নিজের জ্ঞান ও কর্ম দেশের প্রয়োজনে কাজে লাগাতে চান জাপানের সেরা তরুণ বিজ্ঞানী নির্বাচিত হওয়া বাংলাদেশি নাগরিক ডা: আরিফ হোসেন। দেশে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যদি সাহায্য চায়, তবে প্রস্তুত আছেন এই কৃতি চিকিৎসা বিজ্ঞানী।
চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে এক সাক্ষাতকারে তিনি এ কথা বলেন।
জাপানিজ সোসাইটি অব ইনহেরিটেড ম্যাটাবলিক ডিজঅর্ডার্স Lysosomal diseases এর mechanisms এবং চিকিৎসা আবিষ্কারের জন্য ডা: মো. আরিফ হোসেনকে এ সম্মান দিয়েছে বলে জানান তিনি। ৬১ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম কোন নন-জাপানিজকে এ গৌরবময় পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত করা হয়েছে। সংস্থাটি প্রতিবছর সাধারণত কোনো জাপানিজকে সেরা তরুণ বিজ্ঞানী নির্বাচন করে থাকে।
বৃহস্পতিবার জাপানিজ সোসাইটি ফর ইনহ্যারিটেড ম্যাটাবলিক ডিজিজের ৬১তম বার্ষিক সম্মেলনে এ সম্মাননা তুলে দেয়া হয় তার হাতে।
এছাড়া ন্যাচার গ্রুপের জার্নাল “জার্নাল অব হিউম্যান জেনেটিক্স” এ পৃথিবীর সেরা তিন তরুণ বিজ্ঞানীর মধ্যে জায়গা করে নিয়েছিলেন বাংলাদেশের চিকিৎসক ও গবেষক ডা: আরিফ হোসেন। এছাড়া ২০১৭ সালে অর্জন করেন Kunihiko Suzuki Award 2017 শীর্ষক আরো একটি আন্তর্জাতিক সম্মাননা।
নিজের পুরস্কার পাওয়া ও কর্ম নিয়ে দারুণ আত্মবিশ্বাসী এই বিজ্ঞানী। জানালেন নিজের স্বপ্ন ও ইচ্ছার কথা।
চ্যানেল আই অনলাইনকে ডা: আরিফ হোসেন বলেন, আমি নিউরো-মেটাবলিক রোগের গবেষণার কারণে অনেকগুলো আন্তর্জাতিক পুরস্কার অর্জন করেছি। এখন এটাকে আরও প্রসারিত করতে চাই। আমার এই সুযোগ কাজে লাগাতে আমি এশিয়ার বিভিন্ন দেশের সাথে সমন্বয় করে কাজ করি। বিনামূল্যে নিউরো-মেটাবলিক রোগ ডায়াগনেসিস করে দিই। কিন্তু দুঃখজনক ব্যাপার হলো আমার দেশের জন্য এখনও কিছু করতে পারছি না।
ডা. আরিফ হোসেন দাবি করেন, আমার এই সুযোগ কাজে লাগাতে আমি দেশের নামকরা কয়েকজন অধ্যাপকের সাথে যোগাযোগ করেছি। বিশেষ করে বিএসএমএমইউ এবং শিশু হাসপাতালে। দুঃখের বিষয় কারো রেসপন্স সেভাবে পাইনি। আমার প্রচেষ্টা আমার দেশে কাজে লাগাতে পারলে খুব ভালো লাগবে।
“দেশে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যদি আমার সহযোগিতা চান, সেক্ষেত্রে আমি সহযোগিতা করবো। অথবা কোনো ধরণের কোলাবোরেশন করতে চাইলে আমি করবো। আর যদি সেটা না হয়, তাহলে আমি তো থেমে থাকবো না। আমি আমার কাজ চালিয়ে যাব”- অত্যন্ত আক্ষেপের সুরে বলেন ডা: আরিফ হোসেন।
বর্তমানে জাপানের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র রিসার্চার হিসেবে কর্মরত এই বিজ্ঞানী বাংলাদেশের সমস্ত প্রফেশনালদের উদ্দেশ্যে বলেন, গবেষণার কোন বিকল্প নেই। একটা দেশে যখন গবেষণা থাকে না, তখন সে দেশের ভবিষ্যত থাকে না। সেটা মেডিকেল লাইনে হোক অথবা প্রকৌশল লাইনে হোক। যেকোন ক্ষেত্রে যদি গবেষণা না থাকে সে জ্ঞানের কোন ভবিষ্যত নেই।
তিনি বলেন, একজন ডাক্তার যখন গবেষণায় যুক্ত থাকবেন না তখন তার জন্য বোঝা একটু কঠিন তিনি যে চিকিৎসা দিচ্ছেন, রোগী আসছে, প্রেসক্রিপশন দিচ্ছেন, রোগ ভালো হচ্ছে অথবা ভালো হচ্ছে না। কারণ কী? তাদের কাছে জ্বর নিয়ে কেউ আসলে তাদেরকে জ্বরের ওষুধ দিচ্ছেন, কেন জ্বর হচ্ছে, সে কারণটা কিন্তু খুঁজছেন না বা Mechanism কিন্তু জানছেন না। সারাজীবনই কি অন্যের গবেষণার ওপর নির্ভর করবেন? আসুন আমাদের স্বল্প পরিসরে হলে ও একটু একটু করে আগাই। আমার কাছে কেউ যদি কোন সহযোগিতা চান ইনশাআল্লাহ্ আমাকে পাশে পাবেন।
ডা. আরিফ হোসেনের জন্ম গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীর ভাটিয়াপাড়ার খুব সাধারণ পরিবারে। ১১ ভাইবোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট।
আরিফ হোসেন দশম শ্রেণি গ্রামে পর্যন্ত পড়াশুনা করেছেন। তারপর ঢাকার মিরপুর বাঙলা কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। সেখান থেকেই পোস্ট গ্রাজুয়েশন করেন। ২০০৯ সালে তিনি জাপানের ওসাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করার স্কলারশিপ অর্জন করেন এবং সেখান থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। শিশু নিউরো-মেটাবলিক রোগে ক্লিনিক্যাল ফেলোশিপও করেছেন একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। তার অভিজ্ঞতা নিয়ে সৌদি আরববে কাজ করেছিলেন তিনি। এছাড়াও কাজ করছেন এশিয়ার বিভিন্ন দেশে। তবে তিনি নিজ দেশের জন্য কাজ করাকে সর্বাগ্রে রাখতে চান।
তিনি বলেন, দেশের জন্য আমার জ্ঞান কাজে লাগাতে পারলে সবচেয়ে বেশি ভালো লাগবে।