‘কাচের দেয়ালটিতে একটা বড় চিড় ধরিয়েছি আমরা.. যদি কোন মেয়ে এখনো আমাকে দেখে তাকে আমি বলবো, আমি পরবর্তী নারী প্রেসিডেন্ট হতে পারি, কিন্তু তার পরের জন হবে তোমাদেরই কোনো একজন।’ ২০১৬ সালের জুলাই মাসে ডেমোক্রেটিক দল থেকে মনোনয়ন পাওয়ার পর একথা বলেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিলারি ক্লিনটন।
শেষ পর্যন্ত যদিও সেই কাচের দেয়ালটা পুরোপুরি ভাঙতে ব্যর্থ হন হিলারি তবে বিশ্বব্যাপি ক্ষমতায় নারীর অংশগ্রহণের সংখ্যাটা বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। পিউ রিসার্চ সেন্টারের একটি গবেষণা বলছে, বিশ্বে এখন ১৫ নারী ক্ষমতার শীর্ষে রয়েছেন। যাদের মধ্যে আটজন তাদের দেশের প্রথম নারীপ্রধান। তারপরও জাতিসংঘের ১৯৩ টি সদস্য দেশের মাত্র ১০ শতাংশেরও কম এই সংখ্যাটা।
নির্বাচিত এসব নারীপ্রধানরা নি:সন্দেহে অনেক বাধা পেরোচ্ছেন কিন্তু তারা কি তাদের সঙ্গে দেশের অন্যান্য নারীদেরও এগিয়ে নিচ্ছেন? প্রশ্নটির জবাব হিসেবে ভারতের স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় রাজনৈতিক কোটা প্রক্রিয়া এখানে একটি নমুনা হিসেবে নেওয়া যেতে পারে।
১৯৯৩ সাল থেকে ভারতে যথেচ্ছভাবে নির্ধারণ করা তিনটি গ্রামে একটি চিফ কাউন্সিলের পদ নারীর জন্য সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছে। এর উদ্দেশ্য ছিলো একটি স্বাভাবিক সামাজিক পর্যবেক্ষণ করা। এরপর ২০১২ সালে হাজার হাজার ভারতীয় কিশোর-কিশোরী ও তাদের বাবা-মায়ের উপর একটি গবেষণা পরিচালিত হয়। সেখানে দেখা যায়, নারী নেতৃত্ব আর গ্রামের নারীদের উচ্চস্বপ্ন পরস্পর সম্পর্কযুক্ত।
একজন নারী নেতৃত্বে থাকা গ্রামের বাবা-মায়ের তাদের ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে দেখা স্বপ্ন প্রায় ২৫ শতাংশ একই রকম, যেসব স্বপ্ন নারীনেতৃত্ববিহীন গ্রামের বাবা-মায়ের মধ্যে শুধু ছেলেদের জন্যই দেখা যায়। সেই গবেষকদলের বক্তব্য, নারী নেতাদের হয়তো নীতিমালার মাধ্যমে পরিস্থিতি পরিবর্তনের সুযোগ খুব কম থাকে কিন্তু তাদের ইতিবাচক পদক্ষেপই তরুণীদের মধ্যে আরো উচ্চাশা ছড়ানো এবং শিক্ষার উন্নয়নের জন্য যথেষ্ট।
২০১২ সালে একটি সুইস গবেষণাও বলছে একই কথা, তারা যোগ করেন, দূর থেকেও সেই প্রভাবটা কাজ করে। তারা গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের চারভাগে ভাগ করে হিলারি ক্লিনটন, এঙ্গেলা মেরকেল, বিল ক্লিনটন এবং একদলকে কোনোই ছবি দেখানো ছাড়াই সময় দেন। সেখানে বিল ক্লিনটন ও ছবি না দেখানো দলের থেকে রাজনীতিক নারীর ছবি দেখানো দলগুলো খুব ভালোভাবে লম্বাসময় ধরে ইতিবাচকভাবে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরতে সক্ষম হয়।
দি ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম বিশ্বের দেশগুলোর চারটি বিষয়ের উপর ভিত্তি করে গ্লোবার জেন্ডার গ্যাপ নির্ধারণ করে একটি তালিকা করে। সেই চারটি বিষয় ছিলো, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, অর্থনীতিতে অংশগ্রহণ এবং রাজনীতিতে অংশগ্রহণ। সেখানে দেখা যায়, নারী ও পুরুষের মধ্যে সবচেয়ে কম বিভেদ ছিলো নরওয়ে, ফিনল্যান্ড ও আইসল্যান্ডে। আর এসব দেশেই রাজনীতিতে নারীর সংখ্যা বেশি।
যদিও নারী রাজনীতিক এবং নারীদের জীবন উন্নয়নের মধ্যে গভীর সংযোগ খুঁজে বের করা খুব কঠিন তবে সাম্প্রতিক সময়ে রাজনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণ বেড়েছে বহুগুণে। এদের কেউ কেউ নির্বাচিত হয়েছেন আবার কেউ খুব কম সময়ের জন্য নেতৃত্বে ছিলেন। তাই তাদের নীতিমালার সরাসরি প্রভাব নির্ধারণ করা খুব কঠিন। তবে এটুকু বলাই যায়, যারা কাচের দেয়ার ভাঙার সক্ষমতা রাখে তাদের উচ্চাশার মাত্রাটা অনেক বেশি। এবং তাদের দেশ মেয়েদের জন্য আরো সুন্দর জীবন বয়ে আনতে সক্ষম।