চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

নরমুণ্ডু দিয়ে ফুটবল খেলায় আ. লীগ বনাম বিএনপি

শফিক রেহমান কেসস্টাডি আগামী প্রজন্মের জন্য খুবই শিক্ষণীয়। উনি উনার প্রজন্মের অন্যতম মেধাবী মানুষ। মেধাবী হবার কারণে যখন তার সামনে মিডিওকার কিছু বুদ্ধিজীবী আওয়ামী লীগের কোলে বসে সুবাতাস খেয়েছে, উনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এর প্রতিশোধ নিতে উনি বিএনপির কোলে বসে হাওয়া খাবেন। বাংলাদেশের অধিকাংশ বুদ্ধিজীবী এই দ্বিদলীয় ভ্রান্তির দোলনায় চড়ে সৃজনশীল প্রতিভার অপচয় করেছেন। অথচ এসবের প্রয়োজন ছিলো না রেহমানের। ছিমছাম সচ্ছল জীবন ছিলো তার।

সমাজকর্মী তালেয়া রেহমানের মতো একজন যোগ্য সহধর্মিনী পেয়েছেন তিনি, যেমন সহধর্মিনী একজন লেখক ও সৃজনশীল মানুষকে অনুপ্রেরণা দিতে সক্ষম। স্বৈরাচার এরশাদের বিরুদ্ধে জনমানুষের মুক্তির মিছিলে শফিক রেহমানের “যায় যায় দিন”-এর যে সাফল্য এরপর মিডিয়ায় শখ করে একটি দুটি ভিন্ন মেজাজের অনুষ্ঠান সঞ্চালন করে মিডিয়ার সঙ্গে সম্পর্কের সুঁতো রেখে পুরো মনোযোগ যদি উনি লেখালেখিতে দিতেন, আজ এই আওয়ামী লীগ বনাম বিএনপি নরমুণ্ডু দিয়ে ফুটবল খেলার চিয়ার লিডার তাকে হতে হতো না।

সম্প্রতি শফিক রেহমানের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর তনয় হত্যা ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনার সম্পৃক্ততার যে অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে, তা প্রমাণিত হলে উনি ইতিহাসে খুন হয়ে যাবার পর মৃতদেহের পাশে গোলাপ রেখে যাওয়া খল চরিত্র হিসেবে থেকে যাবেন। আর এই অভিযোগ যদি প্রমাণিত না হয়, শফিক রেহমানের সম্পৃক্ততা যদি প্রধানমন্ত্রী তনয়ের ব্যাংক একাউন্টের তথ্য সংগ্রহের মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকে, তবে প্রমাণিত হবে উনি একজন অনুসন্ধানী সাংবাদিক, কিন্তু সেটা বিএনপির ইনফরমেশান হিটম্যান হিসেবে।

শফিক রেহমানের এই দলীয় আত্মপরিচয় উনার সৃজনশীল প্রতিভাকে হত্যা করে লাল গোলাপ রেখে গেছে তার পাশে। শুধু শফিক রেহমানকে গ্রেফতারের টাইমিং-টা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অসংখ্য অপরাধ ও বিচারহীনতা ঢেকে দেবার সস্তা বুদ্ধি হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী তনয় হত্যা ষড়যন্ত্র জনমানুষের আশানুরূপ সমানুভূতি পায়নি। অসংখ্য মা যখন তাদের পুত্র-কন্যা হারানোর বেদনায় বিদীর্ণ, সরকার নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার কিছুই দিতে পারেনি, তখন হত্যা ষড়যন্ত্র নিয়ে উতলা হবার মতো আবেগ অবশিষ্ট নেই কোণঠাসা জনগণের।

আওয়ামী লীগকে মন্দের ভালো বলে চালিয়ে দেয়ার ব্যাপারটা এতো তেতো হয়ে গ্যাছে যে, যেনো নৌকার ওপর অসহায় মানুষ আওয়ামী বাঘের হিংস্র থাবার মুখে, পানিতে ঝাঁপ দেবার উপায়ও নেই, সেখানে হিংস্র কুমীর বিএনপি। দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতি, ধর্ষণ, গুম, অন্য ধর্মের মানুষ উচ্ছেদ, ইসলামীকরণ, এইসব আত্মঘাতী কর্মকাণ্ডে কুমীরের আছে জামাত, বাঘের আছে ওলামা-হেফাজত। বাঘ এবং কুমীর উভয়েই স্পষ্টতই দক্ষিণপন্থী।

সচেতন তরুণ প্রজন্মের জানা দরকার পুরো দক্ষিণ এশিয়া এখন সন্ত্রাসবাদের জ্বলন্ত উনুনের ওপর বসে আছে। এই ঝুঁকিপূর্ণ মুহূর্তে কট্টরপন্থার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে না তুললে আত্মঘাতী বোমা হামলায় প্রাণ হারাবে নির্দোষ মানুষেরা। দেশে দেশে মসজিদে বোমা হামলা করে জঙ্গিরা বুঝিয়ে দিয়েছে ইসলামকে তারা ভালোবাসে না, তারা নির্দোষ মানুষের রক্তপানেই আগ্রহী।

এসময় ধর্ম নিয়ে অপরাজনীতি করতে ইসলামের প্রতি অতি অনুরাগের ঝাঁপি খুলে বসেছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে শফিক রেহমান সদৃশ আওয়ামী দলীয় বিপজ্জনক বুদ্ধিজীবীরা। মোল্লাদের তোল্লাই দিয়ে পাকিস্তান ডুবেছে, সেখানেও শঠতা বশতঃ গুড তালিবান ও ব্যাড তালিবান নাম দিয়ে, গুড দিয়ে ব্যাড মোকাবেলার খোঁড়া যুক্তিটি মাঠে মারা গেছে।

সুতরাং, হেফাজত ঠেকাতে ওলামা লীগ এনেছে আওয়ামী লীগ ইত্যাদি বস্তাপচা থিওরি নিয়ে যেসব মিডিওকার জাস্টিফিকেশানের ফেরিওয়ালা ঘুরছে, এরা কূপমণ্ডুক, ঘর হৈতে আঙ্গিনা বিদেশ এদের। ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতা সম্পর্কে কোনো ধারণা না নিয়েই এরা হাওয়ার বিরুদ্ধে টিনের তলোয়ার চালাচ্ছে। আওয়ামী লীগের এই নৈরাজ্য দেখে, এর পাতি বুদ্ধিজীবীদের তড়পানি ও ঔদ্ধত্য দেখে, অশালীন আচরণের কদর্য চেহারাগুলো দেখে সৃজনশীল তরুণদের মাঝে যেন শফিক রেহমানের মতো বিরোধী শিবিরে গিয়ে প্রতিশোধের স্পৃহা না জাগে। এ হবে সময় ও মেধার অপচয়।

নৈর্ব্যক্তিকভাবে সচেতন সমাজ ঐক্যবদ্ধ হলে, প্রতিটি অন্যায়ের বিরুদ্ধে অহিংস প্রতিবাদ-প্রতিরোধ চালিয়ে গেলে, উপায়হীন মানুষকে তাদের নাগরিক অধিকার সম্পর্কে সচেতন করে তুলতে পারলে, মাতৃভূমি অবশ্যই এই হিংস্র বাঘ ও হিংস্র কুমীরের ফাঁদ থেকে মুক্তির পথ খুঁজে পাবে।

শান্তি প্রিয় বাঙ্গালি যুগে যুগে মুক্তির মিছিলে আগের সারিতে থেকেছে। বাঙ্গালি দ্রোহের বারুদ ঠাসা একটি অদম্য জনগোষ্ঠী। বঙ্গবন্ধুর ভাষায়, “কেউ… দাবায়ে রাখতে পারব‍া না”।

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)