‘তোমারে লেগেছে এতো যে ভালো চাঁদ বুঝি তা জানে’ এবং ‘আয়নাতে ঐ মুখ দেখবে যখন’- এর মতো কালজয়ী গানের স্রষ্ঠা কে জি মোস্তফা আর নেই। রবিবার রাতে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্নাইলাইহি রাজিউন)।
তার মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান।
কে জি মোস্তফার পারিবারিক সূত্রের বরাতে জানা যায়, রবিবার (৮ মে) রাত ৮টার দিকে নিজ বাসায় অসুস্থবোধ করেন প্রখ্যাত এই গীতিকার। পরে তাকে হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক জানিয়েছেন, সোমবার (৯ মে) কে জি মোস্তফার মরদেহ জাতীয় প্রেস ক্লাবে রাখা হবে। সেখানে তার জানাজা শেষে মরদেহ দাফন করা হবে।
গীতিকার হিসেবে পরিচিতি থাকলেও কে জি মোস্তফা একজন সফল সাংবাদিক এবং কলামিস্ট ছিলেন। ১৯৬০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলাভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। দৈনিক ইত্তেহাদে ১৯৫৮ সালে শিক্ষানবিশ হিসেবে সাংবাদিকতায় হাতেখড়ি। ওই বছরেই ‘দৈনিক মজলুম’-এ সহ-সম্পাদক পদে নিয়োগ পান এবং পত্রিকাটির বিলুপ্তির আগ পর্যন্ত বহাল ছিলেন। এরপর দীর্ঘ বিরতি শেষে ১৯৬৮ সালে সাপ্তাহিক জনতায় সহকারী সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন।
স্বাধীনতার পর কে জি মোস্তফা প্রথমে ‘দৈনিক গণকন্ঠ’, পরে ‘দৈনিক স্বদেশে’ চিফ রিপোর্টারের দায়িত্ব পালন করেণ। এরপর ‘দৈনিক জনপদে’ কূটনৈতিক রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেন। ঐ সময় ‘নূপুর’ নামে একটি বিনোদন মাসিকও সম্পাদনা করতেন। ১৯৭৬ সালে বিলুপ্ত সংবাদপত্রের একজন সাংবাদিক হিসেবে কে জি মুস্তফা বি.সি.এস (তথ্য) ক্যাডারভুক্ত হন এবং চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরে সহকারী সম্পাদক পদে যোগ দেন। পদোন্নতি পেয়ে প্রথমে সম্পাদক, পরে সিনিয়র সম্পাদক পদে উন্নীত হন।
১৯৬০ সাল থেকে চলচ্চিত্র, রেডিও এবং টেলিভিশনে তার লেখা প্রচুর গান প্রচারিত হয়। হাজার গানের গীতিকার কে জি মোস্তফার ফিল্মি গানগুলো খুবই জনপ্রিয়। তার গানে উপমহাদেশের প্রখ্যাত কন্ঠশিল্পী তালাত মাহমুদ এবং বাংলাদেশের খ্যাতিমান প্রায় সকল শিল্পী কণ্ঠ দেন। এক সময় তিনি নাটক ও চলচ্চিত্র পরিচালনার দিকেও ঝুঁকেছিলেন। ‘মায়ার সংসার’, ‘অধিকার’ ও ‘গলি থেকে রাজপথ’ ছবিতে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজও করেন।
কবি, গীতিকার, সাংবাদিক কে জি মোস্তফার সৃজনশীলতা সম্পর্কে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত সুধীজনদের প্রাণবন্ত আলোচনা নিয়ে জ্যোতি প্রকাশন ‘একজন কে জি মোস্তফা’ শিরোনামে একটি বই প্রকাশ করেছে।