব্র্যান্ড বিক্রি করতে চাইবে তখন সবার আগে মেসির ছবি ব্যবহার করে। বর্তমান পরিস্থিতিতে যেকোনো প্রতিষ্ঠানই বার্সার সঙ্গে তিন-চার বছর চুক্তি বাড়াতে ভয় পাবে কারণ খেলোয়াড় ছাড়া তাদের কাছে এই ক্লাবের কোনো মূল্যই নেই।’
মেসির ক্লাব ছাড়ার ঘোষণাতেই বার্সার এমন দুর্গতি বলে জানিয়েছেন আজরাম, ‘বার্সা ছাড়তে চেয়েই মেসি সবচেয়ে বড় সর্বনাশটা করেছে। অনেক ভক্তই মেসির জন্য বার্সা সমর্থন করে, যেমনটা ছিলো রোনালদোর। রিয়াল মাদ্রিদ থেকে জুভেন্টাসে চলে যাবার পর এই ভক্তরাও রোনালদোর সঙ্গে জুভেন্টাস সমর্থন শুরু করে।’