চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

দুর্বল প্রতিবেদনে অন্যায় করেও পার পাচ্ছেন ক্রিকেটাররা

আইসিসির তত্ত্বাবধানে স্থানীয় আম্পায়ারদের গ্রেডিং

আউট হয়ে ড্রেসিংরুমে ফেরার পথে হেলমেট খুলে তাতে লাথি মেরে উড়িয়ে দিলেন লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের রকিবুল হাসান। সেই দৃশ্য ভাইরাল হলো নেট দুনিয়ায়। আরেক ম্যাচে প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবের শেখ মেহেদী হাসান বোল্ড হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যাট ছুঁড়ে মারলেন স্টাম্পের দিকে। অল্পের জন্য আবাহনীর উইকেটরক্ষক জাকের আলীর শরীরে আঘাত করেনি তা। তারপরও বড় কোনো বিতর্ক ছাড়াই বৃহস্পতিবার শেষ হয়েছে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ। তবে আম্পায়ারদের কিছু প্রশ্নবিদ্ধ সিদ্ধান্ত আর ক্রিকেটারদের অখেলোয়াড়সুলভ আচরণের চিত্র দেখা গেছে বেশ কয়েকবার।

রকিবুল একসময় বাংলাদেশ দলের হয়ে খেলেছেন, মেহেদী এখন খেলছেন। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে অভিজ্ঞ দুজন ক্রিকেটারই জানেন মাঠে অক্রিকেটীয় আচরণে শাস্তি অনিবার্য। তবে বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেট অনেকটাই ব্যতিক্রম। আম্পায়ারদের ভুল সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ মনে করে অনেকে এ রকম ঘটনা ঘটাচ্ছেন। আবার আউট হয়ে নিজের ওপর বিরক্তি প্রকাশ করতে গিয়েও আবেগ ধরে রাখতে না পেরে মাত্রা ছাড়াচ্ছেন। কিন্তু শাস্তি হচ্ছে না ফিল্ড আম্পায়াররা ম্যাচ রেফারির কাছে ঘটনাগুলোর রিপোর্ট না করায়। ফলে একের পর এক নেতিবাচক ঘটনা ঘটছেই। বদনাম হচ্ছে দেশের ক্রিকেটের।

ফিট থাকতে সবার আগে চিনি বাদ দিন, প্রাকৃতিক ও নিরাপদ জিরোক্যাল-এর মিষ্টি স্বাদ নিন।

কয়েকটি ঘটনায় আম্পায়ারদের শাস্তির আওতায় আনতে পেরেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) আম্পায়ার্স কমিটি। তবে খেলোয়াড়রা পার পেয়ে যাচ্ছেন আম্পায়ার, রেফারির ম্যাচ প্রতিবেদন দুর্বল হওয়ায়। এখানেও কাঠগড়ায় আম্পায়াররা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ম্যাচ চলাকালীন মাঠের নানা ঘটনার সত্যিকার চিত্র উঠে আসে না তাদের পাঠানো প্রতিবেদনে।

বিষয়টি স্বীকার করলেন আম্পায়ার্স কমিটির চেয়ারম্যান ইফতেখার রহমান মিঠু। চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে আলাপে তিনি বলেন, ‘আম্পায়ার-রেফারির প্রতিবেদনে বিষয়গুলো অনেক হালকা করে লেখা থাকে। যে কারণে আমরা শাস্তি দিতে পারি না। ম্যাচ অফিসিয়ালদের এক্ষেত্রে আরও পেশাদার হতে হবে। তাদেরকে আমরা ছাড় দেইনি। আন্তর্জাতিক আম্পায়ার মাসুদুর রহমান মুকুল যখন অবিশ্বাস্যভাবে ভুল করে বসল (আবেদন ছাড়াই এলবিডব্লিউ) তখন তাকে আমরা এক সপ্তাহের বিশ্রামে পাঠিয়েছি, কেননা মনঃসংযোগের অভাব হয়ত ছিল। যাদের নামে অভিযোগ ছিল তাদের অনেককেই আমরা ম্যাচ দেইনি। এভাবেই শাস্তি দিয়েছি।’

                                                   ইফতেখার রহমান, বিসিবি পরিচালক
                                                         চেয়ারম্যান,আম্পায়ার্স কমিটি

‘খেলোয়াড়দের আচরণে কোনো সমস্যা থাকলে সেটা এবং কারও কোনো শাস্তি হবে কিনা, সেসব জানাবেন রিপোর্টে। রেফারির সুপারিশ না পেলে কিছুই করার থাকে না কমিটির।’ এমন অসহায়ত্ব প্রকাশের পাশাপাশি কঠোর হওয়ার কথাও জানান কমিটির চেয়ারম্যান।

‘‘সবাইকে আমার রুমে ডেকে বলেছিলাম, উল্টা-পাল্টা হলে কেউ ম্যাচ পাবে না। ছয়-সাতজন ম্যাচ পায়নি। তখন টনক নড়েছে। সরাসরি তাদের ছেঁটে না ফেলে বলেছিলাম, আমি যত দিন আম্পায়ার্স কমিটিতে আছি ততদিন উল্টা-পাল্টা চলবে না।’’

আম্পায়ার্স কমিটির প্রধান ইফতেখার রহমান আম্পায়ার, রেফারিদের ওপর নাখোশ হয়েই বসে নেই। সমস্যার সমাধানে এরই মধ্যে ‍আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) কাছে সহযোগিতা চেয়েছেন। স্থানীয় আম্পায়ারদের মান অনুযায়ী গ্রেডিং করলে তারা পারফরম্যান্সের দিকে ধাবিত হবেন এবং ভুল কম করবেন তখন খেলোয়াড়দেরও আস্থা ফিরে আসবে, এমনটা মনে করেন তিনি।

‘‘সব পেশাতেই কিন্তু গ্রেডিং রয়েছে। মান যাচাই করার পদ্ধতি এটি। এত বছরেও গ্রেডিং হয়নি। ভালো-মন্দ যাচাই করার কোনো ব্যবস্থা এত দিনেও হয়নি। আইসিসির মাধ্যমে আম্পায়ার-রেফারিদের রিফ্রেশার ট্রেনিং কোর্সের পাফরম্যান্সের ভিত্তিতে গ্রেডিং করলে যেটি হবে, কেউ প্রশ্ন তুলতে পারবে না। ঈদের পরই আমরা এটি করব। তখন বুঝতে পারব কে কেমন আম্পায়ার। কাকে বড় ম্যাচে দিতে হবে, কাকে ছোট ম্যাচে দিতে হবে। তাদের পারফরম্যান্স লিপিবদ্ধ থাকবে। সে অনুযায়ী গ্রেডিংয়ে কারও প্রমোশন হবে কারও অবনমন ঘটবে।’’