চট্টগ্রাম থেকে: অস্ট্রেলিয়া সিরিজের আগে ক্রিকেটারদের পরখ করে নিতেই তিনদিনের অনুশীলন ম্যাচ। প্রথম দিন আগুনঝরানো বোলিংয়ে স্পট লাইটে ছিলেন পেসার শফিউল ইসলাম। বুধবার দ্বিতীয় দিনে ব্যাটিংয়ে নজর কাড়লেন মুমিনুল হক, নাসির হোসেন ও তানবীর হায়দার। আর বোলিংয়ে নায়ক রুবেল হোসেন ও সাকলাইন সজীব।
জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে মুশফিকদের করা ১৪০ রানের জবাবে তামিমদের ইনিংস শেষ হয় ২৮৩ রানে। ফিফটি পান মুমিনুল, নাসির ও তানবীর। তিনটি করে উইকেট নিয়েছেন রুবেল ও সাকলাইন।
দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমেও শুরুটা ভাল হয়নি মুশফিকদের। প্রথম ইনিংসের মতো এবারও ব্যর্থ ইমরুল কায়েস (৮)। মোস্তাফিজকে ব্যাক টু ব্যাক চার মেরে শুরু করলেও ফিরে যান তৃতীয় বলেই। দিন শেষে এক উইকেটে ২৪ রান তাদের। সৌম্য সরকার ৯ ও প্রথম ইনিংসে ৫৩ রান করা নাজমুল হোসেন শান্ত ৭ রানে অপরাজিত।
বিকেলে বৃষ্টি শুরু হলে ৩০ মিনিট আগেই শেষ হয় দিনের খেলা। দুপুরে একবার বৃষ্টি হলেও লাঞ্চবিরতি থাকায় খেলায় বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি।
সকালে আগের দিনের এক উইকেট ৪৯ রানে ব্যাটিং শুরু করেন তামিমরা। ২৩ রানে অপরাজিত থাকা তামিম এদিন যোগ করতে পেরেছেন মাত্র ৬ রান। ২৯ রানের মাথায় রান আউটের শিকার হন এই বাঁহাতি ওপেনার।
স্পিনারের ঘূর্ণির মুখে অনসাইডে পুশ করে সিঙ্গেল নিতে চেয়েছিলেন মুমিনুল। তামিমও তাতে সাড়া দেন। কিন্তু অপর প্রান্তে ব্যাট রাখার আগেই মাহমুদউল্লাহর থ্রো সরাসরি স্টাম্পে আঘাত হানে। রান আউট হয়ে রাগে-ক্ষোভে ড্রেসিংরুমের দরজার গ্লাস ভেঙেছেন তামিম। ম্যাচের দ্বিতীয় দিন উইকেট যেমন আচরণ করেছে, তাতে বড় ইনিংস খেলতেই পারতেন। ধীরস্থির ব্যাটিং দেখে মনে হচ্ছিল তেমন কিছুই করতে চেয়েছিলেন ঘরের ছেলে তামিম।
তামিমের বিদায়ের পর সাব্বির রহমান ভাল শুরু পান। তার ‘ট্রেডমার্ক’ শট ছিল কয়েকটি। কিন্তু ১০ রান করার পর তাইজুল ইসলামের প্রথম বলেই বোল্ড হন এই ডানহাতি। আর্ম বলের মুখে ব্যাট পাতলেও কানায় লেগে লেগস্টাম্প উপড়ে যায়।
মুমিনুলের সঙ্গে নাসির হোসেন জুটি বেধে তামিমের দলকে লিড এনে দেন। সেঞ্চুরির আশা জাগিয়ে মুমিনুল ফিরেছেন ৭৩ রানে। অসাধারণ ব্যাটিং করতে থাকা এই বাঁহাতি আউট হয়েছেন সাকলাইন সজীবের সাধারণ এক ডেলিভারিতে। সুইপ করতে গিয়ে ব্যাটের উপরের অংশে লেগে বল উঠে যায় ফরোয়ার্ড শর্ট লেগে দাঁড়ানো ফিল্ডারের হাতে। থামে ৫ চারের ইনিংস।
মুমিনুলকে আটকে রাখতে চেষ্টার কমতি ছিল না মুশফিকের। বারবার ফিল্ডার পরিবর্তন করে তার শট খেলার জায়গাগুলো আটকে দিতে চেয়েছেন। সেই ফাঁদের ফাঁক গলেই মুমিনুল খেললেন দর্শনীয় ইনিংসটি। আগের রাতে বৃষ্টি হওয়ায় আউটফিল্ড ছিল মন্থর। তাতে সহজেই যেগুলো চার হতে পারত, সেগুলোতে দুই রান নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হল তাকে। কয়েকটি কাভার ড্রাইভ, পুল শট নিমেষেই বাউন্ডারির দেখা পেতে পারত!
নাসির খেলেছেন ৬২ রানের সাবলীল এক ইনিংস। দুই বছর আগে সবশেষ টেস্ট খেলা এই অলরাউন্ডার জানান দিয়ে রাখলেন, টেস্টের জন্যও প্রস্তুত তিনি। নাসিরের ইনিংসে ছিল দর্শনীয় দুটি করে ছক্কা ও চারের মার। শুরুটা ছিল ধীরগতির। সিঙ্গেল খেলায় ছিলেন মনযোগী। থিতু হওয়ার পর দেখা দিয়েছেন অন্যরূপে। তাইজুল ইসলামের এক ওভারেই মারেন ছক্কা দুটি। প্রথমটি মিড উইকেটের উপর দিয়ে বল আছড়ে ফেলেন গ্যালারিতে। একই ওভারের শেষ বলে সোজা ব্যাটে হাঁকান। আরেকটি ছক্কা, এবার লং অফ ও লং অনের মাঝ দিয়ে বল যায় সীমানার ওপারে। এক ওভার পর তাইজুলের বলেই মাটি কামড়ানো সোজাসুজি শটে চার মেরে পূর্ণ করেন ফিফটি।
রুবেল, আল-আমিন, তাইজুল, সাঞ্জামুল কেউই থামাতে পারছিলেন না নাসিরকে; মুশফিক তখন ডাকলের অনূর্ধ্ব-১৯ দলের অফস্পিনার নাঈম হাসানকে। লেগস্টাম্পের উপর লাফিয়ে ওঠা নাঈমের একটি বল ব্যাটের কানায় লেগে চলে যায় ফরোয়ার্ড শর্ট লেগে দাঁড়ানো নুরুল হাসান সোহানের হাতে। সেঞ্চুরির আশা জাগিয়েও থেমে যান নাসির।
নাসিরের পর ফিফটি পূর্ণ করেন তানবীর হায়দারও। তাকে যোগ্য সঙ্গ দেন সাঞ্জামুল ইসলাম। তানবীর ৫১ রানে অপরাজিত থেকে যান চা বিরতিতে। বিরতির পর আর কোনও রান যোগ করতে পারেননি। রুবেলের বলে বোল্ড হন এই ডানহাতি। শেষ দিকে সাঞ্জামুল ২২ ও শফিউল ১০ রান যোগ করলে তিনশ’র কাছাকাছি সংগ্রহ গড়ে তামিমের দল।
ফিটনেসের কঠিন পরীক্ষা দিয়েছেন রুবেল হোসেন। গতি, বাউন্স, সুইং ধরে রেখে এই পেসার চার স্পেলে করেছেন ১৭ ওভার। অপর পেসার আল-আমিন যেখানে করেছন মাত্র ৮ ওভার। তারা টিম ম্যানেজমেন্টের পরীক্ষায় কত মার্কস পেলেন সেটি জানা যাবে ১৯ আগস্ট দল ঘোষণার সময়।
অস্ট্রেলিয়া সিরিজের জন্য চূড়ান্ত দল ঘোষণা হবে সেদিন। প্রথম দিন ১৭ রানে পাঁচ উইকেট নিয়ে লেটার মার্কস তুলেছেন শফিউল ইসলাম। সেই তুলনায় তাসকিন-মোস্তাফিজদের নির্বিষ মনে হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে একাদশে দুজনের বেশি পেসার থাকার সম্ভাবনা খুবই কম। দেখা যাক কাদের কপাল খোলে!