ক্যাসিনো-কাণ্ডে আলোচিত যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া ও ঠিকাদার জিকে শামীমের অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
রোববার ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক মো. আল মামুন দু’জনকেই সাত দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।
যুবলীগ ঢাকা দক্ষিণের বহিষ্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া এবং যুবলীগ নেতা পরিচয়ে ঠিকাদারি ব্যবসা করে আসা জিকে শামীমকে এদিন আলাদাভাবে আদালতে হাজির করে ১০ দিন করে রিমান্ড চায় দুদক।
দুই মামলাতেই দুদকের পক্ষে রিমান্ড শুনানি করেন আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল।
অন্যদিকে খালেদের পক্ষে আইনজীবী মিজানুর রহমান মোল্লা এবং শামীমের পক্ষে গাজী মো. শাহ আলম রিমান্ডের বিরোধিতা করে জামিনের আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারক জামিন নাকচ করে দুজনকেই সাত দিন করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন।
এর আগে গত ২১ অক্টোবর এস এম গোলাম কিবরিয়া শামীম ও তার মা আয়েশা আক্তারের বিরুদ্ধে ২৯৭ কোটি আট লাখ ৯৯ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদকের উপ-পরিচালক মো. সালাহউদ্দিন বাদী এই মামলা করেন।
অন্যদিকে খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে পাঁচ কোটি ৫৮ লাখ ১৫ হাজার ৮৫৯ টাকার অবৈধ সম্পদের অর্জনের অভিযোগে উ-পপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে এ মামলা করেন।
মামলাগুলোয় আদালত যথাক্রমে আগামী ১৯ নভেম্বর এবং ১৮ নভেম্বর প্রতিবেদন দাখিলের ধার্য তারিখ ঠিক করেছে আদালত।
শামীমের মামলায় বলা হয়, ২০১৮-২০১৯ করবর্ষ পর্যন্ত আসামি শামীম ৫০ কোটি টাকার স্থাবর সম্পদের মালিক হয়েছেন। এর মধ্যে আয়কর নথিতে ৪০ কোটি ২১ লাখ ৪০ হাজার ৭৪৪ টাকার তথ্য উল্লেখ করলেও ওই টাকার বৈধ উৎস পায়নি দুদক। এ ছাড়া তার বাসা থেকে উদ্ধারকৃত নগদ এক কোটি ৮১ লাখ ২৮ হাজার টাকা ও সাত লাখ ৪৭ হাজার টাকার বিদেশি মুদ্রা, শামীম ও তার মা আয়েশা আক্তারের নামে ১৬৫ কোটি ২৭ লাখ ৬৫ হাজার টাকার এফডিআর, মায়ের নামে আরো ৪৩ কোটি ৫৭ লাখ ৪০ হাজার টাকার ব্যবসার অংশীদার এবং জি কে বি এন্ড কোম্পানির শেয়ার, গাড়ি ও এফডিআর বাবদ ৩৬ কোটি ৩৫ লাখ ১৮ হাজার ৭১৯ টাকার অস্থাবর সম্পদের বৈধ উৎসও পায়নি দুদক।
অন্যদিকে খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার মামলায় বলা হয়, এই আসামি চার কোটি ৫০ লাখ টাকার স্থাবর সম্পদ ও ৯০ লাখ ১৬ হাজার ৭০৯ টাকার অস্থাবর সম্পদের বৈধ উৎস পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া গত ১৮ সেপ্টেম্বর র্যাবের অভিযানে তার গুলশানের বাসা থেকে ১৭ লাখ ৯৯ হাজার ১৫০ টাকার বিভিন্ন দেশের মুদ্রা উদ্ধার করা হয়। যার কোনো উৎস দেখাতে পারেননি খালেদ। তাই তার বিরুদ্ধে মোট পাঁচ কোটি ৫৮ লাখ ১৫ হাজার ৮৫৯ টাকার অবৈধ সম্পদের অভিযোগ করা হয়েছে।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকার ক্লাবপাড়ায় অভিযান শুরুর প্রথমদিনেই গুলশানের বাসা থেকে খালেদকে গ্রেপ্তার হয়। তার বাসা থেকে পাওয়া যায় ৫৮৫টি ইয়াবা, বিপুল পরিমাণ বিদেশি মুদ্রা এবং অবৈধ অস্ত্র। একই সঙ্গে অভিযান চলে ফকিরাপুল ইয়ংমেনস ক্লাবে। সেখানে পাওয়া যায় মদ আর জুয়ার বিপুল আয়োজন ও ২৪ লাখ টাকা।
ওই ঘটনায় অস্ত্র, মাদক ও মুদ্রাপাচার আইনে খালেদের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা করা হয় গুলশান থানায়। আর মতিঝিল থানায় মাদক আইনে করা হয় আরেকটি মামলা।
২০ সেপ্টেম্বর জিকে শামীমকে গুলশানের নিকতনে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সেখান থেকে নগদ প্রায় দুই কোটি টাকা, পৌনে দুইশ কোটি টাকার এফডিআর, আগ্নেয়াস্ত্র ও মদ পাওয়ার কথা জানায় র্যাব। তখন শামীমের সঙ্গে তার সাত দেহরক্ষীকেও গ্রেপ্তার করা হয়। শামীমের বিরুদ্ধেও মাদক, মুদ্রা পাচার ও অস্ত্র আইনে তিনটি মামলা হয়েছে।