রাজধানীতে দৈনিন্দিন জীবনে অফিস, স্কুল-কলেজ ও নানা কাজে আসা-যাওয়ার জন্য প্রতিদিনই কোনো না কোনা গণপরিবহনে উঠতে হয়। বেশ কয়েকদিন ধরে চলতি পথে যে কথা সবচেয়ে বেশি কানে ভেসে আসে, তা হচ্ছে ভিআইপি সিগন্যাল। এটি নতুন কোনো দুর্ভোগের নাম না হলেও এটি এখন অসহনীয় পর্যায় চলে গেছে। প্রতিদিন লাখো মানুষ ঢাকা শহরে নিজ গন্তব্যে যাওয়ার জন্য রাস্তায় নেমে আসে। একরকম যুদ্ধ করে গণপরিবহনে উঠতে হয় সবাইকে। সেই যুদ্ধকে আরও ভয়াবহ করে তোলে যখন ভাগ্যে মেলে ভিআইপি সিগন্যাল।
ভিআইপিদের যাতায়াতের সময়টা যেন রাজধানীবাসীর জন্য এক অভিশাপের নাম। এই ধরণের সিগন্যালে পড়ে প্রতিদিন হাজারো মানুষ তাদের শিডিউল মিস করে, দেরিতে অফিসে আসায় বেতন কাটা যায়, অনেকে চাকরির প্রথম ইন্টারভিউ মিস করে, শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার হলে সময়মতো পৌঁছাতে পারে না।
রাজধানীতে রাস্তার ধারাবাহিক মেরামত ও সম্প্রতি মেট্রোরেলের কাজের সঙ্গে ভিআইপি সিগন্যাল কতটা ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি করেছে তা মিরপুর, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুরবাসীরা প্রতিদিন হারে হারে বুঝতে পারছেন।
মিরপুর থেকে ফার্মগেট সকালে যেতে তাদের প্রায় এক থেকে দেড় ঘণ্টা গুনতে হয়, যেখানে স্বাভাবিকভাবে ফার্মগেট যেতে লাগে ১৫ মিনিট। চলতি পথে সিগন্যালে বসে থাকা সাধারণ যাত্রীদের দুর্ভোগ এবং এর থেকে বাঁচার নানা ধরণের পরামর্শ শুনতে পাই প্রতিদিন। যাত্রীদের বেশিরভাগদেরই দাবি, ভিআইপিদের দেশের গুরুত্বপূর্ণ কাজে বের হতে হচ্ছে, সেক্ষেত্রে তারা যেন রাস্তাকে বাদ দিয়ে হেলিকপ্টারকে বেছে নেন। তাহলে কিছুটা হলেও এই ভয়াবহ সিগন্যালের হাত থেকে বাঁচা যায়। কেউ কেউ বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীসহ ভিআইপিরা বের হওয়ার আধা ঘণ্টা নয়, ১০ থেকে ১৫ মিনিট আগে সিগন্যাল বন্ধ হলে কষ্ট কিছুটা কম হতে পারে। কেউ পুলিশকেও দায়ী করছেন। কেউ কেউ ভাবছেন সংবাদ সম্মেলন করার কথা। অনেকে আবার ফেসবুকে এ নিয়ে নিজের মতামত জানাতে ভয় পান, যদি তথ্য-প্রযুক্তি আইনে মামলা খেয়ে যান। সব দিকে যেন সাধারণ যাত্রীরা ক্ষোভের মধ্যেও মুখ চেপে বসে আছেন।
বিভিন্ন গণমাধ্যমের জরিপে দেখা যাচ্ছে, এই যানজটের কারণে ঢাকায় প্রতিদিন ৫০ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়। যা আর্থিক ক্ষতি হিসেবে বছরে প্রায় ৩৭ হাজার কোটি টাকা। স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে অাসা বাংলাদেশে ভিআইপিদের ভাবতে হবে যানজট নগরী ঢাকাকে এই সিগন্যালের হাত থেকে কিভাবে বাঁচানো যায়? কিভাবে সাধারণ যাত্রীদের তাদের কর্মঘন্টা ফিরিয়ে দেয়া যায়। বাস্তবে করা হয়তো কঠিন সবাই যদি বিষয়টি নিয়ে ভাবেন তাহলে হয়তো তেমন কোনো কঠিন কাজ নয়। যে দেশে জনগণের টাকায় স্বপ্নের পদ্মা সেতু হতে পারে, তাহলে এটি আর তেমন কী কাজ!
ঢাকার যানজট কমানোর জন্য ভিআইপিদের জন্য আলাদা লেন করার প্রস্তাব এরইমধ্যে মন্ত্রীপরিষদ বিভাগে গিয়েছে। তবে ভিআইপি লেন প্রস্তাবে সুশীল সমাজের অনেকেই সমালোচনা করেছেন। কিন্তু সাধারণ জনগণের এতো কিছু বোঝার দরকার নেই বলে মনে হয়, তারা শুধু চান সঠিক সময়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে ঠিক সময়ে নিজ কর্মক্ষেত্রে পৌঁছাতে আবার ফিরে আসতে। দেশের নাগরিক হিসেবে তাদের এই চাওয়াটুকু গণতান্ত্রিক অধিকার, এবং তা পূরণ করার জন্য সরকারের খুব জরুরি ভিত্তিতে কাজ করা উচিত।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)।