ওয়ার্ল্ড ফুড প্রাইজ সম্মানে ভূষিত স্যার ফজলে হাসান আবেদ বলেছেন, তার কর্মীদের জন্য স্বীকৃতি এই পুরস্কার। শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং কৃষিসহ নানা ক্ষেত্রে ব্র্যাকের পরিকল্পনার কথা জানিয়ে তিনি বলেছেন, সম্মিলিতভাবে বাংলাদেশ উন্নয়নের যে উদাহরণ গড়ছে; একদিন তা সারাবিশ্বে রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি পাবে।
মুক্তিযুদ্ধের পর স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২ সালে নতুন এক যুদ্ধ শুরু করেছিলেন ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদ। যুদ্ধপরবর্তী বিধ্বস্ত দেশে শুরুতে শুধুমাত্র একটা রিলিফ ফান্ড হিসেবেই কাজ শুরু করেছিলো ব্র্যাক। এরপর সেই ছোট্ট প্রতিষ্ঠানটিই ১৫ কোটি মানুষের ভাগ্য বদলের মাধ্যম হয়ে আজ ওয়ার্ল্ড ফুড পুরস্কারে ভূষিত স্যার আবেদ।
নিজের এবং ব্র্যাকের এই স্বীকৃতির দিন চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাতকারটি নিয়েছেন চ্যানেল আই’র পরিচালক ও বার্তা প্রধান এবং বূর্মা পদকে ভূষিত কৃষি ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজ।
শাইখ সিরাজ: দেশের জন্য এমন গৌরব বয়ে আনার জন্য এবং ১৫ কোটি মানুষের হাতে খাবার পৌঁছে দেওয়ার কাজের এমন স্বীকৃতির জন্য আপনাকে অনেক অভিনন্দন। পুরস্কারটি কবে নাগাদ আপনার হাতে তুলে দেওয়া হবে?
স্যার ফজলে হাসান আবেদ: অসংখ্য ধন্যবাদ। এই পুরস্কারটি অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে বিশ্ব খাদ্য দিবসে প্রদান করা হয়। এবারও সেই সময়েই প্রদান করা হবে। কাজের এই স্বীকৃতি আমাদের কর্মীদের কাজ করতে আরো অনেক বেশি উদ্বুদ্ধ করবে,সেটাই সবচেয়ে বেশি ভালো লাগার কারণ।
শাইখ সিরাজ: ব্র্যাক এখন একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা। আপনি জানেন, গতকালই নিম্ন মধ্য আয়ের দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে বাংলাদেশ। সেখানে বেসরকারি সংস্থাগুলোর ভূমিকাও অনেক। দেশের সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রগুলোতে ব্র্যাকের আর কি কি কাজ করার পরিকল্পনা রয়েছে?
স্যার ফজলে হাসান আবেদ: আমরা শিক্ষার মানোন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। পুষ্টিহীনতা নিয়েও কাজ করছি আমরা। প্রসূতি মায়েরা ২ বছর কি করে ব্রেস্ট ফিড করাবে সেটা নিয়েও কাজ করছি। আমাদের দেশের এক-তৃতীয়াংশ মানুষ খাটো থাকে। সেই পুষ্টিহীনতা দূর করতেও কাজ করছি আমরা।
বিকাশের মাধ্যমে কেবল যে টাকা পাঠানো যাবে তাই না। বরং বিকাশ দিয়ে ব্যাংক লোন বা সেভিংসও করা যাবে,এমন ব্যবস্থা আমরা করছি।
আপনি জানেন যে, স্বাস্থ্যের ব্যাপারে এদেশে এখনো অনেক কাজ করার আছে। দেশে কৃমিরোগীর সংখ্যা কম নয়। সেটা নিয়েও কাজ করে যাচ্ছি আমরা।
পানি ও স্যানিটেশন নিয়েও কাজ করছি। সবাই যেন স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট ও স্বাস্থ্যকর পানি পায় সেই চেষ্টাই করে চলেছি।
এসবের পাশাপাশি আরো অনেক কাজ আছে আমাদের হাতে। যেমন কিছু প্রশিক্ষণ জণগণকে দেওয়া যেন অন্যান্য দেশের সাথে তাল মিলিয়ে আমরা একসাথে কাজ করে দেশকে উন্নতির দিকে নিতে পারি।
তাছাড়া কৃষিতেও অনেক ভালো সম্ভাবনা রয়েছে আমাদের। খাদ্য উৎপাদনশীলতা আরো বাড়াতে কাজ করে চলেছি।
শাইখ সিরাজ: বর্গাচাষী ঋণ আপনাদের একটি বড় কার্যক্রম,সেটা নিয়ে আপনাদের বর্তমান অবস্থান বলুন।
স্যার ফজলে হাসান আবেদ: সেটা চলছেই। প্রতিবছরই বাড়ছে ঋণের পরিমাণ। এখন ৭০০ কোটি টাকার উপরে গেছে। আশা করি পরিমাণটা শিঘ্রই এক হাজার কোটিতে গিয়ে দাঁড়াবে। হয়তো আরো বাড়বে।
শাইখ সিরাজ: এতো গেলো দেশের প্রেক্ষাপটে কর্মপরিকল্পনা। দেশের শিক্ষা,স্যানিটেশন ও সামাজিক উন্নয়ন নিয়ে কথা হলো,দেশের বাইরেও তো আপনারা অনেক কাজ করছেন? আফগানিস্তানে,উগান্ডাতেও আপনাদের কাজ চলছে?
স্যার ফজলে হাসান আবেদ: সেটাও চলছে। ওসব দেশের সাথে বাংলাদেশ একযোগে কাজ করছে। আমরা হয়তো একটা সময় গিয়ে দেখিয়ে দিতে পারবো বাংলাদেশ যে উন্নয়নের মডেল তৈরি করেছে সেসব অন্যদেশেও কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে।
শাইখ সিরাজ: দেশের বায়োটেকনোলজি আবিস্কারগুলোওতো এখন দেশের বাইরে পাঠানো হচ্ছে?
ফজলে হাসান আবেদ: উগান্ডাতে আমরা একটা বায়োটেকনোলজি প্ল্যান্ট তৈরি করেছি। সেটা শিঘ্রই উৎপাদন শুরু হবে। আমরা এখানে যা শিখেছি তা ওখানে নিয়ে যাবো আবার অন্য দেশের শিক্ষা আমাদের দেশে নিয়ে আসবো। ভালো যেসব শিক্ষা সেসব আমরা অদল-বদল করতে চাই।
শাইখ সিরাজ: এই দেশের দারিদ্র বিমোচনে সরকারের পাশাপাশি এনজিওগুলোর অনেক বড় ভূমিকা রয়েছে। আপনার কি মনে হয় কবে নাগাদ দেশ থেকে দারিদ্র নির্মূল হতে পারবে?
স্যার ফজলে হাসান আবেদ: আশা করি ২০৩০ সালের মধ্যে। সেপ্টেম্বর মাসের দিকে জাতিসংঘ ঘোষণা করবে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা। ২০৩০’র মধ্যে যেসব লক্ষ্য অর্জন করতে হবে, সেটার মধ্যে প্রথমেই থাকবে দারিদ্র বিমোচন। এটাই যদি আমাদের প্রথম লক্ষ্য হয় তাহলে সবগুলো দেশই আরো জোরেসোরে কাজ করবে। এখনো তো প্রায় এক চতুর্থাংশ লোক দারিদ্র সীমার নীচে রয়ে গেছে। তাদের উঠিয়ে আনার জন্যও কাজ শুরু করতে হবে।
শাইখ সিরাজ: অসংখ্য ধন্যবাদ আমাদেরকে সময় দেওয়ার জন্য।
স্যার ফজলে হাসান আবেদ: আপনাকেও ধন্যবাদ।
(সাক্ষাতকারটি পুরো শুনতে নীচের লিংকে ক্লিক করুন)