ইসলামী ক্যালেন্ডারের নবম মাস রমজান। সারা বিশ্বের মুসলিমরা সিয়াম সাধনার এ মাসটিকে যথেষ্ট ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে উদযাপন করে থাকেন।
রমজানকে সিয়াম সাধনা, প্রার্থনা, দোয়া কবুল এবং সম্প্রীতির মাস হিসাবে উল্লেখ করা হয়। রমজান মাসে রোজা সকল মুসলমানদের জন্য বাধ্যতামূলক। যারা দীর্ঘস্থায়ীভাবে অসুস্থ, বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন এমন মা, ভ্রমণ করছেন বা ঋতুস্রাব এসব কারণে রোজা রাখার বাধ্যবাধকতা শিথিল করা হয়েছে।
সুবহে সাদিকের আগে খাবার গ্রহণ করাকে সেহরী বলা হয়। সূর্যাস্তের পর উপবাস ভাঙার সময় হলো ইফতার।
পরিবার, সমাজ বা গ্রুপের সদস্যরা একত্রে বসে জমকালো খাবারের সাথে ইফতার করার ঐতিহ্য প্রায় সারা বিশ্বেই প্রচলিত।
ঐতিহ্যগতভাবে খেজুর, পানি এবং একটি হালকা খাবার দিয়ে রমজানের রোজা ভঙ্গ করা হয়। তবে এমন অনেক খাবার আইটেম রয়েছে যা বিশেষ করে রমজান মাসে তৈরি করা হয় এবং সারা বিশ্বে তা পরিচিত।
সারা বিশ্বে প্রচলিত ইফতারের ঐতিহ্যের মধ্যে কয়েকটি দৃষ্টান্ত দেখা নেয়া যাক:
বাংলাদেশ: জিলাপি, মুড়ি, হালিম, খেজুর, সামোসা, ডালপুরি, পিঠা, আলু চপ, সিঙ্গারা, বেগুনী, পিয়াজু, ছোলা, ঘুগনি, আমিত্তি, বুন্দিয়া, নিমকি, পাকোড়া, খাজা, বাতাসাসহ বিভিন্ন ধরনের খাবার থাকে বাংলাদেশি ইফতারে। বাঙালিরা তাদের পরিবার এবং বন্ধুদের সাথে বিভিন্ন ধরণের খাবারের সাথে ইফতার গ্রহণ করতে পছন্দ করে।
পাকিস্তান: বাড়িতে এবং রাস্তার পাশের দোকানে প্রায় তিন ঘণ্টা আগে ইফতার খাবারের প্রস্তুতি শুরু হয়। ইফতারের সময় জালেবি, সমোসা এবং পাকোড়ার মতো সুস্বাদু খাবারও পরিবেশন করা হয়। অনেক রেস্তোরাঁও এই সময়ে ইফতার খাবারের নানান অফার দেয়। ইফতারের ঠিক পরে তারাবীহ নামাজ আদায় করা হয়। চাঁদ রাতে স্থানীয় বাজারে প্রচুর ভিড় দেখা যায়।
ভারত: ভারতীয় মুসলমানরা মসজিদে আয়োজিত বিনামূল্যে ইফতার খাবার দিয়ে তাদের উপবাস ভাঙে। খেজুর এবং পানি দিয়ে ইফতারের সূচনা করে। নিরামিষ এবং আমিষ উভয় ধরনের খাবারই থাকে টেবিলে। হায়দ্রাবাদে হালিমের সাথে তাদের উপবাস ভঙ্গ করে স্থানীয় মুসলিমরা। দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যগুলিতে, ইফতার শুরু হয় খেজুর, তাজা কাটা ফল এবং ফলের রস দিয়ে। তারপর ভাজা খাবারের আইটেম যেমন পাকোড়া এবং সমোসাও খাওয়া হয়।
মালয়েশিয়া: মালয়েশিয়ায় ইফতারকে ‘বারবুকা পুয়াসা’ নামে বলা হয়। ঐতিহ্যবাহী খেজুর এবং পানি দিয়ে উপবাস ভাঙার পর, লোকেরা বান্দুং পানীয়, আখের রস, ঘাস জেলির সাথে সয়াবিন দুধ, নাসি লেমাক, লাকসা, আয়াম পারসিক, চিকেন রাইস, সাতে এবং পপিয়া দিয়ে ইফতার সেরে নেন।
মিশর: মিশরে ইফতার উদযাপনের সময় লোকেরা রঙিন ফানুস জ্বালায়। তারা হাঁস, রোকাক, মাহশি (ভর্তি সবজি), কেশক, খরগোশ এবং মোলোখেয়ার সুস্বাদু খাবার খান।
সৌদি আরব: সকাল থেকে রাত পর্যন্ত রোজা রাখার রীতি অনুসরণ করে মানুষ। তারপরে তারা খেজুর, আরবি কফি, স্যুপ এবং ভাজা বা বেকড স্টাফড পেস্ট্রি দিয়ে তাদের উপবাস ভঙ্গ করে। পশ্চিমা অঞ্চলের একটি ঐতিহ্যবাহী খাবার যদি ফাউল এবং টেমিস, যা ফাভা বিন স্টু এবং টেমিস রুটির সংমিশ্রণ। পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশে, লোকেরা সালুনা নামে পরিচিত মাংস এবং উদ্ভিজ্জ স্টু দিয়ে তাদের উপবাস ভঙ্গ করে।