নতুন কোনো ভ্যাট নয়, বরং দেশীয় স্যানিটারি ন্যাপকিন শিল্পকে সুবিধা দিতে বিদেশ থেকে কাঁচামাল আমদানির ওপর মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ও সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার করেছে সরকার।
রোববার অর্থমন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
নতুন এসআরও জারির ফলে এ বছর স্যানিটারি ন্যাপকিন-প্যাডে নতুন করে কোনো ভ্যাট বসছে না। গত বছরের ১৫ শতাংশ ভ্যাটই বহাল থাকছে।
এ বছর স্যানিটারি ন্যাপকিনের কাঁচামাল আমদানিতে ৪০ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয়েছিল। এর সঙ্গে ছিল আগের মূল্য সংযোজন কর ১৫ শতাংশ।
স্যানিটারি ন্যাপকিন বা ডায়াপারের উপর এবার নতুন করে কোন ভ্যাট বসায়নি সরকার বরং স্থানীয় স্যানিটারি ন্যাপকিন শিল্পকে সুবিধা দিতে ও উৎপাদন খরচ কমাতে এর কাঁচামাল আমদানির উপর শর্ত সাপেক্ষে ভ্যাট ও সাপ্লিমেন্টারী ডিউটি তুলে দেয়া হয়েছে বাজেটে।
দেশীয় স্যানিটারি ন্যাপকিন শিল্পকে সুবিধা দিতে গত অর্থবছর থেকেই বিদেশি ডায়াপার আর স্যানিটারি ন্যাপকিন আমদানির উপর উচ্চ হারে ট্যাক্স ধার্য করা হয়। যা এবছরও অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।
এছাড়াও লোকাল বিক্রির উপর যে ১৫ শতাংশ ভ্যাট ছিল তা না বাড়িয়ে বহাল রাখা হয়েছে। এই ১৫ শতাংশ ভ্যাট মওকুফ করা হলে প্রতি প্যাকেট স্যানিটারি ন্যাপকিনের দাম ৪০-৪৫ শতাংশ কমানো সম্ভব। তাহলে নারীদের জন্য স্যানিটারি ন্যাপকিন পাওয়াটা আরো সহজলভ্য হবে।
স্যানিটারি ন্যাপকিন কোন মেয়ের জন্যই লাক্সারী না, এটা তার মৌলিক প্রয়োজনীয় একটা বিষয়। বয়ঃসন্ধি পরিবর্তি মেয়েদের জন্য পিরিয়ড একটি স্বাভাবিক ঘটনা। মেয়েদের পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে স্বাস্থ্য সম্মত স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার নানা রকম স্বাস্থ্য ঝুঁকি থেকে সুরক্ষা দেয়। ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে স্যানিটারি ন্যাপকিন বা ডায়াপারের উপর নতুন করে ভ্যাট বসানো হয়েছে বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনা চলে।
এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, শহরাঞ্চলে স্যানিটারি ন্যাপকিনের ব্যবহার ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ হলেও সামগ্রিকভাবে সেই হার মাত্র ১২ থেকে ১৫ শতাংশ। বাংলাদেশে ৮৫ ভাগ নারী পিরিয়ডের সময় স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করে না। ভয় ও চক্ষুলজ্জার পাশাপাশি উচ্চ দামের কারণে কিশোরীরা স্যানিটারি ন্যাপকিনের বদলে অস্বাস্থ্যকর কাপড় ব্যবহার করে, যা ক্যান্সারের মতো মরণঘাতী রোগ সৃষ্টির জন্য দায়ী।
রকমভেদে স্যানিটারি ন্যাপকিনের দাম ১২০-১৬০ টাকা, যা সচ্ছল পরিবারেরর কাছে স্বাভাবিক হলেও অসচ্ছল পরিবারের কাছে বেশ অতিরিক্ত।
পিরিয়ড সম্পর্কে সংকোচ থাকায় মেয়েদের শিক্ষাক্ষেত্রে ও নারীদের কর্মক্ষেত্রে অনেকটা পিছিয়ে রাখছে, যা নারীর ক্ষমতায়নে প্রভাব ফেলছে। এক জরিপে দেখা যায় প্রায় ৪১ শতাংশ কিশোরী পিরিয়ডের সময় স্কুল-কলেজে অনুপস্থিত থাকে।
২০১১ সালের জাতীয় স্বাস্থ্য নীতিতে বলা হয়েছে , সবার জন্য প্রাথমিক স্বাস্থ্য ও জরুরি চিকিৎসা সেবা প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা, মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবার সহজ প্রাপ্যতা বৃদ্ধি ও বিস্তার করাই হবে এ নীতিমালার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। জনগণের নিজ পকেট হতে স্বাস্থ্য সেবার ব্যয় কমিয়ে আনা এবং স্বাস্থ্য ব্যয় হতে সুরক্ষা দেয়ার মাধ্যমে সরকার একটি সুখি সমৃদ্ধি জাতি নিয়ে ২০২১ সালে স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর উদযাপন করতে চায়।
সাধারণের দাবির প্রেক্ষিতে বলা যায়, স্যানিটারি ন্যাপকিনের দাম কমিয়ে সরকারের ২০১১ সালের ঘোষিত স্বাস্থ্য নীতির আলোকে ২০২১ সালের জন উর্বরতার লক্ষ্যকে পৌঁছার আরেকটি ধাপ ত্বরান্বিত হোক।