আপনাকে ইদানীং অনেকেই অসামাজিক বলছে। এমনকি দায়িত্বহীন কিংবা অলস অপবাদও চাপছে ঘাড়ে। কিন্তু কেন? কেউ কেন বুঝতে পারছে না আপনাকে?
একটু ভালো করে ভেবে দেখুন তো কোনো কিছু নিয়ে খুব বেশি দুশ্চিন্তা করছেন কিনা। এমন তো হতে পারে আপনি দুশ্চিন্তায় হারিয়ে ফেলছেন নিজেকে। আর তাই আপনার হঠাৎ এই পরিবর্তন মেনে নিতে পারছেন না আপনার কাছের মানুষেরা। মিলিয়ে দেখুন তো নিচের ঘটনাগুলো আপনার সঙ্গেও ঘটছে কিনা।
যাওয়ার ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও না যাওয়া
এই তো সেদিনের কথা। বন্ধুর মেয়ের জন্মদিনের দাওয়াতে যাননি আপনি। বন্ধু ভীষণ রাগ আপনার ওপর। বন্ধুকে বোঝাতেই পারছেন না যে যাওয়ার খুব ইচ্ছে থাকলেও কেন যেন শেষ মুহূর্তে আর যাওয়া হয়নি। কিংবা বন্ধুদের সন্ধ্যার আড্ডার জন্য আপনাকে ফোন দেয়ায় ইচ্ছে করেই ফোনটা ধরলেন না। অথচ আপনার যাওয়ার ইচ্ছায় কোনো ঘাটতি ছিল না। যারা অতিরিক্ত দুশ্চিন্তাগ্রস্ত থাকেন তাদের ক্ষেত্রে প্রায়ই এমনটা হয়।
তুচ্ছ বিষয়ে অতিরিক্ত মাথা ঘামানো
সকালে অফিসে যাওয়ার সময় বাসের একটি লোক আপনার দিকে তাকিয়ে ছিল। এমন ভাবে তাকিয়ে ছিল যেন অনেক বছরের চেনা। কিন্তু তাকে চিনতে পারেননি আপনি? সে কে? সে কেন তাকিয়ে ছিল? সে কি চেনে আপনাকে? আপনি কি চেনেন তাকে? আরও হাজার প্রশ্ন আপনার মাথায় সারাদিন ঘুরপাক খাচ্ছে। এমনটা হয় অতিরিক্ত দুশ্চিন্তাগ্রস্ত মানুষের ক্ষেত্রে। আপনার আশে পাশের মানুষ হয়তো ভাবছে এত ছোট বিষয় নিয়ে সারাদিন ভাবছেন কেন আপনি। কিন্তু আপনার কাছে ছোট বিষয়টাই অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে চিন্তা করার জন্য।
দেরিতে ঘুম এবং খুব ভোরে ওঠা
সময় মতো বিছানায় শুয়েছেন। চোখও বুঝে রেখেছেন। কিন্তু ঘুম কোথায়? রাজ্যের চিন্তা যেন ঘুমের সময় আক্রমণ করে। তাই ঘুমাতে ঘুমাতে অনেক দেরি হয়ে যায়। আবার খুব সকালে ঘুম থেকে চমকে উঠে যান। ভোর থেকেই আবার শুরু হয় নানান রকম দুশ্চিন্তা।
সবচেয়ে খারাপটা ভেবে রাখা
খাগড়াছড়ি বেড়াতে যাচ্ছেন পরিবারের সঙ্গে। কিন্তু মুহূর্তগুলো উপভোগ করার বদলে আপনার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে অ্যাকসিডেন্ট হবে কিনা, গাড়ি নষ্ট হলে কোথায় যাবেন, ফেরার টিকেট ম্যানেজ হবে কিনা, হোটেলের রুম নিরাপদ কিনা ইত্যাদি নানান দুশ্চিন্তা। অর্থাৎ যে কোনো পরিস্থিতিতে সবচাইতে খারাপটিই ভাবা শুরু করেন আপনি। এমনকি একটা হাঁচি দিলেও আপনার মনে হয় কোনো মরণ ব্যাধি হয়েছে আপনার।
একই আলাপের কথা ভাবতে থাকা
কিছুক্ষণ আগেই একজনের সঙ্গে প্রথম পরিচয় হয়েছে। যা আলাপ করেছেন সেগুলোই মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। কোনো ভুল করেননি তো? কোনো কথা অতিরিক্ত বলেননি তো? এভাবে অনেকক্ষণ একই মানুষের সঙ্গে আলাপের মুহূর্তগুলো ঘুরপাক খেতে থাকে আপনার মস্তিষ্কে।
আপনার ব্যাপারে কেউ সচেতন হলে দুশ্চিন্তা আরও বেড়ে যায়
আপনাকে যদি কেউ জিজ্ঞেস করে ‘সব ঠিক আছে তো?’ তাহলে আপনার দুশ্চিন্তা আরও বেড়ে যায়। কারণ তখন আপনার মনে হতে থাকে যে আপনার এই অন্যমনস্ক ভাব এবং দুশ্চিন্তা এখন সকলের দৃষ্টিগোচর হয়ে গেছে। তাই নিজেকে নিয়ে আরও বেশি দুশ্চিন্তায় ডুবে যান আপনি।
নিজের ভুল ভাবা
কাউকে কোনো প্রশ্ন করে উত্তর না পেলে কিংবা কোনো প্রস্তাব দিয়ে সাড়া না পেলে নিজের ভুল ধরা শুরু করেন আপনি। আপনার মনে হতে থাকে আপনারই ভুল ছিল। তাই অপর পাশ থেকে সাড়া পাননি আপনি। অথচ অপর পক্ষ হয়তো আপনার প্রশ্ন খেয়ালই করেননি অথবা শোনেননি।
ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবলে ভেঙে পড়েন
ভবিষ্যৎ শব্দটিতে ভীষণ আতংক আপনার। আপনাকে কেউ ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জিজ্ঞেস করলে মুহূর্তেই এলোমেলো হয়ে যান আপনি। মনে মনে ভীষণ ভেঙে পড়েন দুশ্চিন্তায়।
নিজেদের বয়সীদের সফলতার সঙ্গে তুলনা
আপনার বয়সী বন্ধুরা এখন অনেক সফল। তাদের বেতনও আপনার চাইতে বেশি। তারা বিয়ে করেছে, সন্তান আছে। কিন্তু আপনার নেই। এসব নিয়ে নিজের সঙ্গে তাদের তুলনা করতে থাকেন সারাক্ষণ। নিজেকে খুব দুঃখী এবং অসফল ভাবেন সারাক্ষণ।
শারীরিক এবং মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত
মাঝে মাঝে বিছানা থেকেই উঠতে ইচ্ছে করে না। কারণ ওঠার শক্তিই থাকে না আপনার। নিজেকে শারীরিক এবং মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত মনে হয়। অতিরিক্ত দুশ্চিন্তার কারণে শরীরের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়। একারণে ভীষণ বিপর্যস্ত মনে হয় নিজেকে। কিউরিয়াস মাইন্ড ম্যাগাজিন।