উইকেটের পেছনে এক জোড়া তীক্ষ্ণ চোখ খুব ধীরস্থির ভাবে সবকিছুর খেয়াল রাখছে। নিজের উইকেট-কিপিংয়ের পাশাপাশি সতর্ক দৃষ্টি রাখছে ব্যাটসম্যানের শরীরী ভাষাতেও। কিসে সেই ব্যাটসম্যানের অস্বস্তি তা লক্ষ্যে রেখে পরিবর্তন আনছে বোলিংয়ে, তাতে ঘটছে একের পর এক বাজিমাত!
ক্যারিয়ারজুড়ে এমন ক্ষুরধার মস্তিষ্ক দিয়ে ক্রিকেটবিশ্বকে বুদ করে রেখেছিলেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। ক্রিকেটের আবেগকে পেছনে ঠেলে দাবার চালের মতো তার একেকটি পদক্ষেপ এখন কেবল আইপিএলেই দেখা সম্ভব। শনিবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলে দিয়েছেন ভারতকে বিশ্বকাপ জেতানো সাবেক অধিনায়ক।
ধোনির বিদায়ের পর তার প্রতি ভালোবাসা আর শ্রদ্ধা উগড়ে পড়ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। তার প্রতি সম্মান আর আবেগি বার্তা দিতে কম যাননি চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তান থেকে বিশ্বের নানা প্রান্তের ক্রিকেটাররাও।
শনিবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজের বিদায় নিয়ে ধোনি লিখেছেন, ‘ধন্যবাদ, ধন্যবাদ আপনাদের ভালোবাসা ও সমর্থনের জন্য। ১৯২৯ ঘণ্টা (৭.২৯ মিনিট) থেকে ধরে নেবেন আমি অবসরে।’
এমন ঘোষণা আসার পরপরই ধোনিকে ঘিরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যস্ত রেখেছিলেন বর্তমান-সাবেক ক্রিকেটাররা। তালিকায় আছেন বাংলাদেশি ক্রিকেটাররাও।
সাকিব আল হাসান ফেসবুক পেজে ধোনির বিদায় নিয়ে লিখেছেন, ‘বিদায় মহেন্দ্র সিং ধোনি। খেলার মাঠে আপনি ছিলেন নিঃসন্দেহে একজন দুর্দান্ত খেলোয়াড় এবং শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অসাধারণ পারফরম্যান্স দিয়ে আপনি অনুপ্রাণিত করেছেন লাখো মানুষকে। আপনার সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য রইল শুভ কামনা।’
ধোনির হাত থেকেই ভারতের নেতৃত্বের ব্যাটন পেয়েছেন বিরাট কোহলি। এরপর যতদিন ক্রিকেট খেলেছেন ধোনি, কোহলি অধিনায়ক হলেও তার অনেক সিদ্ধান্তের পেছনে পরোক্ষভাবে অবদান থাকত ধোনির। সাবেক অধিনায়ককে নিয়ে লিখতে বেশ আবেগি হয়েছেন ভারত অধিনায়ক, ‘একদিন সবাইকেই থামতে হয়। কিন্তু যখন খুব কাছের কেউ এমন সিদ্ধান্ত নেয়, তখন আবেগ অন্যসময়ের চেয়ে বেশিই থাকে। আপনি দেশের জন্য নিজের সেরাটুকু দিয়েছেন, সর্বদা আমাদের হৃদয়ে আপনার স্থান।’
পরে কোহলি আবারও লিখেছেন ধোনিকে নিয়ে, ‘কিন্তু যে শ্রদ্ধা আর উষ্ণতা আপনার কাছ থেকে পেয়েছি, তা সবসময় আমার কাছেই থাকবে। বিশ্ব দেখেছে আপনার অর্জন আর আমি দেখেছি আপনাকে। সবকিছুর জন্য আপনাকে ধন্যবাদ অধিনায়ক। আপনাকে অভিনন্দন।’
কিংবদন্তি শচীন টেন্ডুলকারের বিশ্বকাপজয়ের আক্ষেপ পূর্ণ হয়েছিল ধোনির অধিনায়কত্বেই। ২০১১ বিশ্বকাপের সেই মুহূর্তের কথা নিয়ে কিংবদন্তি সাবেক ব্যাটসম্যান লিখেছেন, ‘ভারতীয় ক্রিকেটে তোমার অবদান অসীম। দুজনে একসঙ্গে বিশ্বকাপজয় আমার জীবনের সেরা মুহূর্ত। জীবনের দ্বিতীয় ইনিংসের জন্য তোমার আর তোমার পরিবারের জন্য শুভ কামনা।’
ভারতের ২০১১ বিশকাপ জয়ের পেছনে ধোনির ক্ষুরধার ক্রিকেটীয় মস্তিষ্কেরই অবদান দেখছেন ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক মাইকেল ভন, ‘২০১১ বিশ্বকাপ ছিল শচীনের বিদায়ী উপহার। কিন্তু তার পেছনে মূল অবদান ছিল ধোনির মগজের। কী অসাধারণ এক ক্যারিয়ার, বিতর্ক করতে পারেন, তবে সে সাদা বলের ক্রিকেটে সর্বকালের সেরা অধিনায়ক। অসাধারণ সব স্মৃতিগুলোর জন্য চিয়ার্স এমএস।’
ইংলিশদের আরেক সাবেক অধিনায়ক কেভিন পিটারসেন লিখেছেন, ‘অবসরপ্রাপ্তদের ক্লাবে তোমাকে স্বাগতম, এমএসডি। কী জাদুকরী এক ক্যারিয়ার।’
পাকিস্তান থেকে শহীদ আফ্রিদি লিখেছেন, ‘ভারতের অন্যতম কিংবদন্তি ক্রিকেটার এবং সেরা একজন অধিনায়ক। দারুণ এক ক্যারিয়ার শেষের জন্য তোমাকে অভিনন্দন।’