দুই বাসের মধ্যে পড়ে হাত হারানোর পর রাজীবের মৃত্যুতে তার দুই ভাইকে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
তবে ওই দুর্ঘটনার বিষয়টি তদন্ত করে দায় নিরূপণ করতে একটি নিরপেক্ষ কমিটি করতে আদেশ প্রদান করে হাইকোর্ট বেঞ্চকে নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ।
সেই সাথে ওই কমিটিকে আগামি ৩০ জুনের মধ্যে হাইকোর্টে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেছে আপিল বিভাগ। এবং ঐ প্রতিবেদনের আলোকে সংশ্লিষ্ট হাইকোর্ট বেঞ্চকে রাজীবের দুই ভাইয়ের জন্য পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করতে আদেশ দিয়েছেন।
রাজীবের ভাইদের এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে বিআরটিসি ও স্বজন পরিবহনের করা আবেদন নিস্পত্তি করে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ মঙ্গলবার এই আদেশ দেন।
ক্ষতিপূরণের আবেদনের উপর আপিল বিভাগে শুনানিতে বিআরটিসির পক্ষের আইনজীবী এ বি এম বায়েজিদ বলেন, তারা ওই দুর্ঘটনার জন্য দায়ী না। স্বজন পরিবহনের গাড়িটি ওইদিন বাম দিক থেকে ওভারটেক করে এসে বিআরটিসি’র গাড়িসহ রাজীবকে ধাক্কা দেয়।
আর স্বজন পরিবহনের পক্ষের আইনজীবী পংকজ কুমার কুণ্ড আদালতকে বলেন, স্বজন কোম্পানি ওই গাড়ির মালিক না। গাড়িটি স্বজনকে প্রতি মাসে ৬ হাজার টাকা দিত। এবং ‘স্বজন’ নামের ব্যানার দিয়ে চলত। আসাদুজ্জামান রাজু নামের একজন ওই গাড়ির মালিক। স্বজন পরিবহনের পক্ষের আরেক আইনজীবী আব্দুল মতিন খসরু বলেন, আমরা বলছি ওই ঘটনাটা হৃদয় বিদারক। কিন্তু আমরা আপাতত ৫ লক্ষ টাকা জমা দিতে চাই।
এদিকে রাজীবের ক্ষতিপূরণের পক্ষে থাকা আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল আপিল বিভাগকে বলেন, হাইকোর্ট বিভাগ রুলে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের কথা বলেছেন। এবং টাকা জমা রাখার জন্য এরই মধ্যে একটা যৌথ এ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে।
এরপর আদালত বলেন, ‘কারো ওপর অবিচার হোক আমরা তা চাই না। হাইকোর্টের আদেশটা সংশোধন করতে হবে।’
এর আগে গত ৮ মে বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও বিচারপতি একেএম জহিরুল হকের নেতৃত্বহীন হাইকোর্ট বেঞ্চ রাজীবের দুই ভাইকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ১ কোটি টাকা দেয়ার নির্দেশ দেন। বিআরটিসি ও ‘স্বজন পরিবহন’কে ৫০ লাখ করে মোট এক কোটি টাকা দিতে ওই আদেশে বলা হয়।
হাইকোর্টের আদেশ অনুযায়ী আগামী এক মাসের মধ্যে ওই দুই বাস কর্তৃপক্ষকে ২৫ লাখ করে মোট ৫০ লাখ টাকা পরিশোধের পর আদালতকে অবহিত করতে বলা হয়। সোনালী ব্যাংক মতিঝিল শাখায় রাজীবের খালা ও রাজীবের গ্রামের এক কর্মকর্তা ওমর ফারুকের নামে যৌথ অ্যাকাউন্ট খুলে সেখানে এই টাকা রাখতে বলেন আদালত। আগামী ২৫ জুন আদালত পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেন।
গত ৩ এপ্রিল বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের সার্ক ফোয়ারার সামনে দুই বাসের মাঝে পড়ে তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী রাজীব হোসেনের হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
বাংলামোটর থেকে ফার্মগেটমুখী বিআরটিসির একটি দোতলা বাসে ছিলেন রাজীব। সেটি সার্ক ফোয়ারার কাছে পান্থকুঞ্জের পাশে সিগন্যালে এসে থামে। এ সময় একই দিক থেকে আসা স্বজন পরিবহনের একটি বাস দ্রুতগতিতে দোতলা বাসের পাশের ফাঁক দিয়ে সামনে যাওয়ার চেষ্টা করে।
ওই সময় রাজীবের ডান হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে দুই বাসের মধ্যে ঝুলতে থাকে। রাজীবকে প্রথমে পান্থপথের শমরিতা হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়।
পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এই ঘটনা নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর ৪ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলের এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশনার পাশাপাশি রুল জারি করেন।
পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাজীবের মৃত্যু হলে এই তথ্যসহ আদালতে একটি সম্পূরক আবেদন করেন ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। সে আবেদনে রাজীবের ভাইদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার আবেদন করা হলে হাইকোর্ট ১ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের আদেশ দেন।
তবে এই আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করে বিআরটিসি ও স্বজন পরিবহন।