চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

নদী সুরক্ষায় গণজাগরণ

নদীমাতৃক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের পরিচিতি হাজার বছরের। নদীকে ঘিরে এ অঞ্চলে ক্রমান্বয়ে গড়ে উঠেছে সভ্যতা। এছাড়া কৃষিপ্রধান দেশ হিসেবেও বাংলাদেশে নদীর গুরুত্ব অপরিসীম। তবে সেই গুরুত্বপূর্ণ নদীগুলোর বেশিরভাগই এখন মরণাপন্ন। মুনাফালোভীরা নানা কৌশলে নদীগুলো দখল করে ফেলছে। গলা টিপে ধরার মতো আটকে ফেলছে এর প্রবাহ। একই সঙ্গে নদীকে ব্যবহার করছে বর্জ্য ফেলার ভাগাড় হিসেবে। সব আবর্জনা যেমন ফেলা হচ্ছে নদীর তীরে তেমনি বিষাক্ত শিল্প বর্জ্য ফেলারও জায়গা নদী। শহর সংলগ্ন নদীগুলোর উপর অত্যাচারের মাত্রা আরো বেশি। এভাবেই দখল এবং দূষণের কবলে পড়ে নদী নিজের ঐতিহ্য হারাচ্ছে দিন। এর ফলে নদীমাতৃক বাংলাদেশ থেকে নদীকেন্দ্রিক ইকোসিস্টেম, নদী নির্ভর অর্থনীতি, কৃষি ও যোগাযোগও অনেকটা হারিয়ে যেতে বসেছে। দূষণ আর দখলের সব খবর না এলেও গণমাধ্যমে প্রায় প্রতিদিন এমন কিছু খবর আসে। এসব খবর দেখে এবং জনগণের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে মাঝে মধ্যে এসব স্থাপনা সরাতে উদ্যোগী হয় প্রশাসন। কিন্তু তা কোন কাজে আসে না। কয়েকদিন পরই আবারও নদীর দুই পাড়ে গড়ে উঠে শত শত অবৈধ স্থাপনা। এর কোন কোনটি শিক্ষা বা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নামে। তৈরি হয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এমনকি বসতবাড়িও। একইসঙ্গে বড় নদীগুলোর বিভিন্ন অংশে পলি জমে ছোট হয়ে যাওয়া, চরের ফলে প্রবাহ সংকুচিত, ভাটিতে বিভিন্ন জায়গায় ভাঙা, আবার অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের মাধ্যমে হুমকির মধ্যে ফেলার ঘটনাও রয়েছে। অথচ নদীও একটি জীবন্ত সত্তা। ভারতে ইতোমধ্যে গঙ্গা ও যমুনা নদীকে জীবন্ত সত্তা ঘোষণা করা হয়েছে। বাংলাদেশের নদীগুলোর জন্য এ ঘোষণার দাবি দিন দিন জোরালো হচ্ছে। তাই জীবন্ত সত্তাকে যেকোনভাবে মৃতপ্রায় করে তোলা দণ্ডনীয় অপরাধ। তবে এ অপরাধ দমনের দায়িত্ব যাদের, অনেকাংশে তাদের নেওয়া ভূমিকা অপ্রতুল। তাদেরকে এ বিষয়ে আরও উদ্যোগী হতে হবে। এসব ক্ষেত্রে বড় নদীর জন্য পরিকল্পিত ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে হবে। এছাড়া নদী সুরক্ষায় গণজাগরণ গড়ে তুলতে হবে বলে আমরা মনে করি। পরিবেশ এবং অর্থনীতি উভয় ক্ষেত্রেই নদীর যে গুরুত্ব, সে সম্পর্কে মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। নিজ বাড়ি থেকে শুরু করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও নদী সম্পর্কে শিক্ষার ব্যবস্থার পাশাপাশি দখলদার ও দূষণকারীদের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে আমরা সংশ্লিষ্ট সকলকে আহ্বান জানাই।