বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘আম্পান’ আরও শক্তিশালী হয়ে ‘অতি প্রবল’ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। তাই আগাম সতর্কতা হিসেবে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত ঘোষণা করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। ধারণা করা হচ্ছে বুধবার সকাল থেকে সন্ধ্যার মধ্যে ঝড়টি দেশের উপকূলীয় অঞ্চল অতিক্রম করবে।
ঘুর্ণিঝড় মোকাবেলায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এবং স্থানীয় প্রশাসনকে সার্বিক প্রস্তুতির নির্দেশ দিয়েছে সরকার।
আবহাওয়া অধিদপ্তর তাদের সর্বশেষ বুলেটিনে বলেছে, ‘ঝড়ের অবস্থান ও গতিপ্রকৃতি অনুযায়ী ‘অতি প্রবল’ ঘূর্ণিঝড়টি বিধ্বংসী ক্ষমতা নিয়ে ভারত সীমান্তবর্তী বাংলাদেশের উপকূলের দিকেই ধেয়ে আসছে। দুই দেশেই বড় ধরণের আঘাত হানতে পারে। যা করোনা ভাইরাস মহামারির মধ্যেই তৈরি হয়েছে আরেক দুর্যোগের আশঙ্কা।’
এ কারণে সম্ভাব্য আক্রান্ত এলাকা থেকে সবাইকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া শুরু করেছে স্থানীয় প্রশাসন।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, অমাবস্যার প্রভাবে ঘূর্ণিঝড়টি বাড়তি শক্তি সঞ্চয় করতে পারে। বিশেষত দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল এবং চট্টগ্রামের মধ্য উপকূলীয় অঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে বেশি প্লাবিত হতে পারে।
এরই মধ্যে ‘আম্পান’কে শক্তিশালী ‘ক্যাটাগরি-৪’ ঘুর্ণিঝড়ের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। এই ক্যাটাগরির ঝড় পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে আটলান্টিক হারিকেন বা সুপার টাইফুন হিসেবে পরিচিত। এই ঝড় ব্যাপক ক্ষতির পাশাপাশি তা ৩০ ফুট পর্যন্ত উচ্চ জলোচ্ছ্বাস সৃষ্টি করতে পারে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চলের ১৯টি জেলার প্রশাসনকে জনগণের জীবন বাঁচাতে সার্বিক প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দিয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে ১৩ হাজারের বেশি আশ্রয়কেন্দ্র।
রাতে আবহাওয়া অধিদপ্তরের ২০ নম্বর বুলেটিনে বলা হয়েছে, ‘‘পশ্চিমমধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত সুপার সাইক্লোন ’আম্পান’ উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে বর্তমানে একই এলাকায় (১৪.৮ক্ক উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৬.৪ক্ক পূর্ব দ্রাঘিমাংশ) অবস্থান করছে। এটি চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১০২০ কিঃ মিঃ দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৬০ কিঃ মিঃ দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৯২০ কিঃ মিঃ দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৯১০ কিঃ মিঃ দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তর দিকে অগ্রসর হতে পারে এবং পরবর্তীতে দিক পরিবর্তন করে উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে খুলনা ও চট্টগ্রামের মধ্যবর্তী অঞ্চল দিয়ে ১৯ মে ২০২০ শেষরাত হতে ২০ মে ২০২০ বিকাল/সন্ধ্যার মধ্যে বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
সুপার সাইক্লোন কেন্দ্রের ৯০ কিঃ মিঃ এর মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ২২৫ কিঃ মিঃ যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ২৪৫ কিঃ মিঃ পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সুপার ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটে সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে।’’
এতে আরও বলা হয়, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহও একই বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
এছাড়া চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহকেও একই বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
ঘূর্ণিঝড়টি অতিক্রমের সময় সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম জেলায় ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণসহ
ঘণ্টায় ১৪০-১৬০ কিঃ মিঃ বেগে দম্কা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।