ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের অন্যতম একটি ‘যাকাত’। শরীয়তে যাকাত ফরজ হওয়ার অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে, দারিদ্র্য বিমোচন। কুরআন শরীফের সিংহভাগ জায়গায় নামাজের সাথে যাকাতের সুস্পষ্ট উল্লেখ আছে।
নামাজ এবং যাকাত উভয়ই সমগুরুত্ব বহন করে। এজন্যই হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে যায়দ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, “নামাজ ও যাকাতের মধ্যে কোনোরূপ পার্থক্য করা হয়নি” (ই.ফা.বা. ; দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম, ৩১৮)।
যাকাতের হকদার কারা? যাকাত কাদের প্রাপ্য? কুরআন শরীফে আল্লাহতায়ালা আট শ্রেণীর লোকের কথা উল্লেখ করেছেন। যা হলো :
(১) ফকির-গরিব, হতদরিদ্র।
(২) মিসকীন- নিঃস্ব, অসহায়।
(৩) যাকাতের কাজে নিযুক্ত কর্মচারী।
(৪) নও-মুসলিমকে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করতে।
(৫) দাস মুক্তকরণে।
(৬) ঋণগ্রস্থদের ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা।
(৭) আল্লাহর পথে ব্যয়।
(৮) মুসাফির।
লক্ষ্য করে দেখুন, দাস ও মুসাফির বর্তমান সমাজব্যবস্থায় নেই। বাকি ৬ শ্রেণীর ৪টিই দারিদ্র্যতার সাথে সম্পৃক্ত। তাই নির্দ্বিধায় স্বীকার করতে হবে যে, দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্য সামনে রেখেই ইসলাম ‘যাকাত’ ফরজ করেছে।
যার নিকট ১ লক্ষ টাকা আছে তার যাকাত ২ হাজার ৫০০ টাকা। ১০ লক্ষ হলে ২৫ হাজার। প্রতিটা এলাকায় কি ১০ লক্ষ টাকার ধনী নেই? অবশ্যই আছে। অধিকাংশ এলাকায় একাধিক আছে। তারা যদি তাদের যাকাতের অর্থ ব্যয়ের মাধ্যমে দুই-তিনটি পরিবারের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেয় তাহলে কেমন হয়? চমৎকার না? হ্যাঁ, তবে কেউ করে না! ধরুন, ২৫ হাজার টাকায় একটা ছোটখাটো দোকান করে দিলেন।
দুইটি অসহায় পরিবার থেকে দুইজনকে মালিকানা কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ দিয়ে দিন। একটি পরিবারকে ১০ হাজার টাকা পুঁজি দিয়ে একটা ভালো ব্যবসায় সংযুক্ত করলেন। এভাবে আমরা যদি পরিকল্পনা মাফিক যাকাত প্রদানে অগ্রগামী হই তাহলে সমাজে সর্বোচ্চ পাঁচ বৎসরে ‘দারিদ্র্যতা’ হাওয়ায় মিলিয়ে যাবে।
বর্তমান সমাজে দারিদ্রের হার এতটা বেশি নয়, মোটামুটি। এই মোটামুটি অবস্থার দারিদ্র্যতাও নিশ্চিহ্ন হতো যদি সকলে সঠিক নিয়মে যাকাত প্রদান করত। যাকাতের প্রতি অবহেলা আর অবজ্ঞাই আজকের সমাজে দারিদ্র্যতা লালনের মূলে জড়িত। কিন্তু এটা তো অবহেলার বিষয় নয়!
যাকাত প্রদানে অস্বীকারকারীদের সাথে হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু যুদ্ধ পর্যন্ত করেছেন। যাকাত না দিয়ে যারা সম্পদ সংরক্ষণ করে তাদেরকে জাহান্নামের আগুন দ্বারা কপাল, পার্শ্বদেশ ও পিঠে দাগ দেওয়া হবে। আর বলা হবে, এটা তোমাদের সেই সম্পদ যা তোমরা জমা রেখেছিলে। (সূরা তাওবা; ৯ : ৩৪,৩৫)
যাকাত দিতে অস্বীকারকারীদের কঠিন দুর্ভিক্ষে পতিত হবার ভয়াল সংবাদ হাদিস শরীফে এসেছে। সহীহুল বুখারীতে রয়েছে, “যে মালের সাথে যাকাত মিশ্রিত হয়, সে মালকে যাকাত ধ্বংস করে দেয়”। যাকাত ইসলামের অন্যতম একটি স্তম্ভ।
যার অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য, সমাজের দারিদ্র্যতা দূর করে সমভাবে সকলে বসবাস করা। আমাদের দেশের প্রতিটি স্তরের সকলে যদি নির্ধারিত নিয়ম-নীতি মেনে প্রতি বৎসর যাকাত প্রদান করত তাহলে আজকের সমাজে অণুবীক্ষণ যন্ত্র দ্বারাও ‘দরিদ্র’ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হতো।
এটা শুধুমাত্র মুসলমানদের জন্য নয়! অমুসলিমদেরকেও যাকাত দেওয়ার বিধান ইসলামে রয়েছে। তাই সমাজের সর্বপ্রকার দারিদ্র্যতা দূরীকরণে বিধি মোতাবেক যাকাত প্রদান এবং ইসলামি রীতিনীতি পালনের বিকল্প নেই।