নব্য জেএমবির সদস্যদের একজন আমীর বাংলাদেশেই আছেন বলে জানিয়েছেন মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররজিম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. মনিরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, নব্য জেএমবির সদস্যরা যে কোন একটি ঘটনা ঘটিয়ে আমীরের কাছে তথ্য দেয়। এই সংগঠনের সঙ্গে আমরা আইএসের কোন সম্পৃক্ততা পাইনি।
মঙ্গলবার ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান মনিরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনগুলোর যে আদর্শ আছে। সেগুলো কোন কোন সংগঠন বা ভিন্নভিন্ন জঙ্গি সংগঠন সেটা শেয়ার করে। হলি আর্টিজান হামলার সময় তারা আইএস’র দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেছিল। এবারও তারা চেষ্টা করেছিল। সম্ভবত অর্থ সহয়তা পাওয়ার জন্য এবং তাদের যে হামলা করার ক্যাপাসিটি আছে সেটা প্রমাণের জন্য তারা আইএস’র দৃষ্টি আকর্ষণের অপচেষ্টা করে। নব্য জেএমবি’র একজন আমীর হয়েছে। আমরা তার বিষয়ে তথ্য পেয়েছি। এই জঙ্গিরা হামলা চালিয়ে আমীরের কাছে তথ্য দেয়। সেই আমীর এগুলো প্রচার করে। সাইট ইন্টেলিজেন্স কারো বক্তব্য যাচাই করে না। তাদের সে ধরণের মেকানিজম নেই। সাইট ইন্টেলিজেন্সের এই দায় স্বীকারের বিষয় আমরা কথা বলেছি। পুলিশের উপর হামলার বিষয়ে আইএস যে দাবি করেছে, সেটা সঠিক নয়। আমরা মনে করি এগুলো বাংলাদেশ থেকেই করা হয়েছে’
মনিরুল ইসলাম বলেন, গতকাল নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় একটি অভিযান পরিচালিত হয়েছে। সেখান থেকে তিনজনকে আটক করা হয়েছিল। তিনজনের মধ্যে দুজনকে আমরা গ্রেফতার করেছি। তারা হলেন, ফরিদ উদ্দিন রুমী ও মিশুক খান ওরফে মিজান। এরা আগের ঘটনার সঙ্গে এবং গতকালের ঘটনার সঙ্গে জড়িত।
চলতি বছরের ২৯ এপ্রিল পুলিশের উপর আইইডি হামলা হয়েছিল। এই হামলায় আমাদের তিনজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছিলেন। একজন বেশি আহত হয়েছিলেন। সেই ঘটনার সঙ্গে, তারা জড়িত। পাশাপাশি গতকাল যে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক পাওয়া গেছে। এই ঘটনায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে মনিরুল ইসলাম বলেন, ফরিদ উদ্দিন রুমী একজন ইলেকিট্রক্যাল ইঞ্জিনিয়ার এবং তিনি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। মিশুক খান মিজান মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। তাদের আস্তানা থেকে একে ৭৪ খেলনা রাইফেল, খেলনা পিস্তল, ইলেক্ট্রিক্যাল ডিভাইস, তিনটি আইইডি উদ্ধার করা হয়েছে। তারা এই তিনটি আইইডি পুলিশের উপর হামলার জন্য তৈরি করেছিল। পুলিশের উপর হামলা প্রতিমাসের শেষের দিকে করা হয়। এবারাও তারা সেই পরিকল্পনা করেছিল।
