মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসি কার্যকরের বিরোধিতা করে বাংলাদেশ থেকে রাষ্ট্রদূতকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে তুরস্ক। ঢাকা এবং ইসলামাবাদে পাল্টাপাল্টি হাইকমিশনারকে ডেকে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। ঢাকায় পাকিস্তানের হাইকমিশনারকে ডেকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বারবার মন্তব্য করার কারণে কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সবকিছু মিলে তিন দেশের মধ্যে শুরু হয়েছে এক ধরনের কূটনৈতিক যুদ্ধ।
বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক টানাপোড়েনটা বেশ পুরনো হলেও এতে এখন ভালোভাবেই জড়িয়ে পড়েছে তুরস্ক। ফাঁসি কার্যকরের আগে তা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছিলেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান। তাতে সাড়া দেয়নি বাংলাদেশ সরকার। ফাঁসি কার্যকরের পরদিন তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাই আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানায়। আর তার একদিন পর ঢাকায় তাদের রাষ্ট্রদূতকেও প্রত্যাহার করে নেয় তুরস্ক।
ঢাকায় তুরস্ক দূতাবাসের একজন কর্মকর্তা চ্যানেল আই’র কূটনৈতিক প্রতিবেদক পান্থ রহমানকে রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহারের খবর নিশ্চিত করে বলেছেন, রাষ্ট্রদূত ডেব্রিম ওজটার্ক এরইমধ্যে ঢাকা ছেড়ে গেছেন। তবে এ নিয়ে তাৎক্ষণিক কোন প্রতিক্রিয়া জানায়নি ওইসময় পাকিস্তান ইস্যুতে ব্যস্ত থাকা বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
নিজামীর ফাঁসি নিয়ে আপত্তি জানানো আরেক দেশ হচ্ছে পাকিস্তান। একাধিকবার বিবৃতি দিয়ে ফাঁসির বিরোধিতা করার পাশাপাশি পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার ইসলামাবাদে বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার নাজমুল হুদাকে ডেকে পাঠায়।
আর বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বারবার পাকিস্তানের এমন আচরণের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বিকেলে ডেকে পাঠায় পাকিস্তানের হাইকমিশনার সুজা আলমকে। তখন আঙ্কারার উদ্দেশে ঢাকা ছেড়ে গেছেন তুরস্কের রাষ্ট্রদূত।
তবে প্রায় ২০ মিনিট বৈঠক শেষে পাকিস্তানের হাইকমিশনার সুজা আলম পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অপেক্ষমান সাংবাদিকদের বলেন, চলমান এসব বিষয় বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্কের কোন অবনতি ঘটাবে না।
‘বাংলাদেশের সঙ্গে ভ্রাতৃত্বসুলভ সম্পর্ক অক্ষুণ্ন থাকবে। আমি বিশ্বাস করি দু’ দেশের জনগণের মধ্যেও ভ্রাতৃত্বের শক্ত সম্পর্ক রয়েছে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি এই সম্পর্ক আগামীতে আরও জোরদার হবে,’ বলে মন্তব্য করেন তিনি
তাকে ডেকে পাঠিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান জানানো দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বিষয়ক সচিব মিজানুর রহমান বলেন, এমন ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে সে বিষয়ে পাকিস্তানের হাইকমিশনারকে সতর্ক করা হয়েছে।
তিনি বলেন: তাদের (পাকিস্তানের) যে প্রতিক্রিয়া সেটা আমাদের কাছে মোটেই গ্রহণযোগ্য নয় এটা তুলে ধরেছি। এ ব্যাপারে অত্যন্ত স্পষ্ট ও কড়া ভাষায় আমরা প্রতিবাদ করেছি। পাকিস্তানের হাইকমিশনার আমাকে আশ্বস্ত করেছেন যে বাংলাদেশের এই অবস্থান তিনি তার উর্ধ্বতনদের কাছে তুলে ধরবেন।
‘তার এই প্রতিশ্রুতির পরও আমরা জানিয়ে দিয়েছি যে এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি চায় না বাংলাদেশ,’ বলে জানান তিনি।
এর আগে ইসলামাবাদে বাংলাদেশের হাই কমিশনার নাজমুল হুদা সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন, আইন অনুযায়ীই মতিউর রহমান নিজামীর বিচার হয়েছে, বিচারের শাস্তি কার্যকর হয়েছে। এখানে অন্য দেশের কিছু বলার নেই।
মঙ্গলবার রাতে মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসি কার্যকর হওয়ার আগে পরে যে দুটি দেশ আনুষ্ঠানিকভাবে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখায় তার একটি তুরস্ক। আন্তর্জাতিকভাবে জামায়াত বলয়ের জাস্টিস পার্টি সেখানে ক্ষমতায়।