আসামের ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেন্স (এনআরসি) বা নাগরিক তালিকার খসড়া থেকে একের পর এক বাঙালি হিন্দুর নাম বাদ পড়ে যাওয়ার ঘটনায় উদ্বিগ্ন ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি – বিজেপি।
এনডিটিভি জানায়, গৌহাটির বাসিন্দা ৫২ বছর বয়সী উমাকান্ত ভৌমিক একজন হিন্দু ধর্মাবলম্বী বাঙালি এবং প্রাক্তন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীর আমল থেকেই বিজেপির সমর্থক। গত বছর প্রকাশিত আসামের নাগরিক তালিকা থেকে যে ৪১ লাখ মানুষের নাম বাদ পড়েছিল, তাদের মধ্যে তিনি এবং তার পরিবারও রয়েছেন।
আক্ষেপ করে উমাকান্ত ভৌমিক বলেন, ‘একবার নয়, সাতবার আমি আমার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে যাচাইয়ের জন্য এনআরসি শুনানিতে গিয়েছি। আমাদের খুব একটা আশা নেই। আমি একেবারে শুরু থেকেই বিজেপি সমর্থক। আমরা বাঙালি হিন্দুরাই আসামে বিজেপির প্রথম সমর্থক ছিলাম।’
‘আমরাই আসামে বিজেপির ঘাঁটি প্রতিষ্ঠা করেছিলাম। আর এখন আমাদেরকে এভাবে হয়রানি করা হচ্ছে, অথচ সরকার আমাদেরকে কোনো সাহায্য করছে না।’
উমাকান্তের দাবি, বাঙালি হিন্দু জনগোষ্ঠীর বিপুল সংখ্যক মানুষের নাম খসড়া তালিকায় নেই। অথচ আর তিনদিন পরই, আগামী ৩১ জুলাই চূড়ান্ত তালিকাটি প্রকাশ করার নির্দেশ রয়েছে হাইকোর্টের পক্ষ থেকে।
আসামের অনেকেই এখন এনআরসি’র খসড়া নিয়ে সংশয়ে আছেন বলে মন্তব্য করেছেন। ইতোমধ্যেই কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকার অন্যান্য রাজ্যতেও এনআরসি তালিকা তৈরির পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে।
অথচ আসামে ক্ষমতাসীন বিজেপি রাজ্য সরকারও খসড়া তালিকায় ভুল অন্তর্ভুক্তি এবং নাম বাদ যাওয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
নিজস্ব সূত্র থেকে এনডিটিভি জানায়, বিজেপি এই বিপুল সংখ্যক সনাতন ধর্মাবলম্বী জনগোষ্ঠীর নাম এনআরসির খসড়া থেকে বাদ যাওয়া নিয়ে চিন্তিত। কেননা আসামের ১৮ শতাংশ বাঙালি হিন্দু ভোট ব্যাংকের বেশিরভাগই বিজেপি’কে সমর্থন করে।
গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি আসামের ১৪ টির মধ্যে ৯টি আসন জিতেছে। ধারণা করা হয় যে, আদিবাসী, আসামিয়া হিন্দু এবং বাঙালি হিন্দুদের ভোট মিলেই এমন জয় পেয়েছে বিজেপি।
আসামে বাঙালি হিন্দুদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সারা আসাম বাঙালি ঐক্য মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক শান্তনু মুখার্জী বলেন, ‘আমরা খসড়ায় লক্ষ্য করেছি, বাঙালি হিন্দুরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন এবং এর পেছনে সরকারের পক্ষ থেকে অনেকগুলো ত্রুটি রয়েছে।’
গত দু’মাস ধরে বিজেপি’র কেন্দ্র এবং রাজ্য, দুই সরকারই এনআরসি’র তথ্য পুনর্যাচাইয়ের জন্য সুপ্রিম কোর্টের কাছে আবেদন করেছে, সবরকম চেষ্টা করেছে। কিন্তু শীর্ষ আদালত ওই আবেদন প্রত্যাখ্যান করে দিয়েছেন।
১৯৫১ সালে প্রথম প্রকাশিত হয় আসামের নাগরিক তালিকা। বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে আসামে চলে যাওয়া জনগোষ্ঠীকে শনাক্ত করার কারণ দেখিয়ে ১৯৫১’র পর এই প্রথমবারের মতো রাজ্যের নাগরিকত্বের তালিকা নবায়ন করার কাজ করছে সরকার। ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের আগে যারা রাজ্যটিতে এসেছিলেন কেবল তাদেরকেই নাগরিকত্ব দেয়া হচ্ছে।