চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

নাইজেরিয়ায় প্রাণঘাতী ‘লাসা জ্বর’ 

প্রাণঘাতী লাসা জ্বর নাইজেরিয়ায় মহামারী আকার ধারণ করেছে। চলতি বছরেই এই জ্বরে ৯০ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। কিন্তু দুঃশ্চিন্তার কারণ বাড়িয়েছে এই জ্বরের কোন প্রতিষেধক না থাকা। প্রতিষেধক না থাকার কারণেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে আক্রান্ত এলাকার বাসিন্দারা।

বিবিসি জানিয়েছে, লাসা জ্বর নতুন কোন রোগ না। কিন্তু এর সাম্প্রতিক প্রাদুর্ভাব মহামারী আকার ধারণ করেছে। আগের চেয়ে অনেক দ্রুত এবং ব্যাপকভাবে এটি  বিস্তার লাভ করছে।

লাসা জ্বর সর্বপ্রথম আবিষ্কার হয় ১৯৬৯ সালে নাইজেরিয়ার বোর্নো প্রদেশের লাসা শহরে। তবে এ বছর মহামারী ধারণ করায় গত ১ জানুয়ারি থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মাত্র ৫৬ দিনে ৯০ জনের প্রাণহানীর পাশাপাশি মোট ১ হাজার ৮১ জন আক্রান্তের তথ্য লিপিবদ্ধ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে নাইজেরিয়ান সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল (এনসিডিসি)।

স্বাস্থ্যকর্মীরাও এ নিয়ে দুঃশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। এমনকি নাইজেরিয়ার ইবোনাই, নাসারাওয়া, কোগি, বেন্যু, ওন্ডো এবং এডো প্রদেশের ১৪ স্বাস্থ্যকর্মীও রয়েছেন আক্রান্তদের দলে। 

তথাকথিত এই ‘ভাইরাল হেমোরেজিক জ্বর’ শরীরের বেশ কয়েকটি অঙ্গকে আক্রান্ত করতে পারে এবং রক্তের শিরাকে অকার্যকর করে দেয়। লাসায় আক্রান্ত বেশিরভাগ লোক হালকা উপসর্গ যেমন জ্বর, মাথাব্যাথা এবং স্বাভাবিক দুর্বলতা অনুভব করবে।

তবে অনেক সময় এর কোনটা নাও হতে পারে। আবার কোন কোন ক্ষেত্রে নাক, মুখ ও শরীরের অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দিয়ে রক্ত বের হয়ে এটি প্রাণঘাতি হেমোরেজিক জ্বর ও ইবোলার মতো আকার ধারণ করতে পারে।

ধারণা করা হয় এক শতাংশ ক্ষেত্রে এটি মারাত্মক হতে পারে, কিন্তু গর্ভবতী নারীরা এতে আক্রান্ত হলে শতকরা ৮০ ভাগ ক্ষেত্রে তাদের সন্তান নষ্ট হওয়া বা তাদের মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে।

লাসা ভাইরাস নামের এক ধরনের জীবাণুর সংক্রমণে রোগটি হয়। এই ভাইরাস আবার সহজাতভাবেই ন্যাটাল মাল্টিম্যামেট (Natal multimammate) প্রজাতির ইঁদুরের দেহের অংশ বলে বিজ্ঞানীদের ধারণা।

এই ভাইরাস বহনকারী ইঁদুরের মলমূত্র, লালা, রক্ত মানুষের পেটে গেলে বা এসব স্পর্শ করলেও যে কেউ আক্রান্ত হতে পারে।

তাই এখন পর্যন্ত লাসা জ্বরের কোন প্রতিষেধক না থাকলেও মহামারী কমাতে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। এজন্য ন্যাটাল মাল্টিম্যামেট প্রজাতির ইঁদুর যেন ঘরে আসতে না পারে সে ব্যবস্থা নিতে হবে। ইঁদুর সাধারণত বদ্ধ, জিনিসপত্রে বোঝাই, স্যাঁতস্যাঁতে জায়গায় থাকতে পছন্দ করে, তাই ইঁদুরের বসবাস উপযোগী পরিবেশ নষ্ট করতে হবে।

ইঁদুরের বিষ

পাশাপাশি আক্রান্ত অঞ্চলে ঢাকনাযুক্ত ডাস্টবিনে ময়লা ফেলা, বদ্ধ পাত্রে খাবার এবং পানি সংরক্ষণের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এছাড়া লাসা আক্রান্ত ব্যক্তি বা লাসার কারণে মৃত ব্যক্তিকে বহন করার ক্ষেত্রে প্রতিরক্ষামূলক গ্লাভস ব্যবহার করতে হবে।

এছাড়াও এর প্রতিষেধক আবিষ্কারের চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এটি দীর্ঘমেয়াদি এবং ব্যয়বহুল প্রক্রিয়া হলেও আশা করা হচ্ছে লাসা বিশ্বব্যাপী মহামারী হওয়ার আগেই কোয়ালিশন ফর এপিডেমিক প্রিপিয়ারেডনেস ইনোভেশন (সিইপিআই) এই প্রতিষেধক তৈরি দ্রততর করতে সহযোগিতা করবে।