নারায়ণগঞ্জে অপহরণ মামলার দীর্ঘ ১৪ বছর পর রুবেল নামে নিখোঁজ শিশু যুবক বয়সে ফিরে এসেছে। বৃহস্পতিবার রাতে ওই যুবক তার বড় ভাই ও মায়ের দায়ের করা মামলায় নির্যাতনের শিকার দুই মুক্তিযোদ্ধার সাথে থানায় এসে উপস্থিত হলে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
ভুক্তভোগিদের অভিযোগ, এই যুবকের মা মিথ্যা অপহরণ মামলা দিয়ে ১৯ জনকে আসামি করে হয়রানি করেছেন। তবে পুলিশ বলছে, আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সদর উপজেলার আলীরটেক ইউনিয়নের কুঁড়েরপাড় এলাকার জানু মিয়ার সাত বছর বয়সের শিশু সন্তান রুবেল ২০০৭ সালের ১০ জানুয়ারি নিজ বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়। ঘটনার প্রায় দেড় মাস পর ২৩ ফেব্রুয়ারি সদর থানায় অপহরণ মামলা দায়ের করেন রুবেলের মা রহিমা বেগম। মামলায় একই ইউনিয়নের পাশের গ্রাম চর সৈয়দপুরের দুই মুক্তিযোদ্ধা সহোদর জুলহাস উদ্দিন আহমেদ ও নুরুল ইসলামসহ ১৯ জনকে এজাহারভুক্ত আসামি করেন তিনি। এই মামলায় ছয় আসামি রিমান্ডসহ বেশ কিছুদিন জেলও খাটেন। মুক্তিযোদ্ধা দুই ভাইসহ অন্যান্য আসামিরা দীর্ঘ চার বছর পালিয়ে ফেরারি জীবন যাপন করে নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। পরে তদন্তে অভিযোগের সত্যতা না পাওয়ায় থানা পুলিশ আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। এতে মামলার বাদি রহিমা বেগম নারাজি দিলে মামলাটি পুন:তদন্তের ভার দেয়া হয় ডিবি পুলিশকে।
ডিবির তদন্তেও সত্যতা না পাওয়ায় এই তদন্ত সংস্থাটিও মামলা নিষ্পত্তি করতে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। পরবর্তীতে ২০১০ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি আদালত মামলা নিষ্পত্তি করে আসামিদের অব্যাহতি দেন।
তবে দীর্ঘ চৌদ্দ বছর পর নিখোঁজ রুবেলের সাথে তার মায়ের কাকতালীয়ভাবে যোগাযোগ হলে রুবেল বাড়িতে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। এতে মা রহিমা বেগম ছেলের কাছে মিথ্যা অপহরণ মামলার কথা স্বীকার করে বাড়িতে যেতে নিষেধ করেন এবং ভয়ভীতি দেখান। মায়ের নিষেধ উপেক্ষা করে রুবেল বুধবার (১৯ মে) বড় ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ করে স্ত্রী সন্তানসহ বাড়িতে গিয়ে উপস্থিত হলে এলাকায় হৈ চৈ পড়ে যায়।
এর পরদিন বৃহস্পতিবার রাতে বড় ভাই ও মায়ের মামলায় ভুক্তভোগিদের আশ্বাসে থানায় গিয়ে হাজির হন রুবেল। তিনি জানান, কেউ তাকে অপহরণ করেনি। শিশু বয়সে ভারী কাজের চাপ ও মায়ের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন তিনি।
দীর্ঘসময় পর নিখোঁজ রুবেল ফিরে এলেও মিথ্যা মামলায় হয়রানির জন্য তার মায়ের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছেন দুই ভুক্তভোগি মুক্তিযোদ্ধা সহোদর জুলহাস উদ্দিন আহমেদ ও নুরুল ইসলাম।
এ ব্যাপারে সদর মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ শাহজামান জানান, রুবেলকে আদালতে হাজির করা হবে। পরবর্তীতে আদালতের আদেশ অনুযায়ী পুলিশ ব্যবস্থা নেবে।