২০২২ সালের মধ্যে দাঁতের চিকিৎসায় বিষাক্ত পারদ (মার্কারি অ্যামালগাম) ব্যবহার বন্ধের দাবি জানিয়েছে দন্ত চিকিৎসকরা।
ইতোমধ্যে দেশের প্রায় ৯৫.৭০ শতাংশ ডেন্টিস্ট দাঁতের চিকিৎসায় বিষাক্ত পারদের ব্যবহার বন্ধ করেছে।
বুধবার ২৩ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ডেন্টাল সোসাইটি- বিডিএস এবং পরিবেশ অধিদপ্তর-এর সহযোগিতায় এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন- এসডো ‘কান্ট্রি সিচুয়েশন রিপোর্ট অন ফেজিং আউট মার্কারি অ্যামালগাম’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনটি একটি হাই লেভেল পলিসি ডায়লগের মাধ্যমে তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার।
সম্প্রতি এসডো, বিডিএস এবং এশিয়ান সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল হেলথের সহযোগিতায় এবং ওয়ার্ল্ড অ্যালায়েন্স ফর মার্কারি-ফ্রি ডেন্টিস্ট্রির সহায়তায়, বর্তমানে বাংলাদেশে মার্কারি অ্যামালগাম ব্যবহারকারী ডেন্টিস্টদের সংখ্যা মূল্যায়ন করার জন্য একটি জরিপ পরিচালনা করে। গবেষণার ফলাফল থেকে দেখা গিয়েছে যে, নিবন্ধিত নয় হাজার ৮৬ ডেন্টিস্টদের মধ্যে, আট হাজার ৬৯৭ জন ডেন্টিস্ট (প্রায় ৯৫.৭০%) মার্কারী ডেন্টাল অ্যামালগাম ব্যবহার করছে না।
গবেষণায় আরোও দেখা গিয়েছে যে, ৯৫.৭০% দন্ত চিকিৎসক ইতিমধ্যে বিকল্পগুলোর ব্যবহার শুরু করেছে। বেশিরভাগ দন্ত চিকিৎসক মার্কারি অ্যামালগাম এর স্বাস্থ্যের উপর ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কের জানেন এবং সেই সাথে জনগণও (৮৭.১%) অ্যামালগামের রঙ এবং ক্ষতিকারক প্রভাব সম্পর্কে বর্তমানে অবগত। বিকল্পগুলোর মধ্যে জিআইসি ও কম্পোজিট জনপ্রিয় এবং এগুলো কম খরচে করা যায়। অন্যান্য বিকল্পগুলো মধ্যে মিরাকল মিক্স, শোফু, ফুজি ৯ উল্লেখযোগ্য।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার সর্বদা জনগণের উন্নতির জন্য কাজ করছে এবং আমরা জনগণের স্বাস্থ্যের পাশাপাশি পরিবেশ সংরক্ষণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
তিনি আরোও বলেন, ‘এসডো এবং বিডিএস -এর গবেষণার ফলাফল থেকে দেখা গিয়েছে যে, বিকল্পগুলো আমাদের দেশে সহজেই পাওয়া যায় এবং দন্ত চিকিৎসায় এই বিকল্পগুলো ব্যবহার হচ্ছে। এই বিকল্পগুলো সকলের কাছে সহজলভ্য এবং সাশ্রয়ী হওয়া দরকার যাতে আমরা আমাদের দেশ থেকে এই বিপজ্জনক বিষাক্ত পারদ ব্যবহার বন্ধ করতে পারি।’
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কেয়া খান বলেন, মিনামাতা কনভেনশন একটি বৈশ্বিক চুক্তি, যার মাধ্যমে দাঁতের চিকিৎসায় পারদের ব্যবহার বন্ধ করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ফলস্বরূপ, এই বিষয়ে আমাদের অবশ্যই আরও বেশি মনোযোগী হতে হবে৷
সভাপতির বক্তব্যে সরকারের সাবেক সচিব এবং এসডোর সভাপতি, সৈয়দ মার্গুব মোর্শেদ বলেন, বাংলাদেশ পারদমুক্ত দন্ত চিকিৎসাকে বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে এবং এই লক্ষ্যে সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়ন করতে প্রয়োজন একটি নির্দিষ্ট আইনের। তিনি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহারকে জনস্বাস্থ্যকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিষয়টির দিকে নজর দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।
অনুষ্ঠানের সম্মানিত অতিথি বাংলাদেশ ডেন্টাল সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মো. আবুল কাসেম বলেন, ‘‘পারদ শুধু আমাদের স্বাস্থ্যের জন্যই নয়, পরিবেশের জন্যও ক্ষতিকর। ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি দেশে মার্কারি অ্যামালগাম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আমাদের ভবিষ্যত রক্ষার জন্য দাঁতের চিকিৎসায় পারদকে অবিলম্বে নিষিদ্ধ করতে হবে।’’
ওয়ার্ল্ড অ্যালায়েন্স ফর মার্কারি ফ্রি ডেন্টিস্ট্রির অ্যাটর্নি চার্লস জি ব্রাউন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে অতিথি বক্তা হিসাবে সভায় যোগদান করেন। অন্যান্য অতিথি বক্তাদের মধ্যে ওয়ার্ল্ড অ্যালায়েন্স ফর মার্কারি ফ্রি ডেন্টিস্ট্রির, ভাইস প্রেসিডেন্ট-আফ্রিকা ডমিনিক ব্যালি এবং ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল মেডিসিনের ডিরেক্টর ফ্লোরিয়ান শুলজ উভয়ই মার্কারি অ্যামালগামকে ফেজ আউট করার উপর নিজেদের ধারণা প্রকাশ করে পর্যায়ক্রমে আফ্রিকান ও ইউরোপিয়ান সংশোধনীর উপর জোর দেন।