তারা পুলিশের উপর হামলার কারণ হিসেবে বলেছে, ‘তারা দেশের প্রচলিত আইনে বিশ্বাসী না। নব্য জেএমবির সদস্যরা আইন কানুনে বিধি ব্যবস্থা ও সংবিধানে বিশ্বাস করে না। এই কারণে আইন প্রয়োগকারী পুলিশকে আদর্শিক দিয়ে তারা শত্রু মনে করে। এর বাইরে পুলিশের অভিযানের কারণে তাদের অনেক শীর্ষ নেতা মারা গেছে অথবা গ্রেপ্তার হয়েছে। অর্থাৎ তাদের সাংগঠনিক যে শক্তি গড়ে উঠেছিল তামিম চৌধুরীকে কেন্দ্র করে। এজন্য তারা পুলিশকে টার্গেট হিসেবে বেছে নিয়েছে। এর বাইরে তারা মনে করে, এধরণের হামলা হলে পুলিশের মনোবল ভেঙ্গে যেতে পারে। পাশাপাশি সাধারণ মানুষের মনেও একটা ভীতি সৃষ্টি হবে। জনগণের মনে ভীতি সৃষ্টির জন্যই পুলিশের উপর হামলা বেছে নিয়েছে। এ মাসেও তারা হামলার জন্য জায়গা রেকি করেছিল। কোথায় কি ধরণের বোমা পুতে রাখা যায়।
হামলার সময় জঙ্গিরা রাত বেছে নেয়ার কারণ হিসেবে তারা পুলিশকে জানিয়েছে, ‘সারা মাস ধরে টার্গেট খোঁজে। কোন জায়গাটা নিরাপদ থাকে। পুলিশ বক্সের সদস্যরা কখন বক্সে যায়। নিরস্ত্র পুলিশ কোথায় থাকে? আলো আঁধারি থাকে। এগুলো তারা খেয়াল করে হামলা করে। প্রত্যেকটি হামলার জন্য তারা জনবহুল এলাকা বেছে নিয়েছিল।
মনিরুল ইসলাম বলেন, গত পাঁচটি ঘটনায় পাঁচজনের একটি সেল কাজ করেছে। এই পাঁচজনেরই পরিকল্পনা, তারা আইইডি তৈরি করেছে। হামলা বাস্তবায়ন করেছে। তারা বোমা তৈরিতে খুবই লো কোয়ালিটির বিস্ফোরক ব্যবহার করেছে। বোমা তৈরির তাদের কোন প্রাক্টিক্যাল প্রশিক্ষণ নাই। ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে তাদের যে জ্ঞান, এটার সঙ্গে ম্যানুয়াল করে এই ডিভাইসগুলো ডেভেলপ করার চেষ্টা করেছিল। তারা প্রথমে যে বোমা তৈরি করেছে, ধীরে ধীরে তারা শক্তিশালী বোমা তৈরির দিকে যাচ্ছিল। ২৯ এপ্রিল তারা যে বোমা ব্যবহার করেছে ৩১ আগস্টে সেটা আরো শক্তিশালী হয়েছে। গতকাল যা উদ্ধার হয়েছে, তা আগেরগুলো চেয়েও শক্তিশালী। পাঁচজনের নেতাকে ধরার চেষ্টা চলছে।
কাউন্টার টেররিজমের প্রধান বলেন, তামীম চৌধুরী মারা যাবার পর মুসা নব্য জেএমবিকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করেছিল। মুসার ইচ্ছা ছিল বিস্ফোরক সংগ্রহ করা। সেটা তারা করেছে। সিলেটে, চাপাইনবাবগঞ্জসহ তাদের আস্তানা পাওয়া গেছিল। সেগুলো ধংস হবার পর তারা নতুন করে আবার সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করেছিল। তাদের একজন আমির আছে সেই আমিরের তথ্য আমাদের কাছে রয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম সপ্তাহে ২৪ ঘন্টাই যেকোন ঘটনায় দ্রুতম সময় যেতে প্রস্তুত থাকে। পুলিশের উপর হামলার পাঁচটি ঘটনায় পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়েছিল। যারা গ্রেফতার ছিল, তারা এই হামলার সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রযুক্তিগত প্রমাণ মিলেছে। তারা হামলার সময় সেখানে ছিল। তথ্য প্রমাণ আমাদের হাতে রয়েছে।’
নেপালীদের ক্যাসিনোতে অংশ নেয়ার বিষয়ে মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘২০১৬ সালে ফেব্রুয়ারিতে সিটিটিসি গঠিত হয়। আমরা টেরোরিজম নিয়ে কাজ করি। টেরোর ফাইন্যান্সকে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করি। নেপালীরা সরাসরি কোন টেরোরিজমের যুক্ত না হলে আমরা সেটি নিয়ে কাজ করি না।’
এদিকে গ্রেপ্তার ফরিদ উদ্দিন রুমি ও মিশুক খান মিজানকে দশদিনের রিমান্ড চেয়ে আদলতে পাঠানো হলে আদালত তাদের প্রত্যেককে ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।