চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

রাষ্ট্রপতির জন্য শুভ কামনা

দেশের ২১তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নিয়েছেন মো. আবদুল হামিদ। এর মধ্যে দিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো এ পদে অধিষ্ঠিত হয়ে ইতিহাসের পাতায় নাম লেখালেন তিনি।

২০১৩ সালে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন থাকার সময় কিছুদিনের জন্য ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন সেই সময়ে জাতীয় সংসদের স্পিকার আবদুল হামিদ। জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পর ২২ এপ্রিল বাংলাদেশের ২০তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন তিনি। সেই মেয়াদ শেষ হয় চলতি বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি। এরপর ২১তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে পুনর্নিবাচিত হন আবদুল হামিদ।

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সেই ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতিতে জড়িত। পরবর্তীতে আইন পেশায় এসেও রাজনীতি ছাড়তে পারেননি। তুমুল জনপ্রিয় ছিলেন বলেই আওয়ামী লীগ প্রার্থী হিসেবে কিশোরগঞ্জ-৪ আসন থেকে ৭ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এরই মধ্যে তিনি জাতীয় সংসদের স্পিকার এবং ডেপুটি স্পিকারের দায়িত্ব পালন করেছেন। ছিলেন সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতাও।

একাত্তরের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধেও তিনি রেখেছেন বিশেষ অবদান, এ জন্য তাকে ২০১৩ সালে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করা হয়। মূলত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং আওয়ামী লীগের প্রতি তার অকৃতিম ভালোবাসার কারণে তৃণমূল থেকে উঠে আসা এই রাজনীতিবিদ আসীন হয়েছেন দেশের সর্বোচ্চ পদে।

কথিত আছে, সংসদীয় সরকার ব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা শুধুমাত্র সরকারের নির্বাহী আদেশে সম্মতি প্রদানের মধ্যে সীমাবদ্ধ। এ বিষয়ে কোনো বিতর্কে যাওয়া ঠিক না বলে আমাদের মনে হয়েছে। বর্তমান ব্যবস্থাতেও তাকে যথেষ্ট দায়িত্ব পালন করতে হয় এবং দেশের যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনে রাষ্ট্রপতি অনেক কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেন।

রাষ্ট্রপতি দেশের আইনবিভাগ, শাসনবিভাগ এবং বিচারবিভাগের আনুষ্ঠানিক প্রধান। এখানেই শেষ নয়, সামরিক বাহিনীর সর্বাধিনায়কও তিনিই। এর বাইরেও কোনো দণ্ডিত ব্যক্তির দণ্ডাদেশ বাতিল, স্থগিত, কমানো এমনকি ক্ষমা করার সর্বশেষ সাংবিধানিক অধিকারও তার আছে। এছাড়াও দেশের সরকারি বা বেসরকারি প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবকও রাষ্ট্রপতি।

এতকিছুর পরও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা, এ পদে নির্বাচন পদ্ধতি এবং অনেকক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়ে বহুবিতর্ক রয়েছে। যার শুরু হয়েছে মূলত ১৯৯১ সালে দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র চালু হওয়ার পর থেকে।

এরঅাগ পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হতেন। যদিও ১৯৭২ সালের পর সংসদ সদস্যদের গোপন ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করার বিধান ছিল। কিন্তু পরে তা বাতিল করা হয়। বর্তমান রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতিতে শাসক দলের মনোনীত প্রার্থীই রাষ্ট্রপতি হয়ে থাকেন। যে কারণে অনেকেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এ পদে নির্বাচিত হন।

বর্তমানে রাষ্ট্রপতি পদের নানা সাংবিধানিক সীমাবদ্ধতার পরও আমরা বলতে চাই; অনেক ক্ষেত্রেই বিবেক, বুদ্ধি ও অভিজ্ঞতা দিয়ে ভালো-মন্দের বিভেদ করাটা খুব একটা কঠিন নয়। দেশের কোনো মানবিক প্রয়োজন বা সংকটময় মুহূর্তে রাষ্ট্রপতিকে সেই দায়িত্ব নিরপেক্ষভাবেই পালন করতে হয়।

আমরা মনে করি, নিরপেক্ষ ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত আবদুল হামিদ তার সেই দায়িত্ব শুধু আইন দিয়েই নয়; বিবেক এবং হৃদয় দিয়েও পালন করবেন। আমাদের আশাবাদ, তিনি তার দায়িত্ব পালনে সফল হবেন। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের জন্য শুভ কামনা।