জাহালাম কাণ্ডের মত আরেকটি ঘটনা গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে। বিনা দোষে একজন মানুষকে দুই মাস কারাভোগ করতে হয়েছে। এছাড়া ভোগান্তির শিকার হতে হয়েছে ১৮ বছর। তদন্তকারী অফিসার ও আইনজীবীর গাফিলতির কারণে বাবুল শেখ নামের এক নিরীহ নির্দোষ মানুষকে জেল খাটতে হয়েছে বলে জানা গেছে।
ঘটনার শুরু ২০০১ সালের ১৫ এপ্রিল। ওই দিন নাটোর সদর উপজেলার গাঙ্গইল গ্রামে একটি মারামারির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় কাজী আবদুল মালেক বাদী হয়ে শ্রী বাবুসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে নাটোর সদর থানায় ২০০১ সালের ১৮ এপ্রিল একটি মামলা দায়ের করেন। এদের মধ্যে সিংড়া উপজেলার আচল কোট গ্রামের শ্রীদেব দাসের ছেলে শ্রী বাবুকে ৩ নম্বর আসামি করা হয়।
কিন্তু মামলার এজাহারে উল্লিখিত আসামি বাবুকে গ্রেপ্তার না করে ইয়াকুব আলীর ছেলে বাবলু শেখকে ২০০২ সালের ৭ নভেম্বর গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠায় পুলিশ। এই ভুলের বিষয়টি আদালতকে অবহিত না করে ছয় দিন পর ১৩ নভেম্বর আসামির আইনজীবী বাবু পরিচয়েই বাবলু শেখের জামিন করান। পরে ওই পরিচয়েই বাবলু শেখের বিরুদ্ধে আদালত অভিযোগ গঠন, সাক্ষ্য গ্রহণ ও আসামি পরীক্ষা করেন। যুক্তিতর্ক শেষে ২০১৬ সালের ২৩ জুন মুখ্য বিচারিক হাকিম মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান সিদ্দিকী আসামি বাবুর বিরুদ্ধে দুই বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও তিন মাসের সশ্রম কারাদণ্ডদেশ দেন। ওই দিন কাঠগড়া থেকে বাবলু শেখকে কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। পরে তিনি ২০১৬ সালের ১৬ আগস্ট আপিল করে জামিন পান।
পরবর্তীতে এ মামলা নাটোর দায়রা আদালতে গেলে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ সাইফুর রহমান সিদ্দিকের আদালতে মামলাটি বিচারের জন্য পাঠানো হয়। মামলার সাক্ষ্য প্রমাণ গ্রহণ শেষে বিচারক বাবলু শেখকে মামলা থেকে মুক্তির নির্দেশ দেন। একই সাথে মামলার তৎকালীন তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মোমিনুল ইসলামও এসআই হেলেনা পরভীনের সঠিকভাবে তদন্ত না করার অপরাধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পুলিশের আইজিপিকে নির্দেশ দেন। এরই ধারাবাহিকতায় আজ এই মামলা থেকে মুক্তি পান বাবুল শেখ।
বিনা অপরাধে বাবুল শেখের কারাভোগ নিন্দনীয় ও দুঃখজনক মনে করি আমরা। আমরা আরও আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করলাম, মামলাটি ভুল মানুষের নামেই দীর্ঘদিন পর্যন্ত আদালতে চলতে থাকলো। এটা কিভাবে সম্ভব হলো?
বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা নিয়ে মানুষের আস্থা থাকলেও সম্প্রতি কিছু ঘটনা মানুষের মনে ভিন্ন প্রশ্নের উদয় ঘটেছে। এর আগে বিনা দোষে জেল খেটেছেন জাহালাম নামের একজন নিরাপরাধ ব্যক্তি। তিনি জেল খেটেছেন দুদকের ভুলে। আর এই বাবুল শেখের কারাভোগ তার আইনজীবী ও মামলার তদন্তকারী অফিসারের দায়িত্ব পালনে গাফিলতির কারণে।
একজন নিরাপরাধ ব্যক্তিকে কেন কারাভোগ করতে হলো, এই বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া প্রয়োজন ও এর প্রতিকার নিয়ে ভাবাও জরুরি। আমরা মনে করি, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হলে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করা দরকার।