দেশের শীর্ষস্থানীয় সাংবাদিক ও উপস্থাপকদের একজন নবনীতা চৌধুরী। সংবাদভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল ডিবিসি নিউজে সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি রাজনৈতিক টকশো ‘রাজকাহন’-এর সঞ্চালক হিসেবে দেখা যায় তাকে। তথ্যভিত্তিক আলোচনা ও নির্ভীক প্রশ্নবাণে সরকার ও রাজনৈতিক নেতাদের ঘায়েল করে সমাদৃত তিনি। জনপ্রিয় এই গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব এবার হাজির হলেন হাছন রাজার গান নিয়ে।
ঈদ উপলক্ষে জিপি মিউজিকে প্রকাশ পেয়েছে নবনীতা চৌধুরীর গাওয়া গান ‘আহারে সোনালি বন্ধু’। মরমী কবি ও বাউল শিল্পী হাছন রাজার এই গানটির সঙ্গীতায়োজন করেছেন লাবিক কামাল গৌরব। অডিও-ভিডিও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জি-সিরিজের ব্যানারে শিগগিরই নয়টি গান নিয়ে ‘আহারে সোনালি বন্ধু’ অ্যালবাম বাজারে আসছে বলে জানা গেছে।
এ প্রসঙ্গে নবনীতা চৌধুরী জানান, তিনি ও তার জীবনসঙ্গী লাবিক কামাল গৌরবের বন্ধুত্ব, প্রেম, ভালবাসা, বিয়ে, সংসার সব কিছুর সূচনা গান দিয়ে। খুব ছোটবেলা থেকেই রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ ওয়াহিদুল হকের ছাত্রী ছিলেন নবনীতা। কৈশোর থেকেই লালন আর লোকগানের চর্চায় আগ্রহী হয়ে ওঠেন তিনি।
২০০৭ সালে আইয়ুব বাচ্চুর সঙ্গীতায়োজনে নবনীতার প্রথম অ্যালবাম ‘আমি যন্ত্র, তুমি যন্ত্রী’ প্রকাশ পাওয়ার সময় তিনি লন্ডনে বিবিসি রেডিওতে সাংবাদিকতা করছিলেন। সেসময় সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে লন্ডনে যান ফোক ফিউশন ব্যান্ড ‘আজব’ এর লিড ভোকালিস্ট এবং লালন চর্চায় নিবেদিত গায়ক, সঙ্গীত পরিচালক গৌরব। লালন আর লোকগানের প্রতি প্রেম আর চর্চা দিয়েই পরিচয় আর একসাথে গান গাওয়ার শুরু।
নবনীতা চৌধুরী বলেন, লন্ডনে বসবাসরত সিলেটের মানুষরা লোকগানের শিল্পীদের নানা আসরের আয়োজন করতো। সেখানে সিলেটের আঞ্চলিক গান পরিবেশন হতো। তখন থেকেই ওইসব গানের প্রতি আমার ভালবাসার সূচনা। সিলেটি গানের প্রেম, সরলতা, সুর-তাল-লয়ের দোলা বুকের ভেতর এক অন্য হাহাকার তৈরি করতো। হাছন রাজা, রাধারমনসহ সিলেটের নানা লোক কবিদের গাওয়া একটু কম চর্চিত আর অশ্রুত গান গলায় তুলে গাইতে শুরু করি।
নবনীতার পৈত্রিক ভিটে হবিগঞ্জে। কিন্তু কাজের সূত্রে সিলেটের বিভিন্ন জায়গায় যাওয়ার পরেও কিছু জনপ্রিয় গান ছাড়া সেভাবে সিলেটের গান লন্ডনে যাওয়ার আগে কখনো শোনা হয়ে ওঠেনি তার।
তিনি বলেন, সিলেটের নানা লোককবির গান গৌরবের সঙ্গে গিটার-দোতারায় তুলে মঞ্চে একসঙ্গে গাইতে আর স্টুডিওতে রেকর্ড করা শুরু করি তখন থেকেই। সিলেটের শাস্ত্রীয় সংগীত গুরু, লোকসংগীত বিশেষজ্ঞ রামকানাই দাস তখন নিউইয়র্ক প্রবাসী। তার কাছেও কয়েকদফা গ্রীষ্মের ছুটিতে গিয়ে তখন সিলেটি গানের ভাব, সুর আর লয়ের খেলা বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করি।
জানিয়ে রাখা ভালো, বছর দশেক ধরে এরকম বহু তৈরি গানের ভাণ্ডার থেকে নবনীতা-গৌরব জুটি তাদের পছন্দের ৯টি গান রাখছেন ‘আহারে সোনালি বন্ধু’ অ্যালবামে। হাছন রাজার গান ছাড়াও সেখানে রাধারমন, সীতালং শাহ, রসিকলাল দাসের গান থাকছে। থাকবে লালন সাঁই ও রবীন্দ্রনাথের গানও। এ গানগুলোকে এই জুটি তাদের ভালোবাসার গান বলে দাবী করেছেন।
২০১১ এর শেষে দেশে ফেরার পর থেকে নবনীতার সাংবাদিকতার ব্যস্ততা, নিয়মিত টকশো সঞ্চালনা, স্বামী গৌরবের ব্যবসা, বিয়ে, সংসার-সন্তান সব মিলিয়ে এই জুটির দু’জনে মিলে সেভাবে গান করা হয়ে উঠছিল না।
নবনীতা বলেন, ‘এখন তো শুধু গান ছাড়লেই হয় না, ইন্টারনেটে সেটা দর্শক-শ্রোতার কাছে কীভাবে পৌঁছাবে সেটাও মাথায় রাখতে হয়। ভিডিও তৈরি করে ইন্টারনেটে ক্লিক করলেই শোনার ব্যবস্থা না করলেই নয়। গৌরবের সঙ্গীতায়োজনে আমার অ্যালবামের গানগুলো শ্রোতারা কীভাবে গ্রহণ করেন তা পরখ করে দেখতেই অ্যালবামের নাম যে গানটা থেকে নিয়েছি সেই টাইটেল ট্র্যাকের ভিডিও করে প্রকাশ করলাম।’
প্রকাশের পর থেকেই দারুণ সাড়া মিলছে। এখনও ইউটিউব বা এরকম ফ্রি প্লাটফর্মগুলোয় গানটি নেই। জিপি মিউজিকের ফেসবুক প্লাটফর্মে এক্সক্লুসিভলি পাওয়া যাচ্ছে নবনীতার ‘আহারে সোনালি বন্ধু’। এখন পর্যন্ত প্রায় দুই লাখ মানুষ গানটি দেখেছেন। শেয়ারও হচ্ছে। যারা গানটি দেখছেন প্রশংসাসূচক মন্তব্য করছেন। নবনীতা বলছেন, মানুষের ভালবাসায় অভিভূত, অনুপ্রাণিত তারা দু’জন।
নবনীতার পরিকল্পনা এখন থেকে নিয়মিত মঞ্চে এবং টেলিভিশনে সঙ্গীত পরিবেশন করা। সাংবাদিকতা পেশা হলেও গানের চর্চার নেশা তার আজীবনের। কাজেই সামনের মাস দু’য়েক অ্যালবামের কাজ শেষ করার পাশাপাশি রবি থেকে বৃহস্পতিবারের টকশো’র ব্যস্ততা ছাড়া যতটুকু গান গাওয়ার সুযোগ পাওয়া যায়, তা কাজে লাগাতে চান এই সাংবাদিক কাম কণ্ঠশিল্পী।