বর্তমানে নির্ধারিত নিকটাত্মীয়ের সংজ্ঞার বাইরে বিশেষ পরিস্থিতিতে পরিচিত কোনো ব্যক্তি যাচাই–বাছাই সাপেক্ষে ইমোশানাল ডোনার (আবেগী দাতা) হিসেবে কাউকে কিডনি দানের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
মানবদেহে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন আইন (সংশোধীত) -এর এসংক্রান্ত ধারা ও বিধান ছয় মাসের মধ্যে সংশোধনের পদক্ষেপ নিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়ে বৃহস্পতিবার রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট।
এই রায়ের ফলে যখনই আইনের ধারা সংশোধন হয়ে যাবে তখন থেকেই ইমোশানাল ডোনার (আবেগী দাতা) হিসেবে কিডনি দানের সম্ভাবনা তৈরি হলো বলে জানান রিটের পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম।
বৃহস্পতিবার বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ সংক্রান্ত একটি রিটের ওপর জারি করা রুল নিষ্পত্তি করে রায় দেন।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী রাশনা ইমাম। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যার্টনি জেনারেল সাইফুদ্দিন খালেদ। আর আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না। তার সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী শাহীনুজ্জামান শাহীন।
রায়ের বিষয়ে ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম বলেন: বিশেষ পরিস্থিতিতে পরিচিত বা সম্পর্ক আছে এমন ব্যক্তি চাইলে প্রত্যায়ন বোর্ডের যাচাই–বাছাই সাপেক্ষে ইমোশনাল ডোনার হিসেবে কিডনিসহ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দান করতে পারবেন বলে রায়ে এসেছে। এজন্য ছয় মাসের মধ্যে আইন ও বিধিমালা সংশোধন করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর ফলে নিকটাত্মীয়ের বাইরে কিডনি দানের সুযোগ তৈরি হলো। এবং নিকটাত্মীয় ছাড়া বিশেষ পরিস্থিতিতে পরিচিত কেউ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দান করতে পারবেন। তবে অপরিচিত বা সম্পর্ক নেই এমন ব্যক্তি কিডনি দিতে পারবে না।
এদিকে আইন অনুসারে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কেনা-বেচা নিষিদ্ধ উল্লেখ করে রাশনা ইমাম বলেন: কিডনি দেওয়ার ক্ষেত্রে যাচাই–বাছাইয়ের জন্য প্রত্যায়ন বোর্ডের জন্য নীতিমালা নির্ধারণ করে দিয়েছেন আদালত। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দানের ক্ষেত্রে ইমোশনাল ডোনেশন হচ্ছে কি না, তা যাচাই-বাছাইয়ের জন্য সংশ্লিষ্ট হাসপাতালে একটি প্রত্যয়ন বোর্ড গঠন করতে হবে। প্রত্যায়ন বোর্ড দাতা ও গ্রহীতার সম্পর্ক, পরিচয় যাচাই করবে। কোন পরিস্থিতিতে কিডনিসহ অঙ্গ–প্রসঙ্গ দেওয়া হচ্ছে, তার ব্যাখ্যা থাকতে হবে। দাতা স্বেচ্ছায় অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দান করছেন কি না, অর্থ লেনদেন হচ্ছে কি না, দাতা মানসিকভাবে সুস্থ বা মাদকাসক্ত কি না, তা নিশ্চিত করতে হবে। দাতা–গ্রহীতার দেওয়া তথ্যে বৈপরীত্য আছে কি না তাও নিশ্চিত করার বিষয়টি নীতিমালায় এসেছে।
এর আগে একবার কিডনি প্রতিস্থাপনের পর দ্বিতীয় দফায় সন্তানের কিডনি প্রতিস্থাপন নিয়ে আইনি জটিলতা সূত্রে ঢাকার বাসিন্দা ফাতেমা জোহরা ১৯৯৯ সালের আইনের তিনটি ধারার বৈধতা নিয়ে ২০১৭ সালে ওই রিট করেন। সে রিটের পরিপ্রেক্ষিতে একই বছরের ২৪ আগস্ট আদালত রুল জারি করেন।
এরপর ১৯৯৯ সালের এসংক্রান্ত আইন ২০১৮ সালে সংশোধন করা হয়। এরপর রিট আবেদনকারীর সম্পূরক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আবার সম্পূরক রুল জারি হয়। সে রুল নিষ্পত্তি করে বৃহস্পতিবার রায় দেন হাইকোর্ট।