বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডির বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি এখন সুতা কাটা ঘুড়ির মতো। বাস্তবতার সঙ্গে সুতার যে সংযোগ থাকে সেটা এখানে নেই। প্রবৃদ্ধিকেন্দ্রিক উন্নয়নের যে উপাখ্যান তৈরি হয়েছে তা অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের শত্রুতে পরিণত হয়েছে।
এর ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেছেন, অর্থনীতির বেশির ভাগ সূচক নিম্নমুখী হলেও দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি দিন দিন বেড়েই চলেছে। ব্যাংকিং খাত, পুঁজিবাজার, রপ্তানি প্রবৃদ্ধি এবং ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ সন্তোষজনক হারে বৃদ্ধি না পেলেও সামষ্টিক প্রবৃদ্ধি কিভাবে হচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গেছে।
রোববার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আয়োজিত ইন্ডিপেন্ডেন্ট রিভিউ অব বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট শীর্ষক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘বেসরকারি বিনিয়োগ মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ২২ থেকে ২৩ শতাংশের মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। অথচ প্রবৃদ্ধি ৫ থেকে ৮ শতাংশ হয়েছে। বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহও সাম্প্রতিককালে সবচেয়ে কম। আবার ব্যক্তিরা ঋণ নিয়ে পরিশোধ করতে পারছেন না।
তারা বলছেন, লাভ করতে পারছেন না। পুঁজিপণ্য আসা নেতিবাচক হয়ে গেছে। এছাড়া ব্যাংকিং খাত তারল্য সংকট ও খেলাপি ঋণের সমস্যায় জর্জরিত। পুঁজিবাজারের অস্থিরতা এবং অর্থ পাচার হয়ে গেছে খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। আইন থাকলেও এর যথাযথ প্রয়োগের অভাবে অপরাধগুলো দিন দিন ডালপালা গজিয়ে আরো বড় হচ্ছে।’
তথ্যের স্বল্পতা নিয়ে দেবপ্রিয় বলেন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের তথ্য উপাত্তগুলোর লভ্যতা কমে যাচ্ছে। যে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে তার সময়ের সাথে সংগতিপূর্ণ নয়। এছাড়া প্রাপ্ত তথ্যগুলো অনেকটাই সন্দেহপ্রবণ। নীতি নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে যারা এই তথ্য উপাত্ত পরিবেশন করেন বা তৈরি করেন তাদেরকে জনগণের সামনে সেই তথ্য প্রকাশ এবং যৌক্তিকতা বিশ্লেষণের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
চলমান ক্যাসিনো অভিযান সম্পর্কে দেবপ্রিয় বলেন, অভিযানে প্রাপ্ত টাকা এবং আর্থিক খাতের চুরি যাওয়া টাকাকে আমি ভিন্নভাবে দেখতে চাই না। এইগুলো পুঁজিবাজার লোপাট করা টাকা, ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ফেরত না দেওয়া টাকা, এবং বিদেশে পাচার করার উদ্দেশ্যে লুকিয়ে রাখা টাকা, ট্যাক্স ফাঁকির টাকা।
আর্থিক খাতের এ সমস্ত সমস্যা সমাধান করতে বিদ্যমান ফৌজদারি আইনের মাধ্যমে নয় বরং অর্থনৈতিক সংস্কারের পথ বেছে নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।