মহাবিশ্বের উৎপত্তি ও ইতিহাসের খোঁজ করতে গিয়ে এবার নক্ষত্রের বয়সকে ব্যবহার করলেন বিজ্ঞানীরা। শুরু করলেন আমাদের ছায়াপথ মিল্কিওয়ে দিয়ে। তাদের এই গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, ছায়াপথটির শুরু হয়েছিলো মাঝখান থেকে। পরে তা ছড়িয়ে পড়েছে বাইরের দিকে।
মহাকাশ বিজ্ঞানীরা মিল্কিওয়ের ৭০ হাজার নক্ষত্রের বয়স নির্ণয় করে বসিয়েছেন এই ছায়াপথের মানচিত্রে। বয়সের হিসাব মানচিত্রে বসানোর পর দেখা যায়, চক্রাকার মিল্কিওয়ের কেন্দ্রের কাছে পুরোনো তারারই আধিক্য বেশি। এরপর যতো বাইরের দিকে যাওয়া যায়, ততোই কমবয়সী নক্ষত্রের দেখা মেলে।
এর আগে মিল্কিওয়ের উৎপত্তি ও বিকাশ সম্পর্কে এমনটাই ধারণা করা হলেও এই গবেষণার ফলাফলের মধ্য দিয়ে তা প্রমাণিত হলো।
ফ্লোরিডার আমেরিকান অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির ২২৭তম সভায় নক্ষত্রের বয়স সংবলিত মিল্কিওয়ের নতুন মানচিত্রটি উপস্থাপন করা হয়। এ ধরণের মানচিত্রগুলোর মধ্যেই এটিই সবচেয়ে বড়।
গবেষণা দলের প্রধান মেলিসা নেস বিবিসিকে জানান, ‘নক্ষত্রগুলোর বয়স পুরো ছায়াপথে বসিয়ে অভূতপূর্ব পরিমাণে তথ্য ব্যবহার করে আমরা মানচিত্রটিতে দেখিয়েছি ছায়াপথটি কীভাবে তৈরি হয়েছে। আমরা শুধু ছায়াপথের সমতলের নক্ষত্রগুলোরই বয়স বসাইনি, সমতলের ওপরে-নিচে সরে যাওয়া নক্ষত্রগুলোও বিবেচনা করেছি।’
প্রতিটি নক্ষত্রের বয়স হিসেব করতে গিয়ে জার্মানির ম্যাক্স প্ল্যাংক ইনস্টিটিউট ফর অ্যাস্ট্রোনমির মেলিসা নেস এবং তার সহকর্মীদের দু’টো টেলিস্কোপ থেকে পাওয়া তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করতে হয়েছে। প্রথমে তারা পৃথিবীভিত্তিক অ্যাপোজি প্রজেক্টের সাহায্যে তারাগুলো থেকে আসা তরঙ্গদৈর্ঘ্য পরীক্ষা করেন। কিন্তু সেখান থেকে তারা শুধু তারাগুলোর রাসায়নিক গঠন সম্পর্কে জানতে পারছিলেন, তাদের বয়স সম্পর্কে নয়।
তাই গবেষকদের দলটি সেসব নক্ষত্র নিয়ে কাজ শুরু করলেন যেগুলো অ্যাপোজি প্রজেক্টের পাশাপাশি মহাকাশে অবস্থিত কেপলার স্যাটেলাইট থেকেও পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। কেপলার টেলিস্কোপ পুরো মিল্কিওয়ের অল্প কিছু তারা থেকে লম্বা সময় ধরে তথ্য সংগ্রহ করে আসছে, যেখান থেকে তারাগুলোর ভর হিসেব করা সম্ভব।
নক্ষত্রের ভর জানলে তার বয়স বের করা সম্ভব। তাই ড. নেসের দল ওই নক্ষত্রগুলোর ভর এবং বয়সের সঙ্গে তরঙ্গদৈর্ঘ্যের বর্ণালীর তথ্য মিলিয়ে মানচিত্রটি দাঁড়া করান। নতুন এই মানচিত্রের মডেলটি ব্যবহার করে বাকি নক্ষত্র, যেগুলো কেপলার স্যাটেলাইটের পর্যবেক্ষণের আওতায় নেই, শুধু বর্ণালী থেকে পাওয়া তথ্য নিয়েই সেগুলোর বয়স হিসেব করা যাবে বলে জানান গবেষকরা।