করোনা পরিস্থিতির কারণে দুই সপ্তাহ পিছিয়ে অমর একুশে বইমেলার পর্দা উঠলো মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়ারি)। বিকেল ৩টায় প্রধান অতিথি হিসেবে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি এই মেলার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ফেব্রুয়ারির শুরুর দিন থেকেই মাসব্যাপী একুশে বইমেলা শুরুর রেওয়াজ থাকলেও করোনার কারণে এবার তা হচ্ছে না। এবার মেলার ৩৮তম আসর চলবে ১৪ দিন, শেষ হবে ২৮ ফেব্রুয়ারি। তবে দেশে করোনা সংক্রমণের হার কমলে মেলার দিন বাড়ানো হতে পারে বলে জানিয়েছেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ।
অমর একুশে বইমেলার এবারের প্রতিপাদ্য ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী’।
মেলা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানাতে সোমবার সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলা একাডেমি। জানানো হয়, বইমেলা ১৫-২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন বেলা ২টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। রাত সাড়ে ৮টার পর নতুন করে কেউ মেলা প্রাঙ্গণে ঢুকতে পারবে না। ছুটির দিন মেলা চলবে বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। ২১ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টায় শুরু হয়ে মেলা চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রায় সাড়ে ৭ লাখ বর্গফুট জায়গাজুড়ে এবারের বইমেলা বিস্তৃত। এর মধ্যে একাডেমি প্রাঙ্গণে ১০২টি প্রতিষ্ঠানকে ১৪২টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৪৩২টি প্রতিষ্ঠানকে ৬৩৪টি ইউনিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে মোট ৫৩৪টি প্রতিষ্ঠান ৭৭৬টি ইউনিট বরাদ্দ পেয়েছে। এবারের মেলায় প্যাভিলিয়ন রয়েছে ৩৫টি। লিটল ম্যাগাজিন চত্বর স্থানান্তরিত হয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের এম্ফি থিয়েটারের পূর্ব দিকে মেলার মূল প্রাঙ্গণে। সেখানে ১২৭টি লিটল ম্যাগকে স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বইমেলায় বাংলা একাডেমি এবং মেলায় অংশগ্রহণকারী অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ২৫ শতাংশ কমিশনে বই বিক্রি করবে।
বাংলা একাডেমির ৩টি প্যাভিলিয়ন, শিশু-কিশোর উপযোগী বইয়ের জন্য ১টি এবং সাহিত্য মাসিক উত্তরাধিকার-এর ১টি স্টল থাকবে। এবারও শিশুচত্বর মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে থাকবে। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে প্রথম দিকে ‘শিশুপ্রহর’ থাকবে না।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা থাকবে। মেলার প্রচার কার্যক্রমের জন্য একাডেমিতে বর্ধমান ভবনের পশ্চিম বেদিতে ১টি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ২টি তথ্যকেন্দ্র থাকবে। মেলা প্রাঙ্গণ থেকে বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল মেলার তথ্য প্রতিদিন সরাসরি সম্প্রচার করবে। এফ এম রেডিওগুলোও মেলার তথ্য প্রচার করবে। বইমেলার খবর নিয়ে প্রতিদিন বেশ কয়েকটি বুলেটিন প্রকাশিত হবে। এর বাইরে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম প্রতিদিন মেলার তথ্য প্রচার করবে। বইমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৪টি প্রবেশপথ ও ৩টি বাহিরপথ থাকবে।
মেলার সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনে নিয়োজিত আছে পুলিশ, র্যাব, আনসার, বিজিবি ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। নিরাপত্তার জন্য মেলা প্রাঙ্গণজুড়ে তিনশোর বেশি ক্লোজসার্কিট ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে।
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী নিয়ে প্রতিদিন বিকেল ৪টায় বইমেলার মূল মঞ্চে সেমিনার হবে। প্রতিদিন সন্ধ্যায় থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ২০২২ সালের বইমেলায় প্রকাশিত বইয়ের মধ্য থেকে গুণগতমান বিচারে সেরা বইয়ের জন্য প্রকাশককে ‘চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার’ এবং শৈল্পিক বিচারে সেরা বই প্রকাশের জন্য ৩টি প্রতিষ্ঠানকে ‘মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ দেওয়া হবে।
এ ছাড়া ২০২২ সালে প্রকাশিত শিশুতোষ বইয়ের মধ্য থেকে গুণগত মান বিচারে সর্বাধিক বইয়ের জন্য ১টি প্রতিষ্ঠানকে ‘রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার’ এবং এ বছরের মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের মধ্য থেকে স্টলের নান্দনিক সাজসজ্জায় শ্রেষ্ঠ বিবেচিত প্রতিষ্ঠানকে ‘কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ দেওয়া হবে। এবারের মেলায় বাংলা একাডেমি প্রকাশ করছে নতুন ও পুনর্মুদ্রিত ১০৭টি বই।