ঋণ কেলেঙ্কারীর অভিযোগে তৃতীয় দফায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তলবের বিষয়ে কোনো কিছু বলতে রাজী হননি বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল হাই বাচ্চু। যদিও প্রথম দফায় দুদকের জিজ্ঞাসাবাদের পর নিজেকে নির্দোষ বলে সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেছেন তিনি।
সোমবার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তৃতীয় দফায় বাচ্চুকে তলব করা হলে তিনি দুপুরের দিকে দুদকে হাজির হন।
এ দিন সরেজমিনে দেখা গেছে, দুপুর ২টার দিকে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় কমিশনের সামনে এসে গাড়ি থেকে নেমেই খুব দ্রুত দুদক কার্যালয়ে প্রবেশ করেন শেখ আব্দুল হাই বাচ্চু। এ সময় বেসিক ব্যাংকের দুর্নীতির বিষয়ে সাংবাদিকরা কথা বলতে চাইলে তিনি, নো নো বলে কমিশনের জিজ্ঞাসাবাদ কক্ষের দিকে দ্রুত চলে যান।
দুদককে জবাবদিহির পর পৌনে পাঁচটার দিকে ঠিক প্রবেশের মতোই একইভাবে দ্রুত দুদক কার্যালয় থেকে বের হয়ে চলে যান বাচ্চু। মাঝখানে প্রায় তিন ঘন্টা দুদকের মুখোমুখি ছিলেন সাবেক এই ব্যাংক কর্মকর্তা।
কমিশনের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে তাকে জিজ্ঞাবাদ করা হয় বলে জানান দুদক উপ-পরিচালক (জনসংযোগ) প্রনব কুমার ভট্টাচার্য।
প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার ঋণ কেলেঙ্কারির অভিযোগের তদন্ত করতে তৃতীয় দফায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে তলব করা হয়।
এর আগে রোববার দুদক থেকে একটি নোটিশের মাধ্যমে তাকে সোমবার সকাল ৯টায় হাজির হতে বলা হলেও ৫ ঘন্টা দেরি করে তিনি দুপুর ২টায় আসেন।
তৃতীয় দফা তলবে দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে শেখ আব্দুল হাই বাচ্চু কিছু বলেছেন কি না জানতে চাইলে প্রনব কুমার ভট্টাচার্য চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে এখন কিছু বলা যাবে না। তদন্তের স্বার্থে দুদক প্রয়োজনীয় তথ্য জানতে চেয়েছে তার (বাচ্চু) কাছে।
বাচ্চুকে দুদকে আর তলব করা হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, তদন্ত যেহেতু শেষ হয়নি, প্রয়োজনে আবারও ডাকা হতে পারে।
এর আগে বেসিক ব্যাংকের সাবেক এই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে কবে নাগাদ চার্জশিট হতে পারে জানতে চাইলে দুদকের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, এর জন্য অপেক্ষা করতে হবে। তবে আমি যেহেতু তদন্ত কর্মকর্তা নই তাই স্পষ্ট করে বলতে পারবো না। যারা তদন্ত করছেন তারা বিষয়টি ভাল বলতে পারবেন।
দুই দফা জিজ্ঞাসাবাদের পর বাচ্চুকে তৃতীয় দফায় গত ১৭ ডিসেম্বর দুদকে উপস্থিত হতে বলা হয়েছিল। তখন ‘অসুস্থতার’ কারণ দেখিয়ে এক মাস সময় চেয়ে আবেদন জানালে দুদক তা প্রত্যাখ্যান করে ফের তাকে তলব করে।
বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারির দায়ে দুদকে গত ৪ ডিসেম্বর প্রথম হাজির হন জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য বাচ্চু। একদিন বিরতি দিয়ে ৬ ডিসেম্বর প্রায় সাত ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় তাকে।
২০০৯ সালে রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দেয়া হয় বাচ্চুকে। এরপর ২০০৯ সাল থেকে ২০১২ সালের মধ্যে ব্যাংকটির গুলশান, দিলকুশা ও শান্তিনগর শাখা থেকে মোট সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা ঋণ অনিয়মের মাধ্যমে বিতরণের অভিযোগ ওঠে। এরপর তদন্তে নামে দুদক। পরে ২০১৪ সালে চাপের মুখে তিনি পদত্যাগ করেন।
তিনি চেয়ারম্যান থাকাকালে ব্যাংকটির ঋণ বিতরণে অনিয়মের ঘটনায় ৫৬টি মামলা করে দুদক। দুই দিনে ৫৬টি মামলার মধ্যে ১৫টির বিষয়ে দুদকের তদন্ত কর্মকর্তারা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
গ্রাহকদের তথ্য যাচাই বাছাই না করে বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে ঋণ বিতরণের অভিযোগ ওঠে ব্যাংকটির তৎকালীন পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে।
প্রায় চার বছর অনুসন্ধান শেষে এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির ঘটনায় গত বছর রাজাধানীর তিনটি থানায় ১৫৬ জনকে আসামি করে ৫৬টি মামলা করে দুদক। আসামিদের মধ্যে ২৬ জন ব্যাংক কর্মকর্তা এবং বাকিরা ঋণ গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংক জরিপ প্রতিষ্ঠানে যুক্ত।