সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’ পরিবহন শিল্পকে ধ্বংসের একটি সূক্ষ্ম নীল নকশা বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ ট্রাক-কাবার্ড ভ্যান ও পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ।
নয় দফা দাবিতে আগামীকাল ভোর ছয়টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য পণ্য পরিবহন না করার ঘোষণা দিয়েছে সংগঠনটি। নতুন আইন বাতিল করতে হবে এবং নতুন আইন সংশোধনে মালিক ও শ্রমিকদের প্রতিনিধিদের রাখাসহ নয় দফা দাবি জানান তারা।
মঙ্গলবার দুপুরে কাভার্ডভ্যান ট্রাক মালিক অ্যাসোসিয়েশনের তেজগাঁও কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এসব দাবি দেওয়া হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘সড়কে দুর্ঘটনা ও শৃঙ্খলা ফেরাতে বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ মটরযান অধ্যাদেশ-১৯৮৩ এবং মটরযান বিধিমালা-১৯৮৪ পরিবর্তন চায়। তবে এই বছরের ১ নভেম্বর থেকে কার্যকর হওয়া ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’ পরিবহন শিল্পকে ধ্বংসের একটি সূক্ষ্ম নীল নকশা। পরিবহন সংশ্লিষ্ট বিশাল জনগোষ্ঠীকে বর্তমান সরকারের মুখোমুখি দাঁড় করানোর পাঁয়তারা। যার গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি আমরা।’
কোনো মানুষ ক্রটির উর্ধে নয় জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘যান্ত্রিক যানবাহনে ক্রটি থাকতে পারে। ক্রটিকে অপরাধ হিসেবে নিয়ে বড় শাস্তি বা জরিমানা মালিক-শ্রমিকরা মেনে নিতে পারে না। বর্তমানে দেশে যে পরিমাণ যানবাহন চলাচল করে সেখানে চালকের সংখ্যা অর্ধেক। নতুন আইনে দুর্ঘটনায় জামিন অযোগ্য, ফলে চালকের সংকট আরো তীব্র হবে। তাছাড়া লাইসেন্স না থাকলে অথবা ফিটনেস ঝামেলা থাকলে জরিমানা ২৫ হাজার করা হয়েছে। যা একজন চালককে দুই মাসের বেতন দিয়ে জরিমানা পরিশোধ করতে হবে। এই ধরণের জরিমানা খুবই অসামাঞ্জস্য। তাছাড়া ফিটসেন পরীক্ষা করাতে বিআরটিএতে সময় লাগে ১৫ দিন। তাই মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মামলা করা বন্ধ করতে হবে।’
এছাড়া রুট পারমিট, ট্যাক্স টোকেন এর জরিমানা সহনশীল পর্যায় রাখারও দাবি জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।
২০১৮ সংসদে নতুন সড়ক পরিবহন আইন পাস হলেও এ বছরের ১ নভেম্বর থেকে কার্যকরের ঘোষণা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। ১৭ দিন প্রচার প্রচারণার পর সোমবার থেকে আইন প্রয়োগ শুরু করেছে পরিবহন নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বিআরটিএ।
গতকাল রাজধানীর ছয় স্পটে আটটি আদালতের মাধ্যমে ক্রুটিপূর্ণ পরিবহনগুলোকে জরিমানা করা হয়।
অভিযানের প্রথম দিনে জরিমানা করা হয় একলাখ ২১ হাজার নয়শ টাকা। আজও দ্বিতীয় দিনের মতো রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে চলছে অভিযান। অভিযানে যেসব যানবাহনের ফিটনেস, রুট পারমিট, ট্যাক্স টোকেন এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই তাদের জরিমানা করা হচ্ছে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ ট্রাক কাভার্ডভ্যান পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আহবায়ক রুস্তম আলী খান, সদস্য সচিব তাজুল ইসলাম, যুগ্ম আহবায়ক মুকবুল আহম্মেদ, যুগ্ম সদস্য সচিব তালুকদার মো. মনির।
সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ আনুষ্ঠানিকভাবে ১ নভেম্বর থেকে কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালিয়ে গত রোববার থেকে প্রয়োগ শুরু হয়েছে। এর প্রতিবাদে উত্তর ও দক্ষিণের জেলাগুলোর মধ্যে খুলনা, সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহ, নড়াইল, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর ও রাজশাহীতে বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন শ্রমিকরা।
যদিও নতুন সড়ক পরিবহন আইনের বিরোধিতা করে কেনো ধরণের ধর্মঘটের ডাক না দিতে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের প্রতি গতকাল আহ্বান জানান সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
সেসময় তিনি বলেন, “যতোই চাপ থাকুক, সড়ক পরিবহন আইন বাস্তবায়ন করা হবে। সড়কের শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার স্বার্থে আইনটি বাস্তবায়নের বিকল্প নেই।”