স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম একজন খ্যাতিমান রাজনীতিক, ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক। তিনি ১৯৫৫ সালে কুমিল্লা জেলার মনোহরগঞ্জ উপজেলার পোমগাঁও গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা আলহাজ্ব জুলফিকার আলী এবং মাতা আনোয়ারা বেগমের গর্বিত সন্তান তিনি। তার ছাত্রজীবন শুরু হয় পোমগাঁও সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে। তিনি পোমগাঁও উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক, নওয়াব ফয়জুন্নেছা সরকারী কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন। লন্ডনের এস্টন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একাউন্টিং এন্ড ফিন্যান্স-এ ডিপ্লোমা এবং সাউদার্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ ডিগ্রী লাভ করেন। কর্মজীবনে সফলতার সাথে বহু শিল্প-কারখানা ও ব্যাংক বীমা প্রতিষ্ঠা করেন। সত্য, নিষ্ঠা ও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ শ্রেষ্ঠ জাতি গঠনের লক্ষ্যে একটি দৈনিক পত্রিকা প্রতিষ্ঠিত করেন। মানুষের প্রতি প্রগাঢ় ভালবাসা, দারিদ্রতা দূর ও ন্যায়ভিত্তিক একটি দেশ গঠনের অবদান রাখার লক্ষ্যে ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতির সহিত প্রত্যক্ষ জড়িত ছিলেন। জাতির পিতার বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত এই মানুষটিকে লাকসাম-মনোহরগঞ্জের জনগণ ১৯৯৬, ২০০৮, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত করেন। এবার নির্বাচনের পর নবগঠিত মন্ত্রিসভায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাকে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দান করেন। বিগত সংসদ মেয়াদগুলিতে তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির সদস্য এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটিতে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বিভিন্ন সময় জাতিসংঘ, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক ও জাইকা’র বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেন। এছাড়াও সরকারী ও বেসরকারী প্রয়োজনে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, ইতালি, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, জাপান ও চীনসহ পৃথিবীর অনেক দেশ ভ্রমণ করেন। জাতীয় সমবায় দিবসে চ্যানেল আই এর বিশেষ খোলা আকাশ অনুষ্ঠানে একান্ত সাকাৎকারে কথা বলেন তিনি।
প্রশ্ন : আপনি তিনবারের এমপি। এবারই প্রথম মন্ত্রী হয়েছেন। দায়িত্ব নিয়ে আপনার মন্ত্রণালয়কে কিভাবে ঢেলে সাজিয়েছেন?
মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম এমপি: আমার মন্ত্রণালয় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়। গ্রাম থেকে নগর পর্যন্ত এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব অনেক বিস্তৃত। বাংলাদেশকে নিয়ে জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি স্বপ্ন দেখেছিলেন- সেই স্বপ্ন পূরণের জন্যে স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। সেই স্বপ্ন পূরণে এই মন্ত্রণালয়ের উপরে অনেকগুলো দায়িত্ব ন্যস্ত আছে। স্বাভাবিকভাবে সেই দায়িত্ব পালনের জন্যে আমরা অঙ্গীকারে আবদ্ধ এবং সেই আঙ্গিকে গ্রাম থেক নগর পর্যন্ত মানুষের জীবনে স্বস্তি, সুন্দর ও উন্নত জীবন যাপনের জন্যে যে পরিকল্পনা সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ আরম্ভ হয়েছে। গ্রামের সব জায়গায় পাকা রাস্তা এবং সরকারের উদ্দেশ্য হলো বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া। আর বিদ্যুৎ পৌঁছানোর প্রায় ৯৭ ভাগই হয়ে গেছে। রাস্তা ঘাটও হয়ে গেছে অনেক আর নতুন রাস্তার ক্ষেত্রে এখন আমরা টেকসই রাস্তার কথা ভাবছি। গ্রামীণ অর্থনীতি এবং কর্মসংস্থানের কথা আমরা ভাবছি। গ্রামের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নের ব্যাপারেও কাজ করছি। মানুষের কাছে বিভিন্ন সেবা পৌঁছে দেওয়া এবং ইন্টারনেট কানেকটিভিটি স্টাবলিশ করা ও ডিজিটাল সেবা মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া অর্থাৎ সামগ্রিক ব্যবস্থাপনা বহুমুখী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে নেওয়া হয়েছে। এর ফলে অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়ন হবে এবং মানুষের জীবনে স্বস্তি ফিরে আসবে। বৈষম্য এই মাত্রায় থাকবে না যে- কোন মানুষ কষ্ট পাবে আর কেউ খুব বেশি আরামে থাকবে।
প্রশ্ন : ৪৮ তম সমবায় দিবস পালিত হয়েছে। এই উপলক্ষে কি কার্যক্রম নেওয়া হয়েছে?
মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম এমপি: সমবায় ব্যবস্থা সম্পর্কে আমরা সবাই কম বেশি কিছু জানি। সবাই মিলে মিশে কাজ করলে উন্নয়নের লক্ষ্যে পৌছানো সম্ভব। অর্থাৎ সমবায়ের মাধ্যমে সকল মানুষকে উন্নয়নে অংশগ্রহণ করানো। ক্যাপিটাল ইনটেনসিভ কোন কর্মসূচী নিতে গেলে আর্থিকভাবে যারা শক্তিশালী তারা তাতে অংশ নিতে পারবেন। আর সমবায় ভিত্তিতে ক্ষুদ্র আয়ের মানুষগুলো একত্রিত হতে পারে। তারা তাদের শ্রম ও বুদ্ধি দিতে পারে। তাদের অর্থনৈতিক অবদান এক সাথে রাখতে পারে। এই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র এক সাথে করে অনেক আয় বাড়ানো সম্ভব। ব্যক্তিগতভাবে ক্ষুদ্র পুঁজির বিনিয়োগ খুব অর্থবহ হবে না এবং এ থেকে ইনকাম জেনারেট এর সুযোগ অনেক কম। তাই সমবায় ব্যবস্থাপনার প্রতি বঙ্গবন্ধু তার জীবদ্দশায় অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছেন। কিন্তু সমবায় ব্যবস্থাপনাকে খুব ভালভাবে লালন করা হয়নি। আজকে আমি সমসাময়িক পৃথিবীতে উন্নত দেশগুলোতেও দেখি- গ্রামীণ মানুষের আর্থিক অবস্থার উন্নতি ছাড়াও সমবায় ভিত্তিক যখন কাজ করতে যাবেন তখন সবার মধ্যে কনজিউনাল অথবা নিজেদের মধ্যে সত্ত্বা গড়ে উঠবে এবং পরস্পর পরস্পরের ভিতরে কানেকটিভিটি গড়ে উঠবে। সোশ্যাল অনেক সমস্যাও সেখানে সলভ হয়। উন্নত বিশ্বের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও আমরা গিয়ে দেখেছি তারা সমবায়কে অনেক গুরুত্ব দিয়েছে। আমাদের বাংলাদেশের সমবায় ব্যবস্থাপনার প্রতি সারা দুনিয়ার নজর ছিল। এই দর্শনে আমি সাউথ কোরিয়ার কথা এক্মামপল দিয়ে বলতে পারি- দে আর কেম ওভার হেয়ার টু লার্ন। সেখানে তারা এর সাথে আরও কিছু ইনোভেটিভ আইডিয়া কর্পোরেট করে তারা ইমপ্লিমেন্ট করেছে এবং সেখানে তাই গ্রামের আর্থিক অবস্থার প্রচুর পরিবর্তন আনা সম্ভব হয়েছে। রিমোট এরিয়াতে অথবা বটম লেভেলে আর্থিক পরিবর্তনে সেখানে সমবায় ব্যবস্থা কাজ করেছে। আমাদের দেশে সমবায়ের পুনঃজাগরণের চেষ্টা করছি এবং বঙ্গবন্ধুর সমবায় দর্শনকে মানুষের কাছে নিয়ে যাওয়া এবং তাকে কার্যকর করার চেষ্টা করছি। সমবায় ব্যবস্থাপনা আমাদের দেশে ছিলো এবং আছে। এটাকে এখন ইফেক্টিভ এবং রেজাল্ট ওরিয়েন্টেড করার ব্যবস্থা নিয়েছি।
প্রশ্ন : এখন ৪র্থ শিল্প বিপ্লব চলছে। সমবায়ের মাধ্যমে কাজ করে আমাদের জিডিপি আরও কিভাবে বৃদ্ধি পেতে পারে?
মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম এমপি: ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের সাথে সমবায়ের সহ অবস্থানের বা কো এগজিসটেন্সের ভাল সুযোগ আছে। আমি শুরুতে যে কথা বলেছি- গ্রামের মানুষগুলোকে যখন আপনি কানেকটিভিটির মধ্যে নিয়ে আসবেন তখন সে প্রযুক্তিগত সুবিধার বিষয়ে বুঝতে পারবে। ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের যে কথা বলা হচ্ছে তাতে- শিল্প শুধু একটা জায়গায় সীমাবদ্ধ থাকবে না। শিল্পের যে সব ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ আছে সেগুলো গ্রাম পর্যায়ে সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়বে এবং মানুষ তথ্য প্রযুক্তির সুবিধাগুলো পাবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বলেছেন এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় এই ব্যাপারে নিবিড়ভাবে কাজ করছেন। অফিস আদালত অটোমেশন হচ্ছে। এই সুবিধা গ্রাম গঞ্জে পৌঁছে যাবে। এই ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে অবদান রাখার সুযোগ আছে।
প্রশ্ন: গ্রাম হবে শহর- এই নির্বাচনী অঙ্গীকার পূরণের ক্ষেত্রে সমবায় কিভাবে কাজ করছে?
মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম এমপি: সেই একই ব্যাপার ঘুরেফিরে আসছে। অর্থাৎ গ্রাম হবে শহর। গ্রামের মানুষকে বঞ্চিত রেখে স্বাধীনতার স্বপ্ন পূরণ হবে এবং বঙ্গবন্ধুর দর্শনও সফল হবে না। তাই গ্রামের অর্থনৈতিক অবস্থার এবং জীবন যাত্রার মানের উন্নয়ন করা এবং সেখানে শহরের সকল নাগরিক সুযোগ সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে সারাদেশে ইন্ট্রিগেটেড কানেকটিভিটি নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হচ্ছে।
প্রশ্ন: গ্রামে পাকা রাস্তা ও বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। সমসাময়িক সময়ে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন এবং সমবায়ের ক্ষেত্রে বড় কোন সফলতা অর্জিত হয়েছে?
মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম এমপি: সারা বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ছড়িয়ে ছিটিয়ে কাজ করছে। কুমিল্লাতে কুমিল্লা বার্ড এবং বগুড়াতে আরডিএ এবং তাদের মাধ্যমে আমাদের সেখানকার ক্ষুদ্র ঋণ প্রদানের মাধ্যমে জনগোষ্ঠীকে এক সাথে করে সেখানে বিভিন্ন ধরণের আর্থিক কর্মসূচী নেওয়া হয়েছে এবং সেগুলো পালন করা হচ্ছে। সামগ্রিকভাবে এদের মাধ্যমে সুফল আসছে।
প্রশ্ন: গ্রামে মানুষ অনেক সময় খন্ডকালীন বেকার থাকে এবং পড়াশোনা যাদের কম তারা ভাল জায়গায় কাজের সুযোগ পান না। সমবায়ের ভিত্তিতে কাজের ক্ষেত্র তৈরি হতে পারে?
মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম এমপি: সমবায়ের ভিত্তিতে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ইন্ডাস্ট্রি গড়ে তোলা সম্ভব। যেমন, আমরা এগ্রিকালচার বেজড ইকনোমি ছিলাম। সেখান থেকে ট্রান্সফরমেশনের মাধ্যমে আমরা শিল্পের দিকে আসতে শুরু করেছি। এখন আমাদের এগ্রিকালচার সেক্টরকে নেগলেট করবো না। কারণ এটি আমাদের প্রাইমারী বা প্রাইম সেক্টর। এখন সমবায় ভিত্তিতে হলে গ্রামে ছোট ছোট শিল্পায়ন সম্ভব হয়। যেমন, ফুড প্রসেসিং ইন্ডাস্ট্রি, ফিস প্রসেসিং ইন্ডাস্ট্রি এবং বিভিন্ন ধরণের স্পাইস প্রসেসিং। এই সব করতে গেলে বৃহৎ বিনিয়োগের যেমন বিষয় আছে তেমনি এটি কিন্তু ক্ষুদ্র বিনিয়োগের মাধ্যমেও করা যায়। ক্ষুদ্র বিনিয়োগে এককভাবে করা সম্ভব না। কিংবা প্রযুক্তি সম্পর্কে এককভাবে ধারণা নাও থাকতে পারে? তাই সেখানে যদি বিভিন্ন মেধা, বুদ্ধি, অর্থ এবং অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বি লোকদেরকে একসাথে করে একটা প্যাকেজ করে দিতে পারি তাহলে সেখানে বড় ধরণের ভুমিকা পালন করতে পারে। আমাদের বর্ষাকালে জমিতে কাজ থাকে না। তাই এই সময়ে এই সব জায়গায় তারা কাজ করতে পারে। আর আমরা এখন আমাদের এগ্রিকালচারকেও মর্ডানাইজড করার কথা ভাবছি এবং করা হচ্ছে। যেমন, ক্ষেতের আইল উঠিয়ে দিয়ে সেখানে মেকানাইজড প্রসেসে যদি চাষ করা হয়? আমি মিনিস্টার হওয়ার পরে স্টাডি করে দেখেছি যে, আমাদের প্রতি একর জমিতে সনাতনী পদ্ধতিতে চাষ করলে সর্বোচ্চ একজন কৃষকের লাভ হয় ৪ হাজার টাকা কিন্তু তা যদি আমরা কালেক্টিভ প্রসেসে মেকানাইজড সিস্টেম ফলো করি তাহলে সেখানে দেখা যায় যে, ২৪ হাজার টাকা লাভ হবে। তাই এর মাধ্যমে ড্রামাটিক্যাল চেঞ্জ ইকনোমিতে আসতে পারে। সেখানে প্রশ্ন আসবে- এতে হিউজ ডেমোগ্রাফি উইল বি আন এমপ্লয়মেন্ট। এই আন এমপ্লয়মেন্ট হবে না যদি তাদেরকে অল্টারনেটিভ ব্যবস্থাপনায় আনতে পারেন। কো-অপারেটিভ এর মাধ্যমে আমরা গ্রামে বাজার সৃষ্টি করতে পারি। সেই বাজারে বিভিন্ন পণ্য ক্রয় বিক্রয় করা, মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া এবং সামগ্রিকভাবে চেইন অব ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম কো-অপারেটিভ এর মাধ্যমে করা সম্ভব।
প্রশ্ন: সমবায় ব্যাংক রয়েছে আপনার মন্ত্রণালয়ের অধীন। এই ব্যাংক কি অন্যান্য ব্যাংকের মত আপডেটেড হয়েছে?
মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম এমপি: সমবায় ব্যাংক নিয়ে আরও বৃহৎ আঙ্গিকে ভাবার সুযোগ আছে। বিএনপি জোট সরকারের সময়ে সমবায় দর্শনের অপব্যবহার করা হয়েছে। যেমন, মাল্টি পারপাস কো-অপারেটিভসহ বিভিন্ন ধরণের অর্গানাইজেশন গড়ে তোলা হয়েছে এবং তাদের মাধ্যমে মানুষের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়েছে। যা সত্যিকার অর্থে কো-অপারেটিভ এর সাথে যায় না। আর এই সব আর্থিক লেনদেন করে মানুষের সাথে প্রতারণা করার কারণে মানুষের বিশ্বাসে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু কো-অপারেটিভ ব্যাংকসহ অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো অক্ষত আছে। তারা নিজেদের ব্যবস্থানার মাধ্যমে নিয়মিত তাদের দায়িত্ব পালন করেছে। মাল্টি লেভেল মার্কেটিং এর মাধ্যমে ডেসটিনি, ইউনিফেট ইউসহ আরও বিভিন্ন ধরণের নামে প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে মানুষের সাথে প্রতারণা করা হয়েছে। এই সব কারণে কো-অপারেটিভ এর একটা চ্যালেঞ্জ মানুষের সামনে এসেছে। বাই দিস টাইম- এই সরকার ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পরে এই সব আন এথিক্যাল অ্যাকটিভিটিজগুলো কার্ভ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। তাই এখন সময়ের ব্যবধানে এই ব্যবস্থা ভাল শেপ এ এসেছে। কো-অপারেটিভ ব্যাংকের মাধ্যমে ঋণ দেওয়া, মনিটরিং করা এবং পার্টিক্যুলার প্রডাকটিভ ইস্যুতে তাদেরকে মোটিভেট করা হচ্ছে।
প্রশ্ন : গ্রামে সমবায় সমিতির নামে উচ্চহারে ঋণ দেওয়া হয় এবং অনেকেই এদের দ্বারা প্রতারিত এবং ক্ষতিগ্রস্ত হন- এই বিষয়ে আপনার অভিমত কি?
মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম এমপি: নন গর্ভমেন্ট অর্গানাইজেশন-এদের ব্যাপারে মিশ্র মতামত আছে। আর এর ফলাফলও মিশ্র। তারা পুরোপুরি কোন কাজ করছে না এবং তারা আন এথিক্যাল কোন কাজ করছে না- এটি বলবো না। তবে এই সব প্রতিষ্ঠানগুলো মানুষের জন্যে ভাল কাজও করেছে। একটা অভিযোগ সবসময়ই আসে তাদের বিরুদ্ধে যে, রেট অব ইন্টারেস্ট অনেক হাই। ঋণ দেওয়া, সুদসহ আদায় করা, ইনটেনসিভ সুপারভিশন এবং নো হাউও তারা দেয়। তাদের সুপারভিশন বেশি থাকে বলে অভিযোগ বেশি আসে। নন প্রফিট ক্ষেত্রে বিনিয়োগ হলে তা ফিরিয়ে আনা তাদের জন্যে অনেক চ্যালেঞ্জ তৈরি করে।
প্রশ্ন : সব মানুষ তো ঢাকামুখি তাহলে আপনারা কি করছেন মানুষের কাজের ক্ষেত্র তৈরি করতে গ্রামে?
মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম এমপি: এটাই বাস্তবতা। মানুষ যখন এডুকেটেড হবে তখন তারা বিভিন্ন কারণে শহরে আসে। ভার্নারেবল এলাকা নদী ভাঙন এলাকা থেকে শহরে মানুষ আসে তাদের কাজের ক্ষেত্র এবং আশ্রয় না থাকলে। আরেকটা শ্রেণী যারা এডুকেটেড হচ্ছে তারা বেটার পজিশনে যাওয়ার জন্যে শহরে আসে। আমি মনে করি এটাই বড় চ্যালেঞ্জ। তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, গ্রাম হবে শহর অর্থাৎ গ্রামে শহরের সকল সুবিধা পৌঁছে দেওয়া হবে। সেখানে কাজের ক্ষেত্র তৈরি হবে এবং আয় বৃদ্ধির মেকানিজম ডেভলপড করার কথা বলা হয়েছে। এখানেও সমবায় এবং কালেকটিভলি কাজ করলে খুব দ্রুত ফলাফল পাওয়া যাবে।
প্রশ্ন : ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন এর জন্যে গ্রামে গঞ্জে ব্যাংকের শাখা সম্প্রসারিত হতে হবে। এজেন্ট ব্যাংকিং এর সাথে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস বিকাশ এবং রকেটের মত সেবাও সেখানে পৌঁছে দিতে হবে আরও বেশি বেশি?
মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম এমপি: এই ব্যাপারে আমি একমত- এই সমস্ত প্রাইভেট ব্যাংকের সংখ্যা বাড়ার কারণে এবং কতো জন লোকের জন্যে একটি ব্যাংকের শাখা দরকার অর্থাৎ একটা ব্যাংকিং সার্ভিস থাকা দরকার? এটি আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী খুব ভাল করে উপলব্ধি করেছেন। তাই তিনি অনেকগুলো ব্যাংকের অনুমোদন দিয়েছেন এবং তাদেরকে গ্রামে শাখা করার জন্যে বলেছেন।
প্রশ্ন : এজেন্ট ব্যাংকিংও তো কাজ করছে?
মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম এমপি: হ্যাঁ- কাজ করছে । আর আমি যদি ব্যাংকের শাখা নিয়ে কথা বলি। গ্রামে একটা শাখাকে সারভাইব করার জন্যে মনিটরিং করা হয়। যাতে ইনকাম জেনারেট হয় অনেক বেশি। মানুষকে আয় বাড়ানোর কাজ দিয়ে দিলে তার টাকা দরকার হবে। আর তখন তিনি ব্যাংকের কাছে আসবে। তাকে টাকা দিয়ে ব্যাংকও সেখান থেকে আয় করবে এবং তাকে রেগুলার মনিটরিং করতে হবে। এখন ব্যাংকগুলো গ্রামে গঞ্জে এই কাজ কিন্তু করছে। আর এখন ইন্স্যুরেন্স টু বি ফান্ডামেন্টাল রেসপন্সিবিলিটি অব ব্যাংকিং সেক্টর। এর সাথে এজেন্ট ব্যাংকিং কাজ হচ্ছে। কারণ সব জায়গায় ব্যাংকের শাখা করা সম্ভব না। ব্যাংকের শাখা খুলতে অনেক টাকা প্রয়োজন হয়। তাই এখন গ্রামে ব্যাংকের এজেন্টের মাধ্যমে কাজ হচ্ছে। সমবায় প্রতিষ্ঠানগুলো এইসব ব্যাংক এবং গ্রামের এজেন্ট ব্যাংকের কাছ থেকে তাদের ফান্ড সংগ্রহ করতে পারে।
প্রশ্ন : আপনার মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থাগুলো সফলতা সম্পর্কে জানতে চাই সংক্ষেপে?
মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম এমপি: আসলে আমার মন্ত্রণালয় সারা বাংলাদেশে বিস্তৃত। আমরা ব্যাপক পরিবর্তন আনার চেষ্টা চেষ্টা করছি। আমাদের স্থানীয় সরকার, ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, উপজেলা, জেলা পরিষদ এবং সিটি কর্পোরেশন- এদের স্ব স্ব দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করে মানুষের কাছে সেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্যে এবং এই সব প্রতিষ্ঠান ধীরে ধীরে আমাদের প্রত্যাশার দিকে এগিয়ে চলেছে। গ্রামীণ অবকাঠামোর উন্নয়ন হচ্ছে এবং দারিদ্র দূরীকরণের জন্যে নানা প্রকল্প আছে– সবাই মিলে সম্মিলিতভাবে অ্যাফোর্ড দেওয়ার কারণে আমাদের জিডিপি গ্রোথ এখন আটের বেশি এবং পার ক্যাপিটা ইনকাম আমাদের ক্লোজ টু থাউজেন্ট ডলার। সব মিলিয়ে আমরা উন্নতির দিকে এগিয়ে চলেছি।