সারাবিশ্বে একযোগে হামলার পর সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও চলছে তোলপাড়। এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনাও বিশ্বকে ভাবিয়েছিল। দেশের ইতিহাসে এত বড় একটি দুর্ঘটনার পর বিষয়টিকে কতোটুকু গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছিল বাংলাদেশ?
সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ বিষয়ে সরকারি কিংবা বেসরকারি পর্যায়ে তেমন একটা গুরুত্ব নেই। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, আসন্ন বাজেটে এ খাতে যথেষ্ট বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। তবে কেউ কেউ বলছেন, শুধু বাজেট না, বরং দক্ষ জনবল তৈরিসহ সব দিক থেকেই নিরাপত্তার বিষয়ে বাড়তি গুরুত্ব দিতে হবে।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) সভাপতি মোস্তাফা জব্বার বলেন, এখন পর্যন্ত কোন বরাদ্দের কথা শুনিনি। আসন্ন বাজেট ঘোষণা হলে বলতে পারবো কিছু থাকবে কি না।
‘এছাড়া সরকারি কিংবা বেসরকারি পর্যায়ে বিষয়টাকে সেভাবে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে বলে দেখিনি। কোন প্রতিষ্ঠানকে ডিজিটাল করার ক্ষেত্রে যতটা আগ্রহ দেখি সেভাবে ডিজিটাল নিরাপত্তায় আগ্রহ দেখি না।’
সাইবার সিকিউরিটি নিয়ে সবার আরো বেশি সচেতন হওয়া প্রয়োজন মনে করেন তিনি।
তিনি বলেন, প্রযুক্তি ব্যবহার করলে সেটার নিরাপত্তার বিষয়েও সচেষ্ট থাকতে হবে। তা না হলে এর খারাপ প্রভাবটা রাষ্ট্র থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যায়ে পড়বে। শুধু বাজেট নয়, বরং সব দিকে থেকেই নিরাপত্তার বিষয়ে বাড়তি গুরুত্ব দিতে হবে। আমরা কেবল ডিজিটাল অবস্থায় পা দিয়েছি, নিরাপত্তার সঙ্গে চলতে পারলে আরো নানা উন্নয়ন হবে।
‘অনেক আগে থেকে পুরোপুরি ডিজিটালাইজড দেশেরও অনেক সমস্যা হয়েছে এমন হামলার কারণে, সেখানে আমাদের অবস্থাতো আরো নাজুক। তাই সমস্যার সমাধানে যেসব ডিজিটালাইজেশন হয়েছে সেগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি নিরাপত্তা সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা চালু করতে হবে।’
সরকারি ডাটা সেন্টারের পরিচালক তারেক বরকতুল্লাহ বলেন, আইটিতে আমাদের বেশ বরাদ্দ রয়েছে। তবে সাইবার নিরাপত্তা ও আইটি আলাদা বিষয়। বাজেট ঘোষণার আগে তো বলা যাচ্ছে না বাজেটে কি কি থাকবে।
‘প্রাক বাজেট আলোচনায় অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে, সেখানেও সাইবার নিরাপত্তা বিষয়টি আলোচনায় এসেছে।’
সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে সরকারের বেশ কিছু প্রকল্প আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকার ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট করতে চাইছে, সেই অ্যাক্টের আওতায় ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সি করতে চাইছে যারা সারাদেশের সাইবার সিকিউরিটি নিয়ে কাজ করবে।
আগামী বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানোর দরকার আছে কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, বরাদ্দতে কোন ঘাটতি নেই। যেটা ঘাটতি সেটা হলো সাইবার নিরাপত্তার জন্য দক্ষ লোকবলের। এরইমধ্যে কম্পিউটার কাউন্সিল থেকে ১,২০০ জনকে সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ে ট্রেনিং দেয়া হয়েছে।
‘আর যন্ত্রপাতি আমরা দেশের বাইরে থেকে আনলেও এই দেশীয় নিরাপত্তার বিষয়টা বিদেশীদের উপর ছেড়ে দিতে পারি না। পাশাপাশি এখানে এসব নিয়ে গবেষণা বা উচ্চশিক্ষারও কোন সুযোগ নেই। বিশ্ববিদ্যালয় শেষ করেই সবাইকে চাকরিতে চলে যেতে হচ্ছে। ফলে সেই জায়গাটার উন্নয়ন সম্ভব হচ্ছে না।’