প্রায় ১ বছর পর অনুষ্ঠিত হওয়া ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে দলের অভ্যন্তরীণ কলহ-বিবাদ মীমাংসার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে কার্যনির্বাহী সংসদের ৮১ সদস্যের মধ্যে ৫৩ জন অংশগ্রহণ করেন। গতবছর ৩ অক্টোবর অনুষ্ঠিত শেষ দলীয় সর্বোচ্চ ফোরামের এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ৩২ জন।
এ বৈঠকে আরেকটি জাতীয় নির্বাচনের আগে দলের রাজনৈতিক রোডম্যাপ কী হবে তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। দলীয় শৃঙ্খলা মেনে চলতে উপস্থিত নেতৃবৃন্দের প্রতি দলীয় সভাপতির যেমন ছিল কঠোর নির্দেশনা, ঠিক তেমনই সদ্য অনুষ্ঠিত হয়ে যাওয়া পাবনা পৌরসভা নির্বাচনে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ থাকা ২০ জেলা ও পৌর আওয়ামী লীগের নেতাদের ক্ষমার নির্দেশনাও আসে।
সম্প্রতি আলোচনায় আসা নোয়াখালীর রাজনীতি নিয়ে বৈঠকে আলোচনা না হলেও নোয়াখালীর বিবাদ মীমাংসায় একটি কাঠামো দাঁড় করানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
৫ ঘণ্টার দীর্ঘ বৈঠকে কী আলোচনা হলো জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানান: সকাল সাড়ে ১০ থেকে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত লম্বা বৈঠক হয়েছে। এতে মূল ফোকাসটা ছিল সাংগঠনিক বিষয়ের ওপর এবং পরবর্তী নির্বাচনের প্রস্তুতির বিষয়ে। নির্বাচনের আগে আমাদের অর্থনৈতিক নীতিমালা প্রণয়ন এবং বিভিন্ন সাংগঠনিক ডিপার্টমেন্টগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করে কাজ করা।
করোনা পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের ইাশতেহারে শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য বিশেষ গুরুত্ব পাবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সাংগঠনিক এ নেতা।
বৈঠকে ৮ বিভাগের দায়িত্ব প্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকদের কাছ থেকে তাদের দায়িত্বরত এলাকার সাংগঠনিক অবস্থা সম্পর্কে জানেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। চট্টগ্রামের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাইদ আল মাহমুদ স্বপন উপস্থিত না থাকায় তার জায়গায় সাংগঠনিক অবস্থা বৈঠকে তুলে ধরেন যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ।
এসময় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা নিজ নিজ বক্তব্য উপস্থাপনের পাশাপাশি ইউনিয়ন এমনকি ওয়ার্ড পর্যায়ের সাংগঠনিক রিপোর্ট লিখিত আকারে দলীয় সভানেত্রীর কাছে জমা দেন। এসময় জরুরি ভিত্তিতে সমাধান প্রয়োজন, এমন বিষয়গুলোতে নির্দেশনা দেন শেখ হাসিনা।
এসময় দলের অভ্যন্তরীণ কলহ বিবাদ মীমাংসার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন: কিছু কিছু ছোটখাটো কলহ-বিবাদ রয়েছে, সেগুলো মীমাংসা করার নির্দেশনা দিয়েছেন নেত্রী। পাবনায় পৌরসভা নির্বাচনের মধ্যে সদর এবং পৌর এলাকার অনেকেই বিদ্রোহ করেছিল। নেত্রী বরাবর তারা ক্ষমা চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন, নেত্রী তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন।
তবে যারা দলের ডিসিপ্লিনের বিরুদ্ধে কাজ করছে তাদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিকভাবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশের পাশাপাশি কোনো রকম ছাড় না দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে দলীয় সভাপতির পক্ষ থেকে, জানান ওবায়দুল কাদের।
নোয়াখালী প্রসঙ্গে তিনি বলেন: এখানে নোয়াখালীর ব্যাপারে কোন কথা হয়নি। সাংগঠনিক সম্পাদক স্বপন সমাধানের জন্য সকলের সঙ্গে কথা বলে একটা কাঠামো দাঁড় করিয়েছেন। সে দেশের বাইরে, ফিরে আসলে এটা নিয়ে কাজ করবেন। আমাদের নেত্রী এ বিষয়ে অবহিত আছেন, চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের পর এটা প্রকাশ করা হবে।
নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে সরকার ও দলের বিরুদ্ধে অপপ্রচার বাড়ছে, এসকল অপপ্রচার রুখতে ও উপযুক্ত জবাব দিতে নির্দেশনা দেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। এছাড়া করোনা পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা যেভাবে সাধারণ মানুষের পশে দাঁড়িয়েছেন তার প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৈঠকে উপস্থিত নেতাদের মঙ্গলবার করোনা পরীক্ষা করা হয়। সেখানে নেগেটিভ হবার পর ৫০ জন নেতাকে আমন্ত্রণ জানানো হয় বৈঠকে পরবর্তীতে দলীয় সভাপতির অনুমতিক্রমে আরও ৩ জন যোগ দেন এ বৈঠকে। যার মধ্যে ১২ জন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, ১১ জন যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক, ১১ জন কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য এবং বাকীরা দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য উপস্থিত ছিলেন।