চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

দা-ছুরি তৈরিতে ব্যস্ত থাকলেও বেচাকেনা জমেনি কামারশালায়

‘কল্লাকাটা’ গুজবের কারণে ঈদেও জমেনি দা-বটির বেচাকেনা

পথে পথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভয় আর ‘কল্লাকাটা’ গুজবের কারণে দূরের মানুষ পশু জবাইয়ের ভারি অস্ত্র কিনতে আসছে না। যারা আসছেন তারা শুধু ছোটখাটো অস্ত্র কিনেই চলে যাচ্ছেন। ফলে এ বছর কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে কামারশালায় আগের মত দা-ছুরির জমজমাট বেচাকেনা নেই।

রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মিরপুরসহ কয়েকটি কামারপট্টির কর্মকারদের সাথে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।

তবে তাদের প্রত্যাশা, ঈদের ২/১ দিন আগে বেচাকেনা চাঙ্গা হবে। কারণ মানুষ পশু কেনার পরেই পশু জবাইয়ের সরঞ্জাম বা যন্ত্র কিনতে আসেন।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মিরপুরসহ কয়েকটি কামারপট্টিতে গিয়ে দেখা গেছে, আগুনে পুড়িয়ে নরম করা টকটকে লাল লোহা পিটিয়ে পশু জবাইয়ের বিভিন্ন যন্ত্র তৈরিতে ব্যস্ত কামাররা। লোহায় একের পর এক আঘাত করে তারা তৈরি করছেন বিভিন্ন আকৃতির যন্ত্র। আর থরে থরে ক্রেতার অপেক্ষায় সাজিয়ে রেখেছেন সেসব যন্ত্র।

রাজধানীর সবচেয়ে বড় কামারশালা কারওয়ান বাজার। এখানে প্রায় ২৫ থেকে ৩০টি কর্মকারের দোকান রয়েছে।

এই বাজারের মহিন উদ্দিন নামের একজন কর্মকার চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, আগে মানুষ শহর থেকে গ্রামে যাওয়ার সময় দা-ছুরি কিনে নিয়ে যেত। দূর থেকে অনেক কাস্টমার আসতো। কিন্তু এখন পুলিশের ভয়ে আসছে না। কারণ দূর থেকে এ ধরনের সরঞ্জাম কিনে নিয়ে যাওয়ার সময় পথে পথে পুলিশের বিভিন্ন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়।

‘‘এর মধ্যে এবার ‘কল্লাকাটা’ গুজবের কারণে অনেকে দূর থেকে আসছে না। গত কয়েকদিনে ১০ থেকে ১৫ জন কাস্টমার এ ধরনের ভয়ের কথা বলেছেন। তারা নিজ নিজ এলাকা থেকে বড় ছুরি কিনবেন বলেও জানিয়েছেন। তবে বড় যন্ত্র না নিলেও ছোট ধরনের কিছু যন্ত্র কিনছেন ক্রেতারা।’’

মা জননী ভোলা সদর কর্মশালার একজন বিক্রেতা বলেন, অনেকে ভয়ে কিনতে আসে না। কিন্তু আমরা ক্যাশ মেমো দিয়ে এসব সরঞ্জাম বিক্রি করি। যাতে কাউকে যাওয়ার পথে হয়রানি না হতে হয়।

কর্মকার মালিক সমিতির সভাপতি মো. হারুনুর রশীদ চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, অন্যান্য বছরে ঈদের ১৫/২০ আগেই যন্ত্র তৈরি আদেশ পেতাম। এ বছর তেমন একটা পাওয়া যায়নি।

পশু জবাই ও চামড়া ছাড়ানোর বিভিন্ন ধরনের যন্ত্র তৈরি করেছি। ২/১ দিনের মধ্যেই মূল বেচাকেনা হবে আশাকরি।তবে কয়লার দাম বেশি থাকায় অস্বস্তিতে রয়েছেন কর্মকাররা।

এ বিষয়ে হারুনুর রশীদ বলেন, আগে পাথর কয়লার বস্তা কেনা যেত ১২শ থেকে ১৩শ টাকায়। এখন তা কেনার জন্য গুণতে হচ্ছে ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২শ টাকা। এছাড়া এছাড়া কাঠকয়লা আগে ৪শ থেকে ৫শ টাকায় কেনা গেলেও এখন তা কিনতে লাগে ৯শ থেকে ১ হাজার টাকা।

কর্মকাররা জানিয়েছেন, তাদের কাছে দা, ছেনি, গরু জবাইয়ের ছুরি, চামড়া ছাড়ানোর ছুরি, কামেলা ছুরি, চাইনিজ ছুরি, চাপাতি, স্টিলস (ছুরি থেকে চর্বি সরানোর যন্ত্র) ১৩০ ধরনের সরঞ্জাম রয়েছে।

শুধু তাই নয়, ঈদে কোরবানি পশু জবাই থেকে শুরু করে রান্নার চূড়ান্ত প্রস্তুতি পর্যন্ত দা, বটি, ছুরি, ছোরা, ইত্যাদি ধাতব হাতিয়ার তৈরি করে রেখেছেন কামাররা।

দা-ছুরির দাম কেমন জানতে চাইলে বিক্রেতারা জানান, প্রতি পিস চাপাতি বিক্রি হচ্ছে ৫শ থেকে ১ হাজার টাকা, চামড়া তোলার ছুরি ১শ থেকে ২৫০ টাকা, পশু জবাই করার ছুরি ৩শ থেকে ১২শ টাকা, চাইনিজ কুড়াল ৫শ থেকে ৭শ টাকা, ছুরি ধার করার বা ছুরি থেকে চর্বি সরানোর স্টিল প্রতি পিস ৫০ টাকা, দা ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা, বটি ২শ থেকে ৫শ টাকা।

রাজধানীর সবচেয়ে বড় পাইকারি মার্কেট কারওয়ান বাজারে দা, ছুরি, বটিসহ সব যন্ত্রই পাওয়া যায়। এছাড়া নিউ মার্কেট, গুলশান-১ ডিসিসি মার্কেট, চকবাজার, কাপ্তান বাজার, খিলগাঁও বাজার, মিরপুর-১ নম্বরসহ সিটি কর্পোরেশনের প্রায় সব মার্কেটে পাওয়া যাবে এসব যন্ত্র।