চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

দেশের অধিকাংশ ব্যাংক খেলাপি ঋণের তথ্য গোপন করে

দেশের অধিকাংশ ব্যাংকই খেলাপি ঋণের সঠিক চিত্র প্রকাশ করে না। প্রকৃত খেলাপি ঋণ ২০ শতাংশ হলেও জিডিপিতে দেখানো হয় মাত্র ১২ শতাংশ। এমনকি  খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ার প্রকৃত কারণ স্পষ্ট না করে উল্টো  ঋণের তথ্য গোপন করছে ব্যাংকগুলো। রোববার রাজধানীর মিরপুরে বিআইবিএম অডিটোরিয়ামে শুরু হওয়া দুদিনব্যাপী বার্ষিক ব্যাংকিং সম্মেলনে-২০১৭ বক্তারা এসব কথা বলেন। সম্মেলনের আয়োজন করেছে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম)।

সম্মেলনের উদ্বোধন করে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির বলেন, ব্যাংকের পরিচালনা পর্যদ, শীর্ষ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের দায়-দায়িত্ব এবং মূলধন সংরক্ষণে বিভিন্ন ধরণের নীতিমালা করে থাকে বাংলাদেশ ব্যাংক।

তিনি বলেন, এই সম্মেলনে যেসব প্রতিবেদন উপস্থাপনা করা হবে তার মাধ্যমে ব্যাংকিং খাতের বিভিন্ন বিষয় উঠে আসবে। যা আমাদের আগামী নীতিমালা তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ  ভূমিকা রাখবে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর ‘মাইক্রো ব্যাংকিং এনভায়রনমেন্ট’ শীর্ষক একটি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন অধ্যাপক শিবলি রুবাইয়াতুল ইসলামের সভাপতিত্বে ব্যাংকিং খাতের বিভিন্ন বিষয়ের উপর ৬টি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসা ও অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষককেরা।

এসব প্রবন্ধের উপর প্যানেল আলোচনায় অংশ নিয়ে ট্রাস্ট ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক মঈনউদ্দিন আহমেদ বলেন, অধিকাংশ ব্যাংক খেলাপি ঋণের তথ্য গোপন করে থাকে। জিডিপিতে খেলাপি ঋণ ১২ শতাংশ দেখানো হয়ে থাকে। যদিও জিডিপিতে প্রকৃত খেলাপি ঋণ প্রায় ২০ শতাংশ।

তিনি বলেন, ব্যাংকগুলোর রিস্ক ম্যানেজম্যন্ট বিভাগের গবেষণা ভাল নয়। ফলে যচাই-বাছাই না করে গ্রাহকদের ঋণ দেয়া হয়। এ কারণে সেসব ঋণ খেলাপী হয়ে পড়ে। তাই রিস্ক ম্যানেজম্যান্ট বিভাগের গবেষণা কার‌্যক্রম জোরদার করা দরকার।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ার সঠিক কোনো কারণ দেখা যায় না। কেন এ ধরনের ঋণ বাড়ছে সে বিষয়ে সঠিক তথ্য বের করে আনতে হবে। ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ নাকি ব্যবস্থাপনা কমিটির কারণে খেলাপি ঋণ বাড়ছে তা খতিয়ে দেখতে হবে।

তিনি বলেন, খেলাপি ঋণের সঠিক চিত্র দেখা না গেলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর সঠিক আর্থিক চিত্রও দেখা যায় না। ফলে প্রতিষ্ঠানের দর্বলতা বা সফলতাও বুঝা যায় না। খেলাপী ঋণের তথ্য গোপন করলে প্রতিষ্ঠানে সুশাষনের ঘাটতি দেখা দেয়, দূর্নীতি বেড়ে যায়।

বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক মো. ইয়াসিন আলী বলেন, শরীয়াভিক্তিক ব্যাংকগুলো সঠিকভাবে নিয়ম পালন না করেই ব্যাংকিং কার‌্যক্রম পরিচালনা করছে। ব্যাংকগুলোর জন্য একটি আইন প্রণয়ন দরকার।

বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে ব্যাংকারদের চাকরির কোনো নিরাপত্তা নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, কয়েকটি ব্যাংক ছাড়া অধিকাংশ ব্যাংকে চাকরির নিরাপত্তা নাই। এ বিষয়ে ব্যাংকগুলোকে আইনি কাঠামোর মধ্যে রাখা দরকার।

সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধূরী। তিনি ব্যাংকিং খাতের উপর বিভিন্ন সেশনে আলোচনার বিষয়বস্তুও রিভিউ পাঠ করেন।

স্বাগত বক্তব্য দেন বার্ষিক ব্যাংকিং সম্মেলন ২০১৭ বাস্তবায়ন কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শাহ মো. আহসান হাবীব।