নারায়ণগঞ্জে ৭ খুনের ঘটনায় দুটি মামলার মধ্যে আইনজীবী চন্দন সরকার ও তার ড্রাইভার ইব্রাহিম হত্যা মামলাটি বিচার প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য জজকোর্টে প্রেরণের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এবং নিহত কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলামের নারাজির আবেদন খারিজ করে দিয়েছে আদালত।
একই সঙ্গে নিয়মিত হাজিরা শেষে র্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ ২২ জনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন নারায়ণগঞ্জ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক আশিক ইমাম।
মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী এডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন জানান, আইনজীবী চন্দন সরকার ও তার গাড়ির চালক ইব্রাহিম হত্যা মামলায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা যে অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন তা নিয়ে মামলার বাদীর কোনো অভিযোগ না থাকায় বিচার প্রক্রিয়া শুরু করতে অভিযোগ গঠনের জন্য বিচারক মামলাটি জজ কোর্টে পাঠিয়েছেন।
নারায়ণগঞ্জে ৭ খুনের ঘটনায় দায়েরকৃত দুটি মামলার একটির চার্জশিটের বিরুদ্ধে নিহত কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলামের নারাজির আবেদন খারিজ করে দিয়েছে আদালত।
একই সঙ্গে প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামসহ ৫ জন হত্যার অপর মামলাটির পরবর্তী শুনানির দিন আগামী ৩০ নভেম্বর ধার্য করা হয়েছে। সোমবার সকালে নারায়ণগঞ্জ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক আশিক ইমাম এই আদেশ দেন। এ সময় নিয়মিত হাজিরা শেষে র্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ ২২ জনকে আদালত পুনরায় কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন। এদিকে র্যাবের সাবেক সিও তারেক সাঈদ মোহাম্মদের পক্ষে তার আইনজীবী জামিনের আবেদন করলে মামলাটি ট্রায়ালে থাকার কারণে আদালত তা গ্রহণ না করে নাকচ করে দেন।
মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী সাখাওয়াত হোসেন খান জানান, সেলিনা ইসলাম বিউটির দায়ের করা মামলার এজাহারভুক্ত ৫ আসামীকে অভিযোগপত্র থেকে অব্যাহতি দেয়ায় বাদী আদালতে নারাজী আবেদন করেন। জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত নারাজী আবেদন না মঞ্জুর করে অভিযোগপত্র গ্রহণ করে। এই আদেশের বিরুদ্ধে মামলার বাদী ২১ জুলাই জেলা ও দায়রা জজ আদালতে রিভিশন মামলা দায়ের করেন। মামলার শুনানী শেষে আদেশের ধার্য দিন আজ সোমবার আবেদন না মঞ্জুর করে আদেশ দেন জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক সৈয়দ এনায়েত হোসেন।
এ আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাবেন বলে জানান মামলার আইনজীবী এডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান।
জেলা ও দায়রা জজ আদালতে দায়ের করা রিভিশন মামলাটি নামঞ্জুর করায় মামলার বাদী সেলিনা ইসলাম বিউটি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, হত্যাকাণ্ডের নির্দেশদাতা ও অর্থের উৎস বের করতেই নূর হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে চার্জশিট দাখিল করা হোক।
অপর দিকে র্যাব কর্মকর্তা তারেক সাঈদের পক্ষে তার আইনজীবী জামিনের আবেদন জানালে মামলাটি ট্রায়ালে থাকার কারণে আদালত গ্রহণ না করে তা নাকচ করে দেন। আদালত তা নথিভুক্ত করে বিচারিক আদালতে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে বলে তিনি জানান।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী কেএম ফজলুর রহমান জানান, আদালতের সিদ্ধান্তে মামলাটি সমস্ত বাধাবিপত্তি অতিক্রম করে ট্রায়ালে বিচার প্রক্রিয়ায় চলে যাবে।
উল্লেখ্য, গত ২৭ এপ্রিল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংকরোডের ফতুল্লা থেকে কাউন্সিলর নজরুল ইসলাসহ ৭ জন অপহরণের তিন দিন পর শীতলক্ষ্যা নদী থেকে লাশ উদ্ধার করা হয়। এই ঘটনায় নিহত নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি বাদী হয়ে একটি ও আইনজীবী চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল বাদী হয়ে ফতুল্লা মডেল থানায় পৃথকভাবে দুটি মামলা দায়ের করেন।
হত্যাকাণ্ডের প্রায় এক বছর পর গত ৯ এপ্রিল মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এজাহারভুক্ত ৫ আসামীকে বাদ দিয়ে নূর হোসেন ও র্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ ৩৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগ দাখিল করলে ৮ জুলাই একটি মামলার বাদী নিহত প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে নারাজি আবেদন করেন। ওই আবেদন না মঞ্জুর করে অভিযোগপত্র গ্রহণ করে জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত। এই আদেশের বিরুদ্ধে মামলার বাদী বিউটি গত ২১ জুলাই জেলা ও দায়রা জজ আদালতে রিভিশন মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় বর্তমানে র্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ ২২ জন কারাগারে আটক রয়েছে। পলাতক রয়েছে ১৩ জন।