এবারের প্রস্তাবিত বাজেট মধ্য ও নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষের ওপর চাপ বাড়াবে। ব্যাংক খাতের নৈরাজ্য দূর না করে উল্টো ব্যাংকগুলোর কথায় কর্পোরেট কর কমানোর যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সব মিলিয়ে এবারের বাজেটকে নবীন বাংলাদেশের জন্য একটি প্রবীণ বাজেট বলে উল্লেখ করেছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।
শুক্রবার সকালে রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত জাতীয় বাজেট ২০১৮-১৯ সিপিডির পর্যালোচনা শীর্ষক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে একথা জানায় সিপিডি।
দেশের উঠতি অনলাইন নির্ভর নতুন ব্যবসা-উদ্যোগগুলোর সামনে কর-ভ্যাটের চ্যালেঞ্জ এবং বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রায় চলতি বছরের তুলনায় কোন পরিবর্তন আসেনি। গত ৫ বছরে প্রবৃদ্ধি হলেও আয়বৈষম্য বেড়েছে, বাজেটে উল্লেখিত মূল্যস্ফীতির লক্ষ্য ধরে রাখা কঠিন বলেও জানায় সংগঠনটি।
সব মিলিয়ে এই বাজেট নির্বাচনমুখী স্থিতাবস্থার বাজেট মন্তব্য করে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন,“নবীন বাংলাদেশের জন্য একটি প্রবীণ বাজেট তৈরি করা হয়েছে।”
সিপিডির এই ফেলো বলেন: প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতির লক্ষমাত্রা ধরে রাখা কঠিন হবে, রাজস্ব লক্ষ্য পূরণে করের বোঝা বাড়বে।
তিনি বলেন: নতুন অর্থবছরের বাজেটে করপোরেট কর কমানো হয়েছে। এক্ষেত্রে মালিকপক্ষেরই বেশি লাভ হবে। নৈরাজ্য বন্ধ না করে ব্যাংক ব্যবসায়ীদের চাপে কর্পোরেট করহার কমানোর সিদ্ধান্ত অনিয়ম উসকে দেবে। গেল পাঁচ বছরে ভালো প্রবৃদ্ধি বাড়লেও আয়ের বৈষম্য বেড়েছে। গরিব মানুষের সঞ্চয় করার ক্ষমতা কমেছে। কেন এ কর কমানো হয়েছে তার পেছনে যৌক্তিক ও প্রশাসনিক কোনো কারণ দেখছি না। ব্যাংকিং খাতে নৈরাজ্যের মধ্যে এ ধরনের করপোরেট কর ছাড় দেয়া ঠিক হয়নি।
সিপিডি’র বাজেট পর্যালোচনা তুলে ধরে ড. দেবপ্রিয় বলেন: বাজেটে সামগ্রিকভাবে গরিব ও উচ্চবিত্তকে বেশি মূল্যায়ন করা হয়েছে। আর মধ্যবিত্তদের মূল্যায়ন তেমন নেই। মধ্যবিত্ত শ্রেণীর কণ্ঠস্বর না থাকায় বিকাশমান অর্থনীতিতে তাদের মূল্যায়ন কম হচ্ছে।
ব্যক্তি করের বিষয়ে প্রত্যাশা পূরণ হয়নি জানিয়ে বলেন: বাজেটে ব্যক্তি করের আয়সীমা আড়াই লাখ টাকার কথা বলা হয়েছে। তবে সিপিডি বাজেট পর্যালোচনায় বলেছে, এই করের আয়সীমা ৩ লাখ টাকা হওয়া প্রয়োজন।
সিপিডির পক্ষ থেকে বলা হয়, সরকারের বড় প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি খুব ধীর গতিতে চলছে। পদ্মা সেতুসহ বড় প্রকল্পগুলোর গতি কম। এসব প্রকল্প দ্রুত শেষ করতে হবে। তা না হলে সরকারের ব্যয় বাড়বে। জটিলতা তৈরি হবে।
বাজেটের এসব দিকের সমালোনার পাশাপাশি কয়েকটি ইতিবাচক দিক তুলে ধরে বাজেট পর্যালোচনায় সিপিডির আরেকজন ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন: প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবায়িত হলে সামাজিক নিরাপত্তাখাতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। কেননা সরকার এই লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এসব প্রকল্পের মাধ্যমে জনসন্তুষ্টির চেষ্টা করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।
সংবাদ সম্মেলনেরর সমাপ্তি টানার আগে ড. দেবপ্রিয় বলেন: বাজেট বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ‘বাজেট পরিকল্পনা’ জরুরি। সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ না করা হলে বাজেট বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। একইসঙ্গে বাজেটের অর্থ খরচের পর এর একটি মূল্যায়ন করা প্রয়োজন। অর্থ যথাযথ প্রক্রিয়ায় খরচ হলো কি-না সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।