জেএমবির হামলায় দর্জি নিখিল চন্দ্র জোয়ারদার (৫০) নিহত হওয়ার এক বছর পর অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে পুলিশ। মঙ্গলবার দুপুরে টাঙ্গাইলের গোপালপুর জুডিশিয়াল আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়।
অভিযোগপত্রে জেএমবির সক্রিয় সদস্য মোসলেম উদ্দিন ওরফে সুমনকে প্রধান আসামী করা হয়েছে। মোসলেমের বাড়ী টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার সাখারিয়া গ্রামে। তার পিতার নাম গণি মিয়া। অন্য দুই আসামী হলো- সিরাজগঞ্জের বেলকুচি গ্রামের আব্দুর নুরের ছেলে জেএমবি সদস্য মতিয়ার রহমান ওরফে হৃদয়, বাড়ির মালিক টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার রাজাবাড়ী গ্রামের সেকান্দার আলীর ছেলে নাজমুল হাসান।
টাঙ্গাইল গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অশোক কুমার সিংহ জানান, সুষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমে চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডে এদের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। এ মামলায় গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর গোয়েন্দা পুলিশ জেএমবি সদস্য মোসলেম উদ্দিন ওরফে সুমনকে গ্রেফতার করে।
“পরদিন (৩ সেপ্টেম্বর) সে আদালতে হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দেয়। গ্রেফতার হওয়া জেএমবির সদস্য মোসলেম উদ্দিন ওরফে সুমন, পলাতক জেএমবি সদস্য মতিয়ার রহমান ওরফে হৃদয় এবং তাদের বাড়ি ভাড়া দেয়ায় বাড়ির মালিক গ্রেফতার হওয়া টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গার রাজাবাড়ী গ্রামের নাজমুল হাসানের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়া হয়েছে। এ হত্যাকাণ্ডে অন্য এক জেএমবি সদস্য বাইক হাসান নামে একজনের জড়িত থাকার খবর আমরা জানতে পারি। কিন্তু সে রাজশাহীতে বন্দুকযুদ্ধে মারা যাওয়ার কারণে চার্জশিটে তাদের নাম দেয়া হয়নি।”
এই হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই নিখিলের স্ত্রীসহ তার দুই ভাইয়ের সন্তানরা ভয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে গেছেন। গত বছরের ৩০ এপ্রিল টাঙ্গাইলের গোপালপুর পৌর এলাকার ডুবাইল বাজারে মোটরসাইকেলে আসা তিন তরুণ নিখিলকে দোকান থেকে ডেকে নিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। ঘটনার দিনই নিখিলের স্ত্রী আরতি জোয়ারদার অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামী করে গোপালপুর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
ওই হত্যার দায় স্বীকার করে সেসময় আইএস-এর নামে একটি বিবৃতিও দেয়া হয়। হত্যার পর নিখিলের বাড়িতে পুলিশ পাহারা ব্যবস্থা করা হলেও মাসখানেক পর তা তুলে নেওয়া হয়। এরপর নিখিলের স্ত্রী আরতি বাড়ি ছেড়ে চলে যান। তিনি এখন ভয়ে দুই মেয়ের ও বাবার বাড়িসহ বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে থাকছেন।
তার মতো নিখিলের ভাই মৃত অখিল জোয়ারদার এবং অপর ভাই মৃত ভোলানাথ জোয়ারদারের স্ত্রী-সন্তানরাও আতঙ্কে বাড়ি ছেড়েছেন। এখন বাড়িতে শুধু বাস করেন নিখিলের মানসিক প্রতিবন্ধী ভাই গোপাল জোয়ারদার।
নিখিলের ভাই অখিল জোয়ারদারের ছেলে টিপু জোয়ারদার জানান, নিখিল ছিল তাদের পরিবারের মাথা। তাকে এভাবে হত্যা করার পর সবার মধ্যেই আতঙ্ক বিরাজ করছে। তাই বাড়ি থাকতে সাহস পায় না তারা।