গ্যালারি ভরা দর্শকের সামনে বাংলাদেশ ম্যাচ খেলল ২ বছর পর। সমর্থকদের নিরাশ করেননি টাইগাররা। আফগানিস্তানকে ৬১ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়ে টি-টুয়েন্টি সিরিজ শুরু করল মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দল। দ্বিতীয় ও শেষ ম্যাচ শনিবার।
বাংলাদেশের দেয়া ১৫৬ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে আফগানিস্তান গুটিয়ে যায় একশর আগেই। বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদ ১০ রানে ৪ উইকেট শিকার করে সফরকারীদের বেধে ফেলেন ৯৪ রানে, রয়ে যায় ১৪ বল।
নাজিবুল্লাহ জাদরান ২৭, আজমতউল্লাহ ওমরজাই ২০, অধিনায়ক মোহাম্মদ নবী করেন ১৬ রান। বাকি কেউ ছুঁতে পারেননি দুই অঙ্ক।
নাসুমের চারের দিনে শরিফুল ইসলাম তিনটি, সাকিব আল হাসান দুটি ও মোস্তাফিজুর রহমান নেন একটি উইকেট।
ওয়ানডে সিরিজের পর টি-টুয়েন্টিতেও দাপট দেখান লিটন দাস। তিন নম্বরে নেমে ৪৪ বলে খেলেন ৬০ রানের ঝলমলে ইনিংস। তাতে বাংলাদেশ পেয়ে যায় চ্যালেঞ্জিং পুঁজি।
২০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ তোলে ১৫৫ রান। মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাটিং বেছে নেন টাইগার অধিনায়ক। আফগানদের বিপক্ষে প্রথমবার পাড়ি দেয়া গেল দেড়শর পথ। দলটির বিপক্ষে আগের সাত ম্যাচে টাইগারদের সর্বোচ্চ সংগ্রহ ছিল ১৪৪ রান।
শুরুটা হতাশার হলেও লিটনের ব্যাট পথ দেখায় বাংলাদেশকে। আফিফ হোসেনকে নিয়ে পঞ্চম উইকেট জুটিতে ৪৬ রান যোগ করেন তিনি।
বিপিএল মাতিয়ে টি-টুয়েন্টি দলে সুযোগ পাওয়া মুনিম শাহরিয়ারের অভিষেক হয়েছে সিরিজের প্রথম ম্যাচেই। প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচে খারাপ করেননি ডানহাতি ওপেনার।
বাংলাদেশ দলের নিয়মিত ওপেনার নাঈম শেখ ৫ বলে মাত্র ২ রান করে আউট হলেও মুনিম পেরিয়েছেন দুই অঙ্ক। তিন চারে ১৮ বলে ১৭ রান করে রশিদ খানের বলে হন এলবিডব্লিউ। কাভার দিয়ে তার প্রথম চারটি ছিল দেখার মতো।
দুই ওপেনারের বিদায়ের পর সাকিব আল হাসান দলীয় পঞ্চাশের আগেই ফেরেন সাজঘরে। চার নম্বরে নামা বাঁহাতি ব্যাটার ৬ বলে করে যান ৫ রান। অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ দুই অঙ্ক ছুঁয়ে আউট হন। ৭ বলে করেন ১০ রান।
৮০ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর লিটনের সঙ্গে জুটি জমান আফিফ। লিটন ৬০ রান করে ফিরলে ভাঙে জুটি। তার ইনিংসে ছিল চারটি চার ও দুটি ছয়ের মার।
লিটনের বিদায়ের পর ফিরে যান আফিফও। বাঁহাতি ২৪ বলে ২৫ রান করেন দুটি চারের সাহায্যে। এই ম্যাচে আরেক অভিষিক্ত ইয়াসির আলি চৌধুরী ৭ বলে ৮ রান করে রান আউটের শিকার হন।
মি. এক্সট্রা থেকে আসে ১৬ রান। ফজলহক ফারুকি ও আজমতউল্লাহ ওমরজাই দুটি করে উইকেট নিয়েছেন। কাইস আহমেদ ও রশিদ খান নেন একটি করে উইকেট।
করোনা মহামারির কারণে গ্যালারি ভরা দর্শকের সামনে দুই বছরেরও বেশি সময় খেলতে পারেনি বাংলাদেশ। অবশেষে আফগানিস্তানের বিপক্ষে টি-টুয়েন্টি সিরিজে টাইগারভক্তদের অপেক্ষার অবসান হল। প্রথম ম্যাচেই কানায় কানায় পূর্ণ ছিল শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামের গ্যালারি। কাঁচঘেরা প্রেসবক্স থেকেও থমকে থমকে কানে বেজেছে উত্তাল গর্জন।
করোনার ভয়াবহতায় একটা বছর খেলাই ছিল না মাঠে। লকডাউনের সময়ে ক্রিকেটার থেকে সাধারণ মানুষ; সবাই ছিলেন ঘরবন্দি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে সময় লেগে গেল অনেক। গ্যালারি ভরা দর্শকের চেনা ছবিটা দেখা গেল তাই দীর্ঘ সময় পর। করোনা পরিস্থিতির সঙ্গে বিসিবিকে নিতে হয়েছে পদক্ষেপ।
২০২০ সালের মার্চে করোনার প্রাদুর্ভাবের শুরুতে মিরপুরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টি-টুয়েন্টি সিরিজে টিকেট বিক্রি সীমিত করেছিল বিসিবি। তার আগ পর্যন্ত সবই ছিল স্বাভাবিক। করোনা এখনো পুরোপুরি বিদায় নেয়নি। তবে মহামারির শক্তি কমে এসেছে। সরকার থেকে বিধিনিষেধ উঠে যাওয়ায় খেলার মাঠের ‘প্রাণ’ দর্শক ফেরানো গেল। ম্যাচের উত্তেজনা মাঠে বসে উপভোগ করেছেন প্রায় ২৫ হাজার দর্শক।
সাদা বলের ক্রিকেটে রঙিন পোশাকে বাংলাদেশ মাঠে নামলেই দর্শকে ভরে উঠত গ্যালারি। ম্যাচজুড়েই চলত গর্জন। ভুলতে বসা সেই দৃশ্যই আবার দেখা গেল হোম অব ক্রিকেটে।