চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

দুধ নিয়ে বিতর্ক বন্ধ করার উপায় কী?

দেশের বাজারে থাকা পাস্তুরিত ও অপাস্তুরিত দুধ নিয়ে বিতর্কের শুরু হয়েছিল বেশ কিছুদিন আগে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিক্যাল রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক ও ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক এ বি এম ফারুক দেশের বাজারে বিক্রি হওয়া বিভিন্ন কোম্পানির দুধ নিয়ে দুই দফা পরীক্ষা ও এর ফলাফল প্রকাশের পর দেশজুড়ে রীতিমতো আলোড়ন তৈরি হয়।

এরপর বিষয়টি হাইকোর্ট পর্যন্ত গড়িয়েছে। হাইকোর্টে রিটের পরিপ্রেক্ষিতে এসব দুধে মানুষের জন্য ক্ষতিকর পদার্থ রয়েছে বলে জানানোর পর হাইকোর্ট ১৪টি কোম্পানির পাস্তুরিত তরল দুধের উৎপাদন, সরবরাহ ও বিক্রি পাঁচ সপ্তাহের জন্য বন্ধের নির্দেশ দেন।

এরপর থেকে বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় আসে। এর পরিপ্রেক্ষিতে অধ্যাপক ফারুককে ব্যক্তিগত আক্রমণ করা থেকে শুরু করে নানা কটূক্তি করতে থাকে দুধ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। অপরদিকে জনস্বাস্থ্য বিবেচনায় অধ্যাপক ফারুকের পক্ষে অবস্থান নেয় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন।

তবে এই গবেষণার বিষয়ে শুরু থেকেই সরকারের একজন সচিবসহ নানা পর্যায়ের লোকজন কথাবার্তা বলে আসছেন। কৃষিমন্ত্রী, এমনকি রাস্তায় দুধ ঢেলে খামারীদের প্রতিবাদের পর এ বিষয়ে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী কথা বলেছেন।

তিনি দারিদ্র্য বিমোচনের এই কর্মসূচি বাধাগ্রস্ত করতে আমদানিকারকদের কোনো কারসাজি আছে কি না, সেটি দেখা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন। একইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন: যারা খামার করেছেন বা গরু পালন করছেন, তাদের কাছে থেকে দুধ কেনা হচ্ছে। এই মানুষগুলোর কাছে দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য মানুষকে গরু কিনে দিয়েছি। এই মানুষগুলো যদি দুধ বিক্রি করতে না পারে, অর্থ জোগাড় করতে না পারে, তা হলে গরুকে কী খাবার দেবে আর নিজে কীভাবে খাবার কিনে খাবে- এই বাস্তবতাটা চিন্তা করা দরকার।

প্রধানমন্ত্রীর এ কথা যৌক্তিক। হাইকোর্টও ইতোমধ্যে এ বিষয়ে বলেছেন: দেশীয় দুধ উৎপাদন-বিপণন বন্ধ হওয়ার কারণে বিদেশি গুঁড়া দুধে বাজার সয়লাব হোক কিংবা বিদেশি গুঁড়া দুধ বাংলাদেশের বাজার দখল করুক সেটা কাম্য নয়।

আমরাও এ বিষয়টা নজরে রাখতে সংশ্লিষ্টদের আহ্বান জানাচ্ছি। তবে দেশীয় শিল্প বাঁচানোর নামে জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর অ্যান্টিবায়োটিক মানবদেহে বিনা বাধায় প্রবেশের বিষয়টিও গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা মনে করি, দুধে অ্যান্টিবায়োটিকের বিষয়টি নিয়ে যেহেতু আলোচনা উঠেছে, তাই এ বিষয়ে আরও উচ্চতর গবেষণা হতে পারে। গো-খাদ্যে কিংবা গবাদি পশু মোটাতাজাকরণের নামে অসাধু খামারী বা সংশ্লিষ্টদের অপ্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার বন্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এছাড়া এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নীতিমালাসহ বিষয়টি প্রতিনিয়ত নজরদারির ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

দুধে ক্ষতিকর অ্যান্টিবায়োটিক বা খাদ্যে ভেজালের বিষয়ে কোনো ধরনের ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই বলেই আমরা মনে করি। বর্তমান সরকারও যেহেতু এ বিষয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, তাই পাল্টাপাল্টি অভিযোগ না করে এর গুরুত্ব বিবেচনায় শিগগিরই উচ্চতর গবেষণা জরুরি। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে আমরা সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।