প্রতিশোধ নেয়ার উদ্দেশ্যে সামাজিক মাধ্যম বা অন্য উপায়ে ইন্টারনেটে ব্যক্তির নগ্ন ভিডিও বা ছবি ছড়িয়ে দেয়ার ভয়াবহ কাজটি মাঝে মাঝেই ঘটতে দেখা যায়। এবার এমনই একটি ঘটনায় ভুক্তভোগী ১৪ বছর বয়সী এক কিশোরী মামলা করেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের বিরুদ্ধে।
ফেসবুকে বারবার পোস্টের মাধ্যমে তার কিছু নগ্ন ছবি ছড়িয়ে পড়ায় উত্তর আয়ারল্যান্ডের বেলফাস্ট আদালতে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মামলা ঠুকেছে সেই কিশোরী। এর ফলে ফেসবুকের মাধ্যমে এ ধরণের ঘটনাসহ অন্যান্য সাইবার নির্যাতনের শিকার অন্য ভুক্তভোগীরা মামলা করতে উৎসাহী হবে বলে মনে করছেন এ ধরণের সমস্যা নিয়ে কাজ করা আইনজীবীরা।
ছবিগুলো জোর করে তোলা হয়েছিল বলে জানায় মেয়েটির পরিবার। এরপর বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট থেকে বারবার ছবিগুলো পোস্ট করার পর ফেসবুকে রিপোর্ট করে প্রতিবার ছবিগুলো সরানো হলেও সেগুলো পুরোপুরি ব্লক করেনি ফেসবুক। এজন্যই মূলত মামলা করা হয়েছে।
গত সপ্তাহে ফেসবুক অভিযোগটি বাতিল করার আবেদন জানালে হাইকোর্টের এক বিচারক আবেদনটি খারিজ করেন। ইংরেজি নববর্ষের দিন মামলার শুনানি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
‘রিভেঞ্জ পর্নোগ্রাফি’ নামের এই কাজটি একজন মানুষকে ব্যক্তিগত ও সামাজিকভাবে ভয়াবহ ক্ষতির মুখে ঠেলে দিলেও বারবার এ ধরণের ঘটনা ঘটছে।
ছবি বা ভিডিও প্রকাশ হওয়ার পর এক পর্যায়ে তা সরিয়ে নেয়া হলেও পোস্ট হওয়ার আগে থেকে তা ঠেকানোর জন্য এখনো কোনো ব্যবস্থা নেয় না সামাজিক মাধ্যমগুলো। যার ফলে প্রতিশোধমূলক এসব পর্নোগ্রাফি থামছে না।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই মামলাটি পুরো প্রযুক্তি বিশ্বকেই একটা বড় ধাক্কা দিয়েছে। এর ফলে সামাজিক মাধ্যমগুলো নগ্ন ও খোলামেলা কন্টেন্ট প্রকাশের ক্ষেত্রে তাদের নিজ নিজ ব্যবস্থা নিয়ে আরও সচেতন হবে বলে আশা করছেন তারা।
তবে ভবিষ্যৎ পরিবর্তনের আগে বর্তমান একটা ধাক্কার সম্ভাবনাও করছেন বিশেষজ্ঞরা। কিশোরীর দায়ের করা মামলাটি থেকে সাহস নিয়ে ইতোমধ্যে বিশ্বজুড়ে সাইবার পর্নোগ্রাফির শিকার আরও অনেকেই আইনি সাহায্য নেয়ার ব্যাপারে আইনজীবীদের দারস্থ হওয়া শুরু করেছেন।
গণমাধ্যম বিষয়ক আইনজীবী এবং জনসনস ল’ ফার্মের সিনিয়র অংশীদার পল টুইড গার্ডিয়ানকে জানান, ‘এ ধরণের একটি মামলা ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমের বিরুদ্ধে আরও অসংখ্য নতুন মামলা দায়েরের পথ খুলে দেয়। প্রতিদিন বহু মানুষ আমাদের কল করে এ ব্যাপারে তথ্য জানতে চাইছেন। এদের সংখ্যা বাড়ছেই।’
সামাজিক মাধ্যমগুলোর বর্তমান চরিত্র নিয়ে এগিয়ে চলার পথে এটি অনেক বড় এবং বাস্তব একটা সমস্যা বলে মনে করছেন টুইড